লতাজিকে দেখে হারমোনিয়াম ফেলে দৌড়ে পালাই: সাবিনা ইয়াসমীন

বাংলা গানের জীবন্ত কিংবদন্তি শিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন। ১৯৫৪ সালে আজকের দিনে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৬৭ সালে জহির রায়হানের ‘আগুন নিয়ে খেলা’ ছবিতে আলতাফ মাহমুদের সংগীত পরিচালনায় মাত্র ১৩ বছর বয়সে প্রথম প্লেব্যাক করেন সাবিনা ইয়াসমীন। আর পেছনে তাকাতে হয়নি। একজীবনে তিনি মোট কত গান গেয়েছেন, সেই হিসাবটাও নেই তাঁর কাছে। তাঁর গাওয়া গানের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। আজ ৪ সেপ্টেম্বর গুণী এই শিল্পীর জন্মদিন। চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকের জন্য ১৩ বার বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। জন্মদিনে রইলো তাঁর জীবনে একটি স্মরণীয় দিনের গল্প।

লতা মঙ্গেশকর ও সাবিনা ইয়াসমীন

উপমহাদেশীয় সংগীতের কিংবদন্তি লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে বাংলাদেশের গানের পাখি সাবিনা ইয়াসমীনেরও দেখা হয়েছিল। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে অংশ নিতে মুম্বাইয়ে গিয়েছিলেন সাবিনা ইয়াসমীন। সেই উৎসবের ফাঁকে একটি পার্টিতে লতা মঙ্গেশকরের সামনে গাওয়ার সুযোগ হয়েছিল সাবিনা ইয়াসমীনের, যা তাঁর ‘জীবনের বড় পাওয়া’ হিসেবে মনে করছেন তিনি।

সাবিনা জানান, বাংলাদেশ ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল উপলক্ষে দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই ও কলকাতায় যায় বাংলাদেশের একটি দল। সেই দলে ছিলেন ববিতা, রাজ্জাক, রোজী সামাদ, কাজী জহিরও। ৪৩ বছর আগের সেই স্মৃতি আজ মেলে ধরলেন প্রথম আলোর কাছে।

লতা মঙ্গেশকর

সাবিনা ইয়াসমীন বলেন, ‘ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ফাঁকে মুম্বাইয়ের একটা অনুষ্ঠানে গাইছিলাম। কিছুই ছিল না, শুধু হারমোনিয়াম নিয়ে গাইছিলাম। শচীন দেব বর্মণ বলেছিলেন, “মা, তুমি বাংলাদেশের একটা গান শোনাও।” বললাম, কী রকম গান। বললেন, “মাটির গান, পল্লিগীতি শোনাও।”

তখন আমি “নাইয়ারে নায়ের বাদাম তুইলা” গেয়েছিলাম। কোনো মিউজিশিয়ান ছিল না, হারমোনিয়ামে গেয়েছিলাম। মাথা নিচু করে তিনি শুনছিলেন। মাথা তুলতেই দেখলাম, তাঁর দুই চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক আশীর্বাদ করলেন। আরেকটা গান গাইতে শুরু করেছি, দেখছি যে করিডরের ওদিক দিয়ে লতাজি ঢুকছেন! লতাজিকে দেখে হারমোনিয়াম ফেলে দৌড়ে পালাই। আমাকে তো আর কেউ খুঁজে পায় না। ভয়ের চোটে আমার জীবন শেষ, ওরে বাপ রে বাপ! ওনার সামনে গান গাইব আমি! তখন তো বয়স আরও কম। উপায় তো নেই। গাইতেই হলো।’

লতা মঙ্গেশকরের সামনে কোন গান গেয়েছেন, জানতে চাইলে সাবিনা ইয়াসমীন বললেন, ‘লতাজির সামনে প্রথমে গাইলাম “জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো”।

সাবিনা ইয়াসমীন

এরপর আর কিছু গাইতে হয়নি। এই গান শেষ হওয়ার পর উনি এমন প্রশংসা করছিলেন, আমি লজ্জাই পাচ্ছিলাম। আমার গলার প্রশংসা, আমার গায়কির প্রশংসা। ওখানে সব বড় প্রযোজক ছিলেন। অমিতাভ বচ্চন, রাজ কাপুরও ছিলেন। রাজ কাপুর তো আমাকে “আওয়াজও কো দেবী” নামই দিয়ে দিলেন। বাবা রে বাবা! এখন তো সবই স্মৃতি।’

অনুষ্ঠান শেষে এরপর শচীন দেব বর্মণ আমাকে আর লতাজিকে দুই পাশে দাঁড় করিয়ে জড়িয়ে তিনটি ছবি তুললেন। শুধু দুজনের একটা ছবি আমার কাছে আছে, বাকি দুটি ছবি আমি আজও পাইনি।
সাবিনা ইয়াসমীন

সাবিনা ইয়াসমীন বললেন, ‘অনুষ্ঠান শেষে এরপর শচীন দেব বর্মণ আমাকে আর লতাজিকে দুই পাশে দাঁড় করিয়ে জড়িয়ে তিনটি ছবি তুললেন। শুধু দুজনের একটা ছবি আমার কাছে আছে, বাকি দুটি ছবি আমি আজও পাইনি। ছবি তোলার ফাঁকে অনেকক্ষণ কথাবার্তা হলো। তিনি জানালেন, বাংলা গান গাইতে খুব ভালোবাসেন। ভাষাটাকে নাকি তাঁর খুব মিষ্টি লাগে।’
সাবিনা ইয়াসমীন আরও বললেন, ‘লতাজির প্রস্থান অপূরণীয় ক্ষতি বললেও কম হবে। কী বলে যে তাঁর চলে যাওয়াটা ব্যাখ্যা করব, তা আমার মাথায় ধরছে না।’