চিকিৎসার জন্য ২১ সেপ্টেম্বর ভারতের অ্যাপোলো হাসপাতালে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া ছিল গায়ক আকবরের। যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন তিনি। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে ভিসা না পাওয়ায় সেই অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল হলো। উন্নত চিকিৎসার জন্য যাওয়া হলো না তাঁর। নতুন করে ১ অক্টোবর একই হাসপাতালে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছেন তিনি। এদিকে তাঁর শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানান এই গায়ক।
প্রথম আলোকে আকবর বললেন, ‘করোনার কারণে ভিসা বন্ধ। শেষ মুহূর্তে আমাদের যাওয়াটা বন্ধ হয়ে গেল। আবারও ভিসার জন্য আবেদন করে রেখেছি। শুনেছি এই সপ্তাহে বিমান চলাচল শুরু হবে। তারপর আমরা যেতে পারব। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। নতুন করে আগামী মাসের ১ তারিখে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া হয়েছে।’
চিকিৎসা ১০ দিন পিছিয়ে গেল। এই কারণে শারীরিক সমস্যা আরও জটিল হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সমস্যা তো কিছুটা হবেই। কিন্তু যোগাযোগব্যবস্থা চালু না হলে তো যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মাঝে দুই দিনের জন্য বিমান চলাচল শুরু হয়েছিল। এখন আবার বন্ধ। আশা করছি, সামনের মাসে যেতে পারব ইনশাল্লাহ।’
বাসা থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন আকবর। তাঁর বর্তমান শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, অবস্থা অপরিবর্তনীয়। তবে নতুন করে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। আকবর বলেন, ‘আমরা হার্টের কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। কিডনির সমস্যা আগের চেয়ে বেড়ে গিয়েছে। ডায়াবেটিসের সমস্যাও বেড়েছে।’
কয়েক দিন আগে ঠিকমতো খেতে পারছিলেন না আকবর। এমনকি হাঁটাচলাও করতে পারছিলেন না। সেই কথা মনে করে বলেন, ‘আগে খুব কষ্টে ছিলাম। হাঁটাচলা, খাওয়া একরকম বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। এখন কিছুটা খেতে পারছি। বাসার ভেতরেই কিছুটা হাঁটার চেষ্টা করছি।’ তিনি আরও জানান, বেশ কয়েকজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঈদুল আজহার পর থেকেই অসুস্থ গায়ক আকবর। তাঁকে ভর্তি করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)। সারা শরীরে ঘা, জ্বালাপোড়া, পটাশিয়াম ও লবণসংকট ছিল। এর ওপর হার্ট, কিনডিসহ একাধিক সমস্যায় নিয়ে তিনি চিকিৎসা নিয়েছেন। সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকেই বাসায় ফিরেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার এই গায়ক প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে চিকিৎসার জন্য আরও দুই লাখ টাকা অনুদান পেয়েছেন। সেই টাকার চেকটি আজ ইস্যু হয়েছে। আগামীকাল তিনি টাকা ওঠাতে পরবেন বলে জানান আকবর। এর আগে ২০১৯ সালের শুরুর দিকে অসুস্থ হয়ে বেশ কয়েক দিন হাসপাতালে ছিলেন আকবর। তাঁর অসুস্থতার খবর পৌঁছে যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। এরপর তাঁর পরিবারকে ডেকে ২০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই টাকার মুনাফা হিসেবে ৩ মাস পরপর ৪৯ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে তোলেন আকবর।
‘ইত্যাদি’র মাধ্যমে দেশ–বিদেশে গায়ক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন আকবর। আগে তিনি যশোরে রিকশা চালাতেন। খুলনার পাইকগাছায় জন্ম হলেও তাঁর বেড়ে ওঠা যশোরে। টুকটাক গান করতেন। তবে গান নিয়ে ছোটবেলা থেকে হাতেখড়ি ছিল না। আকবরের ভরাট কণ্ঠের গানের কদর ছিল যশোর শহরে। সে কারণে স্টেজ শো হলে ডাক পেতেন।
২০০৩ সালে যশোর এমএম কলেজের একটি অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলেন আকবর। সেবার বাগেরহাটের এক ভদ্রলোক আকবরের গান শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তারপর তিনি আকবরকে নিয়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে চিঠি লেখেন।
এরপর ‘ইত্যাদি’র টিম আকবরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওই বছরই ‘ইত্যাদি’তে ‘একদিন পাখি উড়ে যাবে যে আকাশে, ফিরবে না সে তো আর কারও আকাশে’—কিশোর কুমারের এ গান গেয়ে রাতারাতি পরিচিতি পেয়ে যান তিনি। এরপর তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি গায়ক পরিচয়ে পরিচিতি পান। পরে তাঁর গাওয়া ‘তোমার হাতপাখার বাতাসে’ গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। হানিফ সংকেতের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র একটি গান তাঁকে আলোচনায় নিয়ে আসে। সেই থেকে আকবরের পরিবারের পাশে সব সময় থেকেছেন তিনি।