: সুযোগ পেলে জেমসকে কোন গানটি শোনাবেন?
: যদি গুরুর সামনে কখনো গান গাওয়ার সুযোগ পাই, তাহলে ‘বাংলাদেশ’ গানের দুই লাইন শোনাব।
: আমাদের একটু শোনানো যাবে?
: এখনই শুনবেন? আমি তো ডায়ালাইসিসে?
: আপনি ডায়ালাইসিসে? আচ্ছা, বাদ দেন।
: না, তবু একটু শোনাই?
আজ রোববার দুপুরে জেমসের গাওয়া ‘বাংলাদেশ’ গানটি গেয়ে উঠলেন তাঁর ভক্ত মোহাম্মাদ মামুন। গানটি গাওয়ার সময় টাঙ্গাইল শহরের ফিরোজা কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টারে মামুনের ডায়ালাইসিস হচ্ছিল। টাঙ্গাইলের এলেঙ্গার বাসিন্দা মামুনের দুটি কিডনিই নষ্ট। বাবার দেওয়া একটি কিডনি দিয়েই কেটে যাচ্ছিল, কিছুদিন আগে জানতে পারেন, সেটিও আর কাজ করছে না। পাঁচ বছর ধরে ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে। আর এখন সপ্তাহে দুই দিন ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে। দিনের পর দিন স্বাস্থ্য আরও খারাপের দিকেই যাচ্ছে। মনের মধ্যে অনেক বছর ধরে পুষে রাখা একটা ইচ্ছা, প্রিয় শিল্পী জেমসের সঙ্গে একবারের জন্য হলেও দেখা করা। একবার তাঁকে ছুঁয়ে দেখা। অবশেষে ২৮ সেপ্টেম্বর সেই সুযোগ পেয়েছেন মোহাম্মাদ মামুন। সেদিন বিকেলে ঢাকার বারিধারায় স্টুডিওতে গায়ক জেমসের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। প্রথম আলোকে জানালেন, দীর্ঘ সাত মাস চেষ্টার পর এই সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
২৯ বছর বয়সী মামুন এক যুগেরও বেশি সময় ধরে জেমসের গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। জেমসের গান গাওয়ার কারণে এলাকার সবাই তাঁকে ‘জেমস মামুন’ নামে চেনে। প্রিয় শিল্পীকে ভালোবেসে ফেসবুকে ‘জেমস মামুন’ নামে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। শুরুতে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্টেজে গাইতেন। এসব মঞ্চে কখনো ২০০০ আবার কখনো ২৫০০ টাকা পেয়েছেন। এসব দিয়ে সংসার চালাতেন। মামুনের কণ্ঠে জেমসের গান শুনে ও তাঁর শারীরিক অসুস্থতার খবর শুনে একজন অতিথি একবার এক লাখ টাকা দিয়েছিলেন।
টাঙ্গাইল ছাড়াও মামুন গান গেয়েছেন জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী ও গাজীপুরের বিভিন্ন মঞ্চে। এক যুগে শতাধিক মঞ্চে গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁর। এমনিতে অন্য শিল্পীর গান গাইলেও মঞ্চে শুধুই জেমসের গান গেয়ে থাকেন। মামুন বলেন, ‘গুরু জেমসের গান ভালোবেসে গানে আসা। ছোটবেলায় এখানকার শিক্ষকের কাছে গান শিখেছিলাম। ছোটবেলা থেকেই জেমসের গান গাইতাম। তাঁর মতো করে গাওয়ার চেষ্টা করতাম। তাঁকে যদি জীবনে একবার চোখের দেখা দেখতে পাই, অন্তত একবার সামনাসামনি বসে কথা বলতে পারতাম। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তিন মিনিট গুরুর সঙ্গে ছিলাম। তিনি আমার গায়ে হাত রেখেছেন। শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিয়েছেন। তাঁর ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলেছেন। একটা দুঃখ, গুরুকে গান শোনানোর সুযোগ পেলাম না। এই আফসোস রয়ে গেল।’
সাত মাস ধরে জেমসের সঙ্গে দেখা করার জন্য অস্থির হয়ে পড়েন। ফেসবুকে দুষ্ট ছেলের দল নামের একটি গ্রুপে যোগাযোগ করেন। এরপর ২৮ সেপ্টেম্বর সফল হন।
টাঙ্গাইলের ভক্তের বিষয়টি আজ রোববার দুপুরে মনে করিয়ে দিতেই জেমস বলেন, ‘ভক্তরাই তো আমার প্রাণ। তাঁদের কারণে আমি আজ জেমস। তেমনই একজন ভক্ত মামুন। এত অসুস্থতার সময়ও আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য উদগ্রীব! জীবনের কঠিন সময়েও কোনো ভক্ত তাঁর প্রিয় শিল্পীকে এতটা ভালোবাসে, মামুনকে না দেখলে সেটা আমার অজানাই থেকে যেত। সবার কাছে মামুনের জন্য দোয়া চাই। সুস্থ হয়ে সে যেন আবার গানের মঞ্চ মাতাতে পারে।’