স্বামী-স্ত্রীর সুখের সংসার। তারপরও তাঁদের পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, কখনো ভক্তদের কাছে থেকে শুনতে হয় অসম্মানজনক কথা। এই নিয়ে এত দিন চুপই ছিলেন আর্টসেলের প্রতিষ্ঠাতা ও অন্যতম সদস্য জর্জ লিংকন ও তাঁর স্ত্রী মিমোসা লিমু হাওলাদার। আর চুপ থাকতে পারলেন না, বডিশেমিংয়ের প্রতিবাদে মুখ খুললেন।
লিংকন তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘দেখলাম আপনারা শোধরানোর পাত্র নন, তাই আর চুপ করে থাকলাম না।’ বুঝতে কষ্ট হয় না, অপমানের কোন পর্যায়ে গিয়ে এমন ভাষায় কথা বলতে বাধ্য হলেন এই গায়ক। ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘আমার স্ত্রী মিমোসা লিমু হাওলাদারকে বিয়ে করেছি ৪ বছরের একটু বেশি সময় হলো। একদম শুরু থেকেই আপনাদের মধ্যে অনেকেই আমার স্ত্রীকে বিভিন্নভাবে অপমান–অপদস্থ করে আসছেন। তার একটাই অপরাধ, সে আমার সহধর্মিণী হিসেবে সব সময়ই আমাকে সাপোর্ট করেছে, আমাকে অপমানিত হতে দেখলে চুপ করে থাকেনি। আমি যে আপনাদের অসম্মানজনক কমেন্ট দেখি না, এমনটা নয়। আমি সবই দেখি কিন্তু চুপ করে ছিলাম, আপনারা হয়তো একদিন শুধরে যাবেন, নিজের ভুলটা বুঝতে পারবেন ভেবে।’
লিংকন আরও লিখেছেন, ‘আমার স্ত্রীকে আমি ভালোবাসি আর সম্মান করি। আমার বিপদে–আপদে সব সময়ই সে পাশে থাকে। আমি যখন অসুস্থ থাকি, তখন সে আমার সেবা করে। আমার কিসে ভালো আর কিসে খারাপ, আমার স্ত্রী দেখে। আর আপনারা তাকে যখন অসম্মানজনক কথা বলেন, আর তারপরও বলেন আমাকে ভালোবাসেন আর সম্মান করেন, সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’ এই শ্রেণির লোকেদের হুঁশিয়ার করে তিনি লিখেছেন, ‘যাঁরা আমার স্ত্রীকে অসম্মানজনক কথা বলবেন, এখন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধে আমি লিগ্যাল অ্যাকশন নেব। আর দয়া করে মানুষকে অসম্মান করার মাঝে যাঁরা সুখ খুঁজে পান, তাঁরা আমাকে বা আমার স্ত্রীকে কাউকেই ফলো করবেন না। কারণ, দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো।’
বিয়ের পর থেকে স্বামীকে নিয়ে নানা কথা শুনতে শুনতে ক্লান্ত মিমোসা লিমু হাওলাদার। কিন্তু সে পরিস্থিতি দিন দিন বাড়তে থাকায় বাধ্য হয়েই তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আপনারা অনেকেই যখন আমাকে বলেন, ভাবি, লিংকন ভাইকে কম খেতে বলেন, কন্ট্রোল করতে বলেন, ভোটকা, ডায়েট করতে বলেন, পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল হতে বলেন, এসব আসলে আপনাদের লিংকনের প্রতি কেয়ার না, এগুলো একপ্রকার বডিশেমিং, বডিশেমিংয়ের মতো জঘন্য কাজ আপনারা করেন, যেটা আমি নিজেও করতাম, যখন বুঝতাম না; এখন লিংকনের সঙ্গে মেশার পর বুঝি একটা মানুষ ইচ্ছা করে মোটা বা চিকন, ফরসা বা কালো, বেঁটে বা লম্বা হয় না, আমরা কেন তাদের নিয়ে হাসাহাসি করব?’
লিমু আরও লেখেন বিভিন্ন বাধাবিপত্তিকে অতিক্রম করে তাঁরা বিয়ে করেছেন। প্রথম দিকে তিনি এই বিয়েতে রাজি ছিলেন না। লিংকনের ১২৩ কেজি ওজন নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে হাসাহাসি করতেন। কিন্তু কিছুদিন পরেই বুঝতে পারেন লিংকন তাঁর প্রতি অনেক যত্ন নেন। ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘কোনোভাবেই রাজি ছিলাম না, কিন্তু মানুষটা আমার খুব কেয়ার করত, আমি যে হোস্টেলে থাকতাম, সেখানে খাবার একটু ভালো ছিল না, সে বরাবরই চাইত, আমার জন্য রান্না করে পাঠাতে, আমি না করতাম। আমার এত বেশি কেয়ার করত, যা আমার বাবা-মা ছাড়া কারও কাছে কোনো দিনই পাইনি আমি। বেশির ভাগ জায়গায় আমি সবার কাছে অপ্রিয়, আত্মীয়স্বজনের কাছে ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো আমি, এটা বরাবরই বলি এবং সব বুঝেও যথাসাধ্য চেষ্টা করি কেউ সাহায্য চাওয়ামাত্র সাহায্য করতে, কিন্তু তবু কারও প্রিয় হতে পারিনি, যতটা কম সময়ে প্রিয় হয়েছি লিংকনের কাছে।’
লিংকনের এই মোটা হওয়ার কারণে তিনি বাচ্চু ভাইয়ের মতো অকালে মারা যেতে পারেন। এই ধরনের কথাও তাঁকে শুনতে হয়েছে। তিনি আরও লিখেছেন, ‘আপনারাই বলেন লিংকন আপনাদের লিজেন্ড, আবার নিজেরাই ওর মোটা হওয়া নিয়ে হাসাহাসি করেন, একেকজন তো উপদেশ দেন এমনভাবে যেন মোটা হওয়াটা ইচ্ছাকৃত। শুধু লিংকন না, আমার এই পোস্টের পর আশা করি, কেউ আর মোটা, চিকন, বেঁটে, লম্বা, ফরসা, কালো মানুষগুলোকে হাসি বা উপদেশ দেওয়ার মাধ্যমে ছোট করবেন না। কারণ, তারা নিজেরাই জানে, তাদের কী করা উচিত, সবাই এক সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট, তাই আমরা সবাইকে সম্মান করতে শিখি প্লিজ। আর প্রতিটা মানুষই কারও না কারও ভালোবাসার মানুষ, আর ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে কেউ যখন হাসাহাসি করে, তখন সেটা ভালো লাগে না।’ সব শেষে তিনি লিখেছেন, ‘মোটা চিকন না দেখে ভালোবাসার দৃষ্টান্ত দেখুন, যাকে ভালোবাসবেন, প্রাণখুলে ভালোবাসুন, কোনো অবস্থায় যেন আপনার ভালোবাসার মানুষকে কেউ একটুখানি খোঁচা দিয়ে বা অপমান করে কথা বলতে না পারে।’