শ্রেয়া ঘোষাল
শ্রেয়া ঘোষাল

দেবদাসে শুরু, প্রথম ছবিতেই বাজিমাত তাঁর

তাঁর জীবনের প্রথম প্লেব্যাক ছিল লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া একটি গান। ছোট থেকে সংগীতচর্চাই ছিল তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। বর্তমানে বলিউডের অন্যতম সেরা সংগীতশিল্পীদের তালিকায় নাম রয়েছে এই বাঙালি নারীর, তিনি শ্রেয়া ঘোষাল। আজ তাঁর জন্মদিন।শ্রেয়া মাত্র ১৬ বছর বয়সে ভারতের জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ‘সা রে গা মা পা’-তে বিজয়ী হন। ২০০২ সালে সঞ্জয় লীলা বানসালি পরিচালিত জনপ্রিয় ছবি ‘দেবদাস’-এ প্রথমবারের মতো প্লেব্যাক করেন তিনি। এরই মধ্যে চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ছাড়াও রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা রয়েছে তাঁর নিজ ঝুলিতে। শ্রেয়া ঘোষাল হলেন একজন ভারতীয় বাঙালি সংগীতশিল্পী। তিনি বলিউডের অসংখ্য চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন। হিন্দি ভাষা ছাড়াও তিনি বাংলা, নেপালি, তামিল, ভোজপুরি, তেলেগু, উড়িয়া, গুজরাতি, মালয়ালম, মারাঠি, কন্নড়, পাঞ্জাবি ও অসমীয়া ভাষায় গান গেয়েছেন। তাঁর সুরেলা কণ্ঠের জন্য তিনি বহুবার বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। আজ, ১২ মার্চ তাঁর জন্মদিনে এই শিল্পীর সম্পর্কে কিছু অজানা ও আকর্ষণীয় তথ্য জেনে নেওয়া যাক। ছবি সৌজন্যে - শ্রেয়া ঘোষালের ফেসবুক।
১৯৮৪ সালের ১২ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে এক বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শ্রেয়া ঘোষাল। তিনি রাজস্থানের কোটার নিকটবর্তী রাওয়াতভাতা শহরে বেড়ে ওঠেন। তাঁর পিতা বিশ্বজিৎ ঘোষাল, মা শর্মিষ্ঠা ঘোষাল ।
মাত্র চার বছর বয়স থেকেই তিনি সংগীতচর্চা শুরু করেন, তখন শ্রেয়ার গুরু ছিলেন তাঁর মা। তিনি প্রথম স্টেজ পারফরম্যান্স করেন তাঁদের ক্লাবের বার্ষিক অনুষ্ঠানে। এখান থেকেই তাঁর গানের ক্যারিয়ার গড়ার যাত্রা শুরু হয়েছিল।
মাত্র ছয় বছর বয়স থেকেই তিনি হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু করেন। তাঁর মা-বাবা তাঁকে মহেশচন্দ্র শর্মার কাছে হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের জন্য ভর্তি করেন।
তিনি কোটা এবং অনুশক্তিনগরে (মুম্বাই) অ্যাটমিক এনার্জি সেন্ট্রাল স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছেন। স্নাতকের জন্য তিনি আর্টস স্ট্রিমে কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন।
১৬ বছর বয়সে তিনি জি টিভির ‘সা রে গা মা পা’ সংগীত প্রতিযোগিতার শিশুদের বিশেষ পর্বে অংশগ্রহণ করেন এবং বিজয়ী হন। সেই শোটি পরিচালনা করেছিলেন জনপ্রিয় গায়ক সোনু নিগম। এই সময় তিনি এই প্রতিযোগিতার বিচারক ও সুরকার কল্যাণজি বীরজি শাহের নজর কাড়েন। কল্যাণজির পরামর্শেই তাঁর পরিবার মুম্বাইয়ে চলে আসে। শ্রেয়া কল্যাণজির কাছে দেড় বছর তালিম গ্রহণ করেন এবং পরে মুক্তা ভিড়ের কাছে শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নেন।
