প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি নোবেল মিথ্যা বলছেন, নোবেল বলছেন কী

মাইনুল আহসান নোবেল।
প্রথম আলো।

সড়ক দুর্ঘটনার ঠিক তিন দিনের মাথায় আলোচিত ও সমালোচিত গায়ক নোবেলের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ করেছেন প্রত্যক্ষদর্শী সোয়াইব বিন আহসান। গুলশান আজাদ মসজিদ কোয়ার্টারের বাসিন্দা ও শিক্ষার্থী সোয়াইব জানালেন, ‘নোবেল ভাই উল্টো দিক থেকে বাইক চালিয়ে আসার সময় ২৫-২৬ বছর বয়সী একজন সাইকেল আরোহীকে ধাক্কা দেন।’ অন্যদিকে নোবেল বললেন, ‘আমি উল্টো দিক দিয়ে কেন যাব! তরুণ নাকি বয়স্ক লোক আহত হয়েছেন, তা তো আমি জানিই না।’
গত বৃহস্পতিবার রাতে বাঁ চোখে ব্যান্ডেজ করা একটি ছবি নোবেল তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেয়ার করেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘আসসালামু আলাইকুম। শুভরাত্রি। সড়ক দুর্ঘটনায় রাস্তাটি গুরুতরভাবে আহত হয়েছে। রাস্তাটির জন্য দোয়া করবেন।’
পরদিন শুক্রবার সকালে আরেকটি পোস্টে রক্তাক্ত মুখের একটি ছবি দেখা যায় তাঁর। ছবির ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘এক বয়স্ক লোক অসতর্কভাবে রাস্তা পার হচ্ছিল। তাকে বাঁচাতে গিয়ে আমার মাথার তালুতে ১২টা, বাম পাশের ভ্রুতে ১৮টা, মোট ৩০টা সেলাই পড়েছে। তবুও মনে তৃপ্তি অনুভব করছি কারণ লোকটা নিরাপদ আছে। আর আমি আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ।’

মাইনুল আহসান নোবেল।

নোবেলের এই পোস্ট নজরে আসে প্রত্যক্ষদর্শী সোয়াইব বিন আহসানের। তিনি দুর্ঘটনা নিয়ে নোবেলের দ্বিতীয় পোস্ট শেয়ার করে লেখেন, ‘রং সাইডে বাইক চালিয়ে সাইকেল আরোহীর ওপর দিয়ে এভাবেই বাইকটা চালাইয়া দিলা। যেখানে লোকটা সারা দিন রোজা থাকার পর ইফতার করে তার ক্ষুধা নিবারণের কথা, সেখানে লোকটা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে। আর তুমি একজন রোজাদারকে মৃত্যুর পথযাত্রী বানাইয়া আরেকজন বৃদ্ধকে জীবনদানের গল্প শুনাও!’

আজ শনিবার সন্ধ্যায় প্রত্যক্ষদর্শী সোয়াইব বিন আহসানের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি বলেন, ‘আমরা গুলশান আজাদ মসজিদের পাশে ৩৫ নম্বর রোডে কয়েকজন ক্রিকেট খেলছিলাম। এর মধ্যে হঠাৎ দেখি উল্টো দিক থেকে আসা একটি হোন্ডা ধাক্কা দেয় সাইকেলকে। দুজনেই পড়ে যান। আমরা সবাই মিলে সাইকেল আরোহীকে ল্যাবএইডে পাঠাই, পরে অবশ্য তিনি অন্য হাসপাতালে যান। আমরা নোবেল ভাইকেও বলি, আপনি হাসপাতালে যান। তাঁর হোন্ডা পাশে পড়া ছিল। আমরা তাঁকে একটি রিকশায় তুলেও দিই। কিছু দূর যাওয়ার পর রিকশা ঘুরিয়ে চলে আসেন। এরপর হোন্ডা চালিয়ে তিনি চলে যান। তারপর তো দেখি ফেসবুকে তিনি মিথ্যাচার করছেন। আমাদের এখানে পাশে সিসি ক্যামেরা চেক করলেও প্রমাণ পাওয়া যাবে।’

মাইনুল আহসান নোবেল

প্রত্যক্ষদর্শীর কথা নোবেলকে জানানো হলে তিনি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘রং সাইড দিয়ে চালাচ্ছিলাম না। আজব। সাইকেলওয়ালার সঙ্গে ধাক্কা লাগছে কি না, ওটাও আমি জানি না। ওই লোকটাকে সাইড দিতে গিয়ে আমার মোটরসাইকেল ইমব্যালেন্স হয়ে যায়। এরপর আমার বাইক কোথায় গিয়ে লাগছে, তা আমি জানি না। কারণ, কিছুক্ষণের জন্য আমি ব্ল্যাকআউট হয়ে যাই। এরপর তো আমি স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলামও না। তারপর তো আমি নিজেই হাসপাতালে ভর্তি হই।’

জি বাংলার সারেগামাপার পর নোবেল গানের চেয়ে তাঁর বাইরের কর্মকাণ্ড নিয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছেন। এসব বিতর্ক তিনি বেশ এনজয় করেন বলেও তাঁর সাম্প্রতিক কথাবার্তায় আরও পরিষ্কার হয়। তিনি এ–ও জানিয়েছেন, ফেসবুকে রিচ কমে যাওয়ার কারণে হিট বাড়াতে উদ্ভট পোস্টও দেন। নোবেল বলেন, ‘আসলে ফেসবুক পেজ গরম রাখার জন্য করতে হয়। আমার ফেসবুকের রিচ কমে গেছিল, তাই এমন পোস্ট দিয়েছি। অনেকেই এসব নিয়ে লেখালেখি করেছে। যা খুশি লিখুক, সাংবাদিকেরা তো বহু লিখেছে। এগুলো আসলে আমার গোনার সময় নাই। যার যা খুশি লিখুক, আমি আমার গান দিয়ে টিকে থাকব। আমার খাইসলত খারাপ, আই ডোন্ট মাইন্ড। ব্যক্তি হিসেবে আমাকে কেউ পছন্দ না করলে কিচ্ছু যায় আসে না। আমার গান পছন্দ করলেই হবে। আমি ব্যক্তি মানুষ হিসেবে ভালো না। ব্যক্তি মানুষ হিসেবে আমি খুবই খারাপ। আমার গান যদি কারও পছন্দ হয়, শুনতে পারে। না শুনলেও সমস্যা নাই।’