তিন দশক আগে এক বুক স্বপ্ন নিয়ে জন্মভূমি চট্টগ্রাম ছেড়েছিলেন। অভাবনীয় মেধা ও প্রতিভা সঙ্গে নিয়ে রাজধানী শহরে এসেছিলেন আলো ছড়াতে। গিটারের সুর তুলে, গান গেয়ে আইয়ুব বাচ্চু কাছে টেনেছেন দেশ–বিদেশের অগণিত শ্রোতা, ভক্তদের। শনিবার তিনি শেষবারের মতো ফিরলেন জন্মভূমিতে, কাঠের কফিনে। চৈতন্য গলি কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে আইয়ুব বাচ্চুর শেষ ঠিকানা হলো।
দুপুর থেকে হাজার হাজার মানুষের শোক মিছিলের গন্তব্যে পরিণত হয় নগরীর জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ মাঠ। বেলা পৌনে তিনটায় আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে পৌঁছে। ধীর পায়ে অ্যাম্বুলেন্সের দিকে এগিয়ে এলেন বাবা মোহাম্মদ ইসহাক। ছেলের কপালে হাত ছুঁয়ে আদর করলেন, দোয়া পড়লেন। চোখে পানি। সেই পানি ছড়িয়ে পড়ল শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের চোখে চোখে।
আসরের নামাজের পর মসজিদ প্রাঙ্গণে আইয়ুব বাচ্চুর জানাজায় অগণিত মানুষের ঢল নামে। জমিয়তুল ফালাহ থেকে ভক্তদের শোক মিছিল গিয়ে শেষ হয় বাইশ মহল্লার কবরস্থানে। সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটায় মায়ের পাশে শুইয়ে দেওয়া হয় আইয়ুব বাচ্চুকে।
এর আগে বেলা ১০টা ৫৫ মিনিটে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ নিয়ে আসা ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজটি অবতরণ করে। মরদেহের সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ফেরদৌস আখতার, ছেলেমেয়ে আর স্বজনেরা। বিমানবন্দরে আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ গ্রহণ করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। সেখান থেকেই দুপুর ১২টায় মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স গিয়ে পৌঁছে মাদারবাড়ির প্রিয় নানাবাড়িতে, যেখানে শৈশব কেটেছে তাঁর। সেখানে স্বজনদের পাশাপাশি স্থানীয় মানুষ শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শিশু-কিশোর থেকে মধ্যবয়সী-প্রবীণ—সবাই শেষবারের মতো বিদায় জানান শিল্পীকে। নানাবাড়ির উঠোনে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত রাখা হয় শিল্পীকে। ফুলে ফুলে ঢেকে যায় আইয়ুব বাচ্চুকে বহনকারী গাড়িটি। এরপর পৌনে তিনটায় তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় জমিয়তুল ফালাহ ময়দানে।
জানাজার আগে বক্তব্য দেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান, শিল্পী পার্থ বড়ুয়া, আইয়ুব বাচ্চুর মামা আবদুল হালিম, ছোট ভাই ইরফান ছট্টু, নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন, নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন প্রমুখ।
জানাজায় অংশ নেন নগর পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম প্রমুখ।
আইয়ুব বাচ্চুর নামে সড়ক
আইয়ুব বাচ্চুর নামে চট্টগ্রাম নগরের একটি সড়কের নামকরণ করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র নাছির উদ্দীন। এ ছাড়া মুসলিম হল ভেঙে নতুন করে যে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেখানে একটি অংশ আইয়ুব বাচ্চুর নামে করার উদ্যোগ নেবেন বলেও জানান তিনি। পাশাপাশি নগরের কোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এই শিল্পীর আবক্ষ মূর্তি স্থাপনের উদ্যোগও নেওয়ার কথা বলেন তিনি।
আইয়ুব বাচ্চু ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরের এনায়েত বাজারে জন্মগ্রহণ করেন। গত বৃহস্পতিবার সকালে মাত্র ৫৬ বছর বয়সে চলে গেলেন অনেক জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা, আলোচিত গিটারবাদক। একদিন যে শহর থেকে ‘হারানো বিকেলের গল্প’ দিয়ে শুরু হয়েছিল সুরের যাত্রা, কাল শনিবার হেমন্তের বিষণ্ন বিকেলে সেই শহরের মাটির বিছানায় চিরকালের জন্য ঘুমিয়ে পড়লেন বাংলা ব্যান্ডের বরপুত্র।
