সত্যজিৎ রায় শিল্পী কিশোর কুমারকে চারুলতা ছবিতে একটি গান গাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন
সত্যজিৎ রায় শিল্পী কিশোর কুমারকে চারুলতা ছবিতে একটি গান গাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন

‘মানিক মামা’কে চিঠিতে যা লিখেছিলেন কিশোর কুমার

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পুরোনো চিঠি ঘুরতে দেখা গেছে কিছুদিন আগে। গায়ক, অভিনেতা কিশোর কুমারের লেখা চিঠিটি। লিখেছেন সত্যজিৎ রায়কে।
জানা গেছে, করোনাকালে সত্যজিতের বিশপ লেফ্রয় রোডের বাড়িতে সন্দীপ রায় পুরোনো কাগজপত্রের ভেতর থেকে খুঁজে পেয়েছিলেন এ চিঠি, তথা ‘অমূল্য রতন’টি। অমূল্য রতন এই জন্য যে চিঠিটির প্রেরক গায়ক কিশোর কুমার, প্রাপক সত্যজিৎ রায়। ১৯৬৩ সালের ৪ নভেম্বরে লেখা চিঠিতে কিশোর কুমার তাঁর ‘মানিক মামা’কে (সত্যজিৎকে ওই নামেই ডাকতেন কিশোর) জানিয়েছেন, ‘চারুলতা’ ছবির জন্য ‘ওগো বিদেশিনী’ গাইতে তিনি রাজি।

সত্যজিৎ রায় ও কিশোর কুমার

তবে তাঁর পক্ষে এই মুহূর্তে বোম্বে (আজকের মুম্বাই) থেকে কলকাতায় এসে গানের রেকর্ডিং করা সম্ভব নয়। সেই সময় সত্যজিৎ রায় ‘চারুলতা’ ছবির শুটিং করছিলেন।

জানা গেছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস ‘নষ্টনীড়’ অবলম্বনে তৈরি হওয়া সেই ছবির জন্য সত্যজিৎ রায় শিল্পী কিশোর কুমারকে একটি গান গাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু সে সময়ে কিশোর কুমার ছিলেন ব্যস্ততম শিল্পী। কেননা, তিনি একই সঙ্গে ছিলেন অভিনেতা ও কণ্ঠশিল্পী। আজ এই স্টুডিওতে গান রেকর্ডিং তো কাল অমুক স্পটে শুটিং।

‘চারুলতা’র পরে ‘ঘরে-বাইরে’ ছবিতেও কিশোর কুমার গান গেয়েছিলেন

দেখা যেত প্রতিদিনই ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে হচ্ছে তাঁকে। ব্যস্ত কিশোর কুমার তাই চিঠি লেখেন সত্যজিৎকে। চিঠিতে লেখেন, ‘আপনার পরিচালনায় আপনার ছবিতে গান করা আমার কাছে বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। আপনি আমাকে কলকাতায় আসতে বলেছেন, কিন্তু আমি আসতে পারছি না। অদূর ভবিষ্যতেও সময় বের করতে পারব না, কারণ এই মাসে (নভেম্বর ১৯৬৩) প্রায় প্রতিদিনই আমার শুটিং রয়েছে।’

কিশোর কুমার

কিশোর কুমার আরও লেখেন, ‘এ ছাড়াও আমার মা খুব অসুস্থ এবং তিনি প্রায় এক সপ্তাহ আগে হরিদ্বার থেকে ফিরে এসেছেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাঁকে একা রেখে দেওয়া ঠিক হবে না।’

কিশোর চিঠিতে সত্যজিৎ ও তাঁর স্ত্রী বিজয়া রায়কেও মুম্বাই যেতে অনুরোধ জানান। তিনি জানান, মুম্বাইতে গানটির রেকর্ডিং হোক। তিনি স্টুডিওর ব্যবস্থা করে দেবেন।

সত্যজিৎ রায়। ছবি: সংগৃহীত

১৯৫৯ সাল পর্যন্ত সত্যজিৎ রায় পরিবারের ঠিকানা ছিল দক্ষিণ কলকাতার ৩১ লেক অ্যাভিনিউয়ে। এরপর ৩ লেক টেম্পল রোডের বাড়িতে যান তাঁরা। সব শেষ ঠিকানা হয় ১/১ বিশপ লেফ্রয় রোডে। শহরের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে। বাড়ি বদলের সময় কখনোই কোনো জিনিস-কাগজপত্র ফেলে দেওয়া হয়নি। কারণ, সন্দীপ কখনোই চাননি, বাবার কোনো গুরুত্বপূর্ণ কিছুই হাতছাড়া হোক। গত বছর লকডাউনে অবসর পেয়ে সেগুলো খুঁটিয়ে খতিয়ে দেখার অবকাশ পেয়েছেন সন্দীপ। কাজেও লেগেছে।

চারুলতা ছবির একটি দৃশ্যে সৌমিত্র ও মাধবী

‘চারুলতা’র পরে ‘ঘরে-বাইরে’ ছবিতেও কিশোর কুমার গান গেয়েছিলেন। শোনা যায়, এর জন্য কোনো পারিশ্রমিক নেননি তিনি। আর কিশোরের গানে মুগ্ধ হয়ে ‘জিনিয়াস’ আখ্যা দিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। কিশোরের মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে সত্যজিৎ বলেছিলেন, ‘এমন কণ্ঠস্বর কারও ছিল না।’