নতুন-পুরোনো গানে আজ বুলবুল স্মরণ

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। ছবি: ফেসবুক থেকে
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। ছবি: ফেসবুক থেকে

‘আমাকে যেন ভুলে না যাও…তাই একটা ছবি পোস্ট করে মুখটা মনে করিয়ে দিলাম।’ ঠিক এক বছর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের একটি ছবি পোস্ট করে নিজেকে ভক্ত-শ্রোতাদের সামনে নিজেকে তুলে ধরেন বরেণ্য শিল্পী আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। কলকাতা থেকে ঢাকায় ফিরে বিমানবন্দরে বসে নিজের তোলা ছবিটি পোস্ট করেন। ২১ দিনের মাথায় হঠাৎ করেই তিনি চলে গেলেন না–ফেরার দেশে। আজ ২২ জানুয়ারি তাঁর চলে যাওয়ার দিন।

প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে বাবার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়ে নতুন একটি গান প্রকাশ করা হচ্ছে বলে জানালেন ছেলে সামির ইমতিয়াজ। ‘মাটি আমার ঠিকানা’ শিরোনামের এই গানের সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। ছেলে সামির প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবা বেঁচে থাকতেই গানটিতে গাইড ভয়েস দিয়েছিলেন। অনেক দিন কম্পিউটারে সেই গান রয়ে যায়। কিছুদিন আগে কম্পিউটার খুলে গানটি খুঁজে পাই। শোনার পর মনে হলো গানটি প্রকাশের উপযোগী। এরপর উপলক্ষ হিসেবে বাবার মৃত্যুবার্ষিকী বেছে নিলাম।’

সামির বলেন, বাবার গাওয়া কয়েকটি গান এর আগেও প্রকাশিত হয়েছে। ‘মাটি আমার ঠিকানা’ গানের কথা লিখেছেন গাজী তানভীর আহমেদ। গানটি রি-অ্যারেঞ্জ করেছেন রোজেন রহমান। এদিকে সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে ঢাকার পূর্বাচলে পানজোড়া বড়বাড়ি এলাকায় সায়রা প্যাভিলিয়ন রিসোর্টে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল স্মরণে একটি মিউজিয়াম চালু করা হবে বলেও জানান সামির ইমতিয়াজ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমার মা (সুবর্ণা ইমতিয়াজ) বাবার স্মৃতি সংরক্ষণ করার জন্য ৫০০০ বর্গফুটের একটি জায়গা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাবার স্মৃতি সংরক্ষণে আমি যেন মিউজিয়াম ধরনের কিছু করি। ভাবলাম, ভাবনাটা বেশ চমৎকার। এই মিউজিয়ামের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মও বাবার সম্পর্কে জানতে পারবে। এখানে বাবার ব্যবহৃত জিনিসপত্র রাখা হবে। এই মিউজিয়াম থেকে বাবার সৃষ্টি করা গান সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। ছবি: ফেসবুক থেকে

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার দিনব্যাপী বিশেষ আয়োজন থাকছে চ্যানেল আইয়ের পর্দায়। আজ সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে চ্যানেল আইয়ের পর্দায় দেখানো হয় ‘গান দিয়ে শুরু’-এর বিশেষ পর্ব। যেখানে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের গান গেয়েছেন ‘ক্ষুদে গানরাজ’ ও ‘চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ’–এর শিল্পীরা।

আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় চ্যানেল আইয়ের নিয়মিত অনুষ্ঠান ‘তারকা কথন’-এর বিশেষ পর্ব দেখানো হবে। যেখানে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে স্মরণ করবেন নন্দিত কণ্ঠশিল্পী সামিনা চৌধুরী ও কুমার বিশ্বজিৎ।

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ১৯৫৬ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ওয়াফিজ আহমেদ ও মাতার নাম ইফাদ আরা নাজিমুন নেসা। ঢাকার আজিমপুরের ওয়েস্টটেন্ট উচ্চবিদ্যালয়ে তিনি মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন এবং শিক্ষাজীবনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। স্কুলে থাকা অবস্থায় মাত্র ১৫ বছর বয়সে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল নিয়মিত গান করেন।

১৯৭৮ সালে ‘মেঘ বিজলি বাদল’ ছবিতে সংগীত পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন। ১৯৮৪ সালে বেলাল আহমেদের পরিচালিত ‘নয়নের আলো’ চলচ্চিত্রের গীত রচনা ও সংগীত পরিচালনা করেন তিনি। সেই চলচ্চিত্রের তাঁর লেখা ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বাবার মুখে’, ‘আমার বুকের মধ্যেখানে’, ‘আমি তোমার দুটি চোখের দুটি তারা হয়ে থাকব’ গানগুলো জনপ্রিয়তা পায়। তিন শতাধিক সিনেমায় সংগীত পরিচালনা করেছেন। দুবার বাংলাদেশের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।

ফেসবুকে শেষবার এই ছবি শেয়ার করেছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। ছবি: ফেসবুক থেকে

বুলবুলের সুর করা প্রায় সব কটি দেশের গানের শিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন। এর মধ্যে প্রয়াত নজরুল ইসলাম বাবুর লেখা ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’, ‘উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম সব ঘুরে এক ব্রহ্মচারী থমকে দাঁড়াল’, ‘এই দেশটা আমার স্বপ্নে বোনা নকশিকাঁথার মাঠ’, ‘যুদ্ধ এখনো থামেনি তাই তো তোমার ছেলে আসেনি’, ‘ও আমার আট কোটি ফুল দেখো গো মালি’ (এ গানের শিল্পী রুনা লায়লা)। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা ‘মাগো আর তোমাকে ঘুমপাড়ানি মাসি হতে দেব না’, ‘আমার বাজান গেল কই বাজার থিকা আনতে গিয়া চিড়া মুড়ি দই’, ‘একদিন ঘুম ভেঙে দেখি তুমি নাই’, ‘ওকে আর করল না তো কেউ বিয়ে’। তাঁর সুর করা আরও গানের মধ্যে আছে মোহাম্মদ রফিকুজ্জামানের লেখা ‘সেই রেললাইনের ধারে মেঠোপথটার পাড়ে দাঁড়িয়ে’, মনিরুজ্জামান মনিরের লেখা ‘একতারা লাগে না আমার দোতারাও লাগে না’, এস এম হেদায়েতের লেখা ‘ও মাঝি নাও ছাইড়া দে ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে’ এবং তাঁর নিজের লেখা ‘সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য লাবণ্য অপূর্ব রূপসী রূপেতে অনন্য’, ‘এই দেশ আমার সুন্দরী রাজকন্যা’, ‘একাত্তরের মা জননী, কোথায় তোমার মুক্তিসেনার দল’, ‘ওগো বীর মুক্তিযোদ্ধা লও লও মুক্তির ফুল’, ‘আয় আয় আয়রে মা আয়রে আমার কোলে’ ইত্যাদি।