ফুটবল খেলছেন সংগীতশিল্পী ও সাংসদ মমতাজ। শুধু তা–ই নয়, ঘুড়িও ওড়াচ্ছেন। হঠাৎ এ খবর শুনলে যে কেউ চমকে উঠতে পারেন। ঘটনা আসলেই সত্য। করোনার এই সময়ে কদিন হলো গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে এভাবেই সময় কাটাচ্ছেন দেশের জনপ্রিয় এই শিল্পী।
করোনার কারণে লম্বা সময় ধরে মহাখালী ডিওএইচএসের বাড়িতে ঘরবন্দী ছিলেন মমতাজ। একসময় তিনি হাঁপিয়ে উঠলেন। এভাবে থাকতে থাকতে অস্থির হয়ে উঠছিল তাঁর সন্তানেরাও। একপর্যায়ে সবাই আবদার করল নিরিবিলি কোথাও বেড়াতে যাওয়ার। শহর থেকে দূরে, নিরিবিলি পরিবেশে সময় কাটাতে তাই পরিবার নিয়ে মানিকগঞ্জে চলে যান তাঁরা। মমতাজ জানান, সবুজের কাছাকাছি থাকা, খোলা জায়গায় ঘুরে বেড়ানো ছাড়াও এলাকার মানুষদের কাছাকাছি থাকতে পারবেন বলেই এ সিদ্ধান্ত নেন এই সাংসদ।
গত বৃহস্পতিবার বাড়ির সবাইকে নিয়ে গ্রামে চলে যান মমতাজ। তিনি বলেন, ‘বদ্ধ জায়গায় যত সুযোগ-সুবিধাই থাকুক না কেন, একটা সময় অস্থিরতা আসবেই। বাসার সবাই অস্থির হয়ে গেছে। গ্রামে যেহেতু খোলামেলা জায়গা আছে, ভাবলাম, আমার বাচ্চারা এই খোলামেলা জায়গায় ভালোই থাকবে। তা না হলে মানসিকভাবে তারা আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।’ মমতাজ জানান, তাঁর সন্তানেরা গ্রামের বাড়িতে ভীষণ মজা করছে। সপ্তাহখানেক পার হয়ে গেলেও ঢাকায় ফেরা নিয়ে কেউ কিছুই বলছে না। তাদের ভালো লাগছে দেখে, তিনিও খুশি। ঢাকায় ফেরা নির্ভর করছে তাদের ওপর।
১০ জুন সর্বশেষ সংসদ অধিবেশনে যোগ দেন মমতাজ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে সংসদ অধিবেশনও ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। সব সাংসদের একসঙ্গে থাকতে হচ্ছে না। যেদিন অধিবেশন, তার আগের দিন জানিয়ে দেওয়া হয়। আমাকে জানিয়ে দিলেই চলে যাব, শেষ করে আবার গ্রামে চলে আসব। গ্রামে সন্তানেরা আনন্দে আছে। আমি সেখানে জানার পর এলাকার মানুষেরাও স্বস্তি অনুভব করছে। সাংসদ হিসেবে এমনিতেও এলাকার খবর রাখতে হয়, ভাবলাম এলাকার মানুষের কাছেই থাকি। কোনো কিছু হলেই সবাই ফোনে যোগাযোগ করছেন।’
এর আগেও গ্রামের বাড়িতে সময় কাটালেও করোনার এই সময়টা একেবারে অন্য রকম। তিনি বলেন, ‘সবার সঙ্গে মিলে ফুটবল খেলছি, ঘুড়ি ওড়াচ্ছি। আমার বাড়ির পাশেই নার্সারি, সেখান থেকে ফলের গাছ এনে লাগিয়েছি।’
করোনা পরিস্থিতির শুরুতে এলাকায় যেতে পারেননি মমতাজ। তবে সার্বক্ষণিক এলাকার খোঁজখবর নিয়েছেন, বিপদগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার এলাকায় অসহায় ও অসচ্ছলদের একটা তালিকা তৈরি করে প্রশাসন মারফত সবার বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। মাস্ক, গ্লাভস ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আমি জনসমক্ষে যেতে পারি না, কারণ অনেক লোক জড়ো হয়ে যায়। সবাই কোনো না কোনোভাবে দেখা করতে চায়, কথা বলতে চায়, কাছে আসতে চায়। এই সময়ে যেহেতু সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে জোর দেওয়া হচ্ছে, তাই ফোনে সবকিছু তদারকি করতে হচ্ছে। প্রশাসনিক লোকজনের বাইরে আমার সংগঠনের তরুণেরাও সবার পাশে থাকার চেষ্টা করছে।’