সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংগীতশিল্পী ন্যান্সির বরাবরই একটা অনীহা ছিল। অবশ্য ভক্ত ও পরিচিতজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য ফেসবুকে কয়েক দফা অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেনও। কাজের হালনাগাদ তথ্যও সেখানে তুলে ধরতেন। থাকত ঘোরাঘুরি ও পরিবারের সঙ্গে কাটানো একান্ত মুহূর্তের স্থিরচিত্রও। ইদানীং নাকি ফেসবুক তাঁর দিন দিন এসব বিরক্তির কারণ হয়ে উঠছে। আর তাই তো আজ বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ফেসবুকই বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। বলেন, ‘আমি মহাবিরক্ত। সময় যেমন নষ্ট হয় তেমনি প্রাইভেসিও থাকে না। তাই বিদায় নিলাম।’
এক যুগেরও বেশি সময় গানের সঙ্গে আছেন ন্যান্সি। দীর্ঘ সময়ে অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন তিনি। গানগুলো দিয়ে শ্রোতাদের ভালো যেমন পেয়েছেন তেমনি অর্জন করেছেন জাতীয় পর্যায়ের স্বীকৃতিও। একটা সময় সংগীতাঙ্গনে দাপিয়ে বেড়ানো ন্যান্সির ব্যস্ততা এখন কিছুটা কম। সন্তান ও সাংসারিক ব্যস্ততা এবং ঢাকার বাইরে থাকাটাই এর প্রধান কারণ। দুই মেয়েকে নিয়ে ন্যান্সি স্থায়ীভাবে ময়মনসিংহ থাকেন।
বেশ বিরক্তি নিয়ে ন্যান্সি বলেন, ‘কোনো ব্যক্তিগত বিষয় আর ব্যক্তিগত থাকছে না। সবকিছুই জনগণের হয়ে যাচ্ছে! তার ওপর ফেসবুক ব্যবহারকারী অনেকের রুচি ও শিক্ষায় সমস্যা আছে। কোথায় কী মন্তব্য করতে হয়, তা বেশির ভাগই জানেন না। কোনো কিছু সম্পর্কে না জেনে, না বুঝে নেতিবাচক মন্তব্য ছোড়া এবং সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া যেন এখানে বিশাল কৃতিত্ব। ফেসবুকে পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের অনেকেই থাকেন। উল্টাপাল্টা মন্তব্যে খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। তা ছাড়া এ–ও মনে হয়েছে, এখানে সময় দিয়ে কোনো লাভ নেই। এর চেয়ে নিজেকে সময় দেওয়া লাভজনক।’
ফেসবুকে অসংখ্য ভুয়া আইডিও রয়েছে বলে জানান ন্যান্সি। অনেকে এসব ভুয়া আইডির সঙ্গে মেসেঞ্জারে নাকি কথাও বলে। এসব তাঁকে বেশ বিব্রত করে। ন্যান্সি আরও বলেন, ‘ফেসবুক ভালোর জন্য, কিন্তু আমরা অপব্যবহার করি। ফেসবুকে নিজস্ব আইডি ছাড়াও আমার একটা পেজও ছিল। সবাই যেন বোঝে পেজটা আমার আসল। এই জন্য প্রতি সপ্তাহে এতে লাইভেও আসতাম। পরে দেখা যায় লাইভের সেই ভিডিওগুলো নিয়ে অন্যরা কেটেকুটে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে ইউটিউবে আপলোড করে দেয়। এগুলো এখন আর দেখতে ভালো লাগে না। এসব থেকে বাঁচতেই ফেসবুককে বিদায় জানালাম। এখন থেকে ফেসবুকে আমার কোনো অ্যাকাউন্ট থাকবে না। যেগুলো পাবেন সেগুলোর সব ভুয়া। আশা করি আমার শ্রোতারা বিষয়টি বুঝতে পারবেন।’
২০০৬ সালে ‘হৃদয়ের কথা’ চলচ্চিত্রের গান গেয়ে যাত্রা শুরু হয় তাঁর। ২০০৯ সালে সংগীতার ব্যানারে তাঁর প্রথম অ্যালবাম ‘ভালোবাসা অধরা’ প্রকাশিত হয়। ২০১১ সালের মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের ‘প্রজাপতি’ চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়ে প্রথমবারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে টানা সাতবার তারকা জরিপে শ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পী (নারী) বিভাগে পুরস্কার অর্জন করেন ন্যান্সি।