তিনি দ্বিতীয়বার যখন সা রে গা মা পা-তে অংশ নিয়েছিলেন, তখন তিনি চলচ্চিত্র পরিচালক সঞ্জয় লীলা বানসালির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। ২০০০ সালে সঞ্জয় লীলা বানসালি শ্রেয়াকে তাঁর চলচ্চিত্র ‘দেবদাস’-এর প্রধান নারী চরিত্র পার্বতীর চরিত্রে কণ্ঠ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সেখানে পার্বতী অর্থাৎ পারো-র চরিত্রে অভিনয় করেন ঐশ্বরিয়া রাই। সেই ছবিতে পাঁচটি গান গেয়েছিলেন শ্রেয়া ঘোষাল। শ্রেয়া ঘোষালের গাওয়া ‘বৈরী পিয়া’ আর ‘ডোলা রে’ তখন ফিরছে দর্শকদের মুখে মুখে। কিন্তু এই সুযোগের  পেছনে ছিল একটি মজার গল্প। রিয়েলিটি শোর যেই সিজনে শ্রেয়া ঘোষাল জয়ী হন, সেটি নিয়মিত দেখতেন সঞ্জয় লীলা বানসালির মা লীলা বানসালি। তিনিই প্রথম সঞ্জয় লীলা বানসালিকে শ্রেয়ার কথা বলেন।
তিনি চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, চারবার কেরালা রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার, দুবার তামিলনাড়ু রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার, সাতবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার ও দশবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার দক্ষিণ অর্জন করেছেন।
২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে তিনি লন্ডনে যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সের সদস্যদের কাছ থেকে সম্মাননা লাভ করেন। তিনি পাঁচবার ফোর্বসের ভারতের শীর্ষ ১০০ তারকার তালিকায় স্থান করে নেন। ২০১৭ সালে প্রথম ভারতীয় সংগীতশিল্পী হিসেবে মাদাম তুসো জাদুঘরে ঘোষালের মোমের মূর্তি স্থাপিত হয়।
২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বিয়ে করেন শ্রেয়া ও শিলাদিত্য। বিয়েতে দুই পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। শিলাদিত্য শ্রেয়ার ছোটবেলার বন্ধু। বিয়ের আগে ১০ বছর ধরে প্রেম করেছিলেন দুজন। বিয়ের পর ভক্তদের জন্য স্বামী শিলাদিত্যর সঙ্গে তোলা একটি সেলফি নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছিলেন শ্রেয়া। ক্যাপশনে লিখেছিলেন, ‘বাঙালি রীতিতে আমরা বিয়েটা সেরে ফেললাম। পরিবার ও খুব কাছের কিছু বন্ধু উপস্থিত ছিল। নতুন জীবনের শুরুতে শিলাদিত্য ও আমি সবার দোয়া চাই।’
শ্রেয়া ঘোষাল শ্রেষ্ঠ প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবেই সবচেয়ে বেশি পুরস্কার পেয়েছেন। ভারতের ইতিহাসে মাত্র ২৬ বছর বয়সে চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া একমাত্র গায়িকা হলেন তিনি।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করে শ্রেয়া জানান, তিনি অন্তঃসত্ত্বা। ওই পোস্টের ক্যাপশনে শ্রেয়া লেখেন, ‘আমাদের বাবু শ্রেয়াদিত্য আসার জন্য তৈরি হচ্ছে। আপনাদের সবাইকে এই সুখবর ভাগ করে নিতে পেরে আমি খুবই উচ্ছ্বসিত। আমাদের জীবনের নতুন অধ্যায় যোগ হতে যাচ্ছে। আপনাদের ভালোবাসা আর প্রার্থনা আমাদের সব অমঙ্গল থেকে দূরে রাখুক।’