এন্ড্রু কিশোরের শারীরিক অবস্থা এখন কিছুটা ভালোর দিকে। শেষ হয়েছে প্রয়োজনীয় সব কেমোথেরাপি। সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশ দূতাবাসের সবুজ সংকেত পেলেই সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের বিমানে চড়ে ঢাকায় ফিরবেন দেশের সংগীতের বরেণ্য এই শিল্পী। কাল বুধবার যেকোনো সময় মিলতে পারে এই সবুজ সংকেত। প্রথম আলোকে এন্ড্রু কিশোরের পরিবারের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মৌমিন বিশ্বাস।
মৌমিন জানান, কাল বুধবার জানা যাবে কবে দেশে ফিরবেন এন্ড্রু কিশোর। বাংলাদেশি সংগীতের বরেণ্য এই সংগীতশিল্পী ৮ মাসের বেশি সময় ধরে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই সংগীতশিল্পীকে এই সময়ে ছয়টি ধাপে মোট ২৪টি কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছে। তাঁর শারীরিক অবস্থা এখন কিছুটা উন্নতির দিকে। কাল সবুজ সংকেত মিললে পরশু দিন ঢাকায় ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে তাঁর। তা না হলে এই সপ্তাহে ঢাকায় আসবেন এটা মোটামুটি নিশ্চিত। সঙ্গে থাকবেন এন্ড্রু কিশোরের স্ত্রী লিপিকা এন্ড্রু।
মৌমিন বলেন, ‘এই যাত্রায় এন্ড্রু কিশোর দাদা ভালো হলেও তাঁকে তিন মাস পর আবার চেকআপের জন্য যেতে হবে। একটা নিয়মের মধ্যে তাঁকে চলতে হবে। এত কিছুর পর দাদা দেশে ফিরছেন, ভাবতেই খুব আনন্দের অনুভূতি হচ্ছে।’
শরীরে নানা ধরনের জটিলতা নিয়ে এন্ড্রু কিশোর অসুস্থ অবস্থায় গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে দেশ ছেড়েছিলেন। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর তাঁর শরীরে নন-হজকিন লিম্ফোমা নামের ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়ে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক লিম সুন থাইয়ের অধীনে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। এই কয়েক মাস ধরে সিঙ্গাপুরে তাঁর চিকিৎসা চলে।
এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসায় সহায়তার হাত বাড়ান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্যয়বহুল এই চিকিৎসার খরচ জোগাতে বিক্রি করে দেন রাজশাহী শহরে তাঁর কেনা ফ্ল্যাটটি। শিল্পীর পরিবারের পাশাপাশি সংগীতশিল্পী, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এবং প্রবাসীরা এগিয়ে এসেছেন। গেল ফেব্রুয়ারিতে সিঙ্গাপুর বিজনেস সোসাইটি এবং বাংলাদেশ চেম্বারের আয়োজনে সিঙ্গাপুরের স্থানীয় গেটওয়ে থিয়েটার হলে আয়োজন করা হয় ‘এন্ড্রু কিশোরের জন্য ভালোবাসা’ শিরোনামের সংগীতানুষ্ঠান। সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোস্তাফিজুর রহমানের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী, সাবিনা ইয়াসমীন, মিতালী মুখার্জি, মোমিন বিশ্বাস, জাহাঙ্গীর সাঈদ ও মিলিয়া সাবেদ।
এন্ড্রু কিশোরের এক ছেলে ও এক মেয়ে। তাঁরা দুজনেই অস্ট্রেলিয়া থাকেন। মেয়ে মিনিম এন্ড্রু সংজ্ঞা সিডনিতে গ্রাফিকস ডিজাইন ও ছেলে জে এন্ড্রু সপ্তক মেলবোর্নে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে পড়াশোনা করছেন।
সংগীতজীবনের শুরুতে আবদুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে প্রাথমিকভাবে সংগীতচর্চা শুরু করেন এন্ড্রু কিশোর। চলচ্চিত্রে তাঁর প্লেব্যাক যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৭ সালে আলম খান সুরারোপিত ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রের ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে। এরপর তাঁর গাওয়া অনেক গান জনপ্রিয় হয়। বাংলা চলচ্চিত্রের গানে অবদান রাখার জন্য তিনি কয়েকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।