জনপ্রিয় ব্যান্ডশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু বেশির ভাগ সময়ই নিজের সুর ও সংগীতে গান করেছেন। তবে অন্যের সুর-সংগীতেও তিনি গান করেছেন। এ ছাড়া অনেক মিশ্র অ্যালবামে কাজ করেছেন। আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া গানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘চলো বদলে যাই’। এর কথা ও সুর তাঁরই। শ্রোতাপ্রিয় গানের তালিকায় আরও রয়েছে ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো’, ‘কেউ সুখী নয়’, ‘ফেরারি মনটা আমার’, ‘ঘুম ভাঙা শহরে’, ‘হকার’, ‘রুপালি গিটার’, ‘গতকাল রাতে’, ‘তারা ভরা রাতে’, ‘মেয়ে তুমি কি দুঃখ চেন’, ‘এখন অনেক রাত’ ইত্যাদি। রক ঘরানার গানের এই শিল্পী আধুনিক আর লোকগীতিতেও শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন। বেশ কিছু চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেছেন তিনি। চলচ্চিত্রে তাঁর গাওয়া প্রথম গান লুটতরাজ ছবির ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’। এ ছাড়া আম্মাজান ছবির শিরোনাম গানও দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যান্ড এলআরবির দলনেতা আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন একাধারে গায়ক, গিটারিস্ট, গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক। গিটারের জাদুকর হিসেবে আলাদা সুনাম ছিল তার। ভক্তদের কাছে তিনি ‘এবি’ নামেও পরিচিত। ১৯৭৮ সালে ফিলিংস ব্যান্ডের মাধ্যমে সংগীত জগতে তার পথচলা শুরু হয়। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সোলস ব্যান্ডে লিড গিটারিস্ট হিসেবে যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে এলআরবি ব্যান্ড গঠন করেন আইয়ুব বাচ্চু। অ্যালবাম ‘এলআরবি’ বাজারে আসে ১৯৯২ সালে এলআরবি প্রথমেই দুটি অ্যালবাম বের করে। বাচ্চুর নেতৃত্বে একে একে এলআরবির অন্য অ্যালবামগুলো যেমন ‘সুখ’, ‘তবুও’, ‘ঘুমন্ত শহরে’, ‘ফেরারি মন’, ‘আমাদের’, ‘বিস্ময়’, ‘মন চাইলে মন পাবে’, ‘অচেনা জীবন’, ‘মনে আছে নাকি নাই’, ‘স্পর্শ’, ‘যুদ্ধ’, ‘রাখে আল্লাহ মারে কে’ অডিও বাজারে দারুণ জনপ্রিয় হয়। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত ‘রক্তগোলাপ’ তার প্রথম প্রকাশিত একক অ্যালবাম। তার সাফল্যের শুরুটা হয় দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘ময়না’র মাধ্যমে। ১৯৯৫ সালে বাজারে আসে তার তৃতীয় একক অ্যালবাম ‘কষ্ট’। তার অন্য একক অ্যালবামগুলো হলো ‘সময়’, ‘একা’, ‘প্রেম তুমি কি’, ‘দুটি মন’, ‘কাফেলা’, ‘রিমঝিম বৃষ্টি’, ‘বলিনি কখনো’, ‘জীবনের গল্প’।
জনপ্রিয় ব্যান্ডশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু বেশির ভাগ সময়ই নিজের সুর ও সংগীতে গান করেছেন। তবে অন্যের সুর-সংগীতেও তিনি গান করেছেন। এ ছাড়া অনেক মিশ্র অ্যালবামে কাজ করেছেন। আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া গানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘চলো বদলে যাই’। এর কথা ও সুর তারই। শ্রোতাপ্রিয় গানের তালিকায় আরও রয়েছে ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো’, ‘কেউ সুখী নয়’, ‘ফেরারি মনটা আমার’, ‘ঘুম ভাঙা শহরে’, ‘হকার’, ‘রুপালি গিটার’, ‘গতকাল রাতে’, ‘তারা ভরা রাতে’, ‘মেয়ে তুমি কি দুঃখ চেন‘ ‘এখন অনেক রাত’ ইত্যাদি। রক ঘরানার গানের এই শিল্পী আধুনিক আর লোকগীতিতেও শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন। বেশ কিছু চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেছেন তিনি। চলচ্চিত্রে তার গাওয়া প্রথম গান ‘লুটতরাজ’ ছবির ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’। এ ছাড়া ‘আম্মাজান’ ছবির শিরোনাম গানও দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।