তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে সায়েম। পড়া বন্ধ হয়ে গেলেও, শোনা থেমে থাকেনি তার। মুঠোফোনে গান শুনে শুনে নিজেই গাইতে শুরু করে। দুই বছর আগে তাকে খুঁজে বের করেন শিল্পী ইমরান। এরপর বদলে যায় সায়েমের জীবনের গল্প।
রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে শুরু হওয়া আয়ুশ-নকশা বিয়ে উৎসবের মঞ্চে গান শোনায় সায়েম। প্রথমবারের মতো অনেক মানুষের সামনে কোনো উন্মুক্ত মঞ্চে গান করল সে। এ সময় ইউকেলেলে বাজিয়ে গানে সংগত করেন ইমরান। সায়েম গেয়ে শোনায় ‘বড় বিশ্বাস করে জায়গা দিলাম রে’, ‘একদিন আইবা তুমি আইবা রে’, ‘আমি কুলহারা কলঙ্কিনী’, ‘পারি না আর পারি না’ গানগুলো। এত দিন নিজের গ্রামের চায়ের দোকান ও বাজারে গাইলেও এখন উন্মুক্ত জায়গায় অনেক মানুষের সামনে গান করার সুযোগ পেয়ে খুব খুশি সায়েম।
ময়মনসিংহের ভালুকার কাতলামারিতে সায়েমের বাড়ি। চোখে অস্ত্রোপচারের পর এখন সামান্য দেখতে পায় সে। এক বন্ধুর কাছ থেকে প্রথম সায়েমের ব্যাপারে জানতে পারেন ইমরান। তিনি বলেন, ‘একটি টং-দোকানে কলসি বাজিয়ে গাইছিল সে। সেটা ভিডিও করে আমাকে পাঠায় ফেসবুক বন্ধু হাবিব। তারপর ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমি বন্ধুদের নিয়ে সায়েমদের বাড়িতে যাই এবং একটি লাইভের আয়োজন করি। ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়। বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে দরিদ্র সায়েমদের বাড়ির ছনের চালাও মেরামতের ব্যবস্থা নিয়েছিলাম আমরা।’
এটাই প্রথম নয়। আগেও ‘মধু হই হই’ গানের মাধ্যমে পরিচিতি পাওয়া শিশু জাহিদকে সামনে তুলে এনেছিলেন ইমরান। পরে আনেন চাঁদ নামের আরেক শিশুকে। ইমরান বলেন, ‘জাহিদ, চাঁদ, সায়েমের মতো মাটির শিল্পীদের গলায় যে দরদ, তা অনেক প্রশিক্ষিত শিল্পীর গলায়ও শোনা যায় না। চাঁদ এখন একটি প্রতিষ্ঠিত দলের শিল্পী। তারা প্রতিষ্ঠিত হতে পারলেই আমার আনন্দ। সে জন্যই আমি এ কাজগুলো করি।’
আয়ুশ-নকশা বিয়ে উৎসবে গতকাল ময়মনসিংহের বিয়ের গীত পরিবেশন করেন নেত্রকোনার মিলন বয়াতি ও তাঁর দল। আজ রংপুরের বিয়ের গীত পরিবেশন করে আরশিনগর ও বাদশা আলমের দল। লোকগান পরিবেশন করে সায়েম। এ ছাড়াও ছিল সমীর কাওয়ালের কাওয়ালি।