থাকছে এলআরবি, ভাঙছে না

এলআরবির ভেঙে যাওয়ার খবরটি ভক্তদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলে
এলআরবির ভেঙে যাওয়ার খবরটি ভক্তদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলে

এলআরবির ভক্তদেরই জয় হলো। অনেক নাটকীয়তার পর ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় এই ব্যান্ড। ১৯৯০ সালের ৫ এপ্রিল যে স্বপ্ন নিয়ে ব্যান্ডটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু, সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য কাজ করে যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেছেন এলআরবির সদস্যরা। তেমনটাই জানালেন এলআরবির ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ। আজ বুধবার সকালে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘বালাম অ্যান্ড দ্য লিগ্যাসি নয়, আমরা এলআরবিতে ছিলাম, আছি এবং থাকব। বস (আইয়ুব বাচ্চু) যেমনটা চেয়েছিলেন, এই ব্যান্ড নিয়ে তিনি যেভাবে ভেবেছিলেন, যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করে যাব।’

জানা গেছে, এলআরবির অন্যতম সদস্য মাসুদ এখন আছেন মেহেরপুরে। তাঁর মা খুব অসুস্থ। তিনি ঢাকায় ফিরে আসার পর ব্যান্ডের সদস্যরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে তা সবাইকে জানিয়ে দেবেন। প্রয়োজনে আইয়ুব বাচ্চুর পরিবারের সঙ্গেও তাঁরা বসবেন। শামীম আহমেদ বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। এখন থেকে পরিবারকে বাদ দিয়ে আর কিছুই হবে না। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করা হবে।’

আইয়ুব বাচ্চুর পরিবার থেকে আপত্তি করে বলা হয়, এলআরবি নামটি আর কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। এরপর গত সোমবার এলআরবির সদস্যরা ব্যান্ডটির নতুন নাম দেন বালাম অ্যান্ড দ্য লিগ্যাসি। এ সময় মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এলআরবির প্রাণপুরুষ আইয়ুব বাচ্চুর প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা আর সম্মান রেখে তাঁর স্মৃতিকে অম্লান রাখতে, আমাদের সবার প্রিয় ব্যান্ডকে বাঁচিয়ে রাখতে এই উদ্যোগ নিয়েছি।’

এলআরবির ভেঙে যাওয়ার খবরটি ভাক্তদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলে। আইয়ুব বাচ্চু ও এলআরবির অসংখ্য ভক্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। তাঁরা ব্যান্ডটিকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার জন্য এই সিদ্ধান্ত আবারও বিবেচনার আহ্বান জানান। আইয়ুব বাচ্চুর পরিবারকে কঠিন অবস্থান থেকে সরে আসার জন্য অনুরোধ করেন। পাশাপাশি এলআরবির সদস্যদেরও আইয়ুব বাচ্চুর পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে ব্যান্ডটি পরিচালনার জন্য অনুরোধ করেন। কিছু ভক্ত ব্যান্ডটির ভাঙন প্রতিরোধের জন্য আইয়ুব বাচ্চুর পরিবার আর এলআরবির সদস্যদের নানা ধরনের হুমকি দেন।

পরিবারের আপত্তি আর এলআরবির নতুন নামকরণের পর গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন আইয়ুব বাচ্চুর ছেলে আহনাফ তাজওয়ার আইয়ুব। তিনি এখন আছেন কানাডায়। পড়াশোনা করছেন ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায়। তিনি লিখেছেন, ‘আমার বাবা আমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি নন। তিনি আমার বোনেরও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নন। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ। ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। তাঁর গানগুলোর ভেতর দিয়ে তিনি মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।’

বালামকে নিয়ে এলআরবির নতুন লাইনআপ

আহনাফ তাজওয়ার আইয়ুব আরও লিখেছেন, ‘এলআরবি অথবা বালাম অ্যান্ড দ্য লিগ্যাসির (তারা এখন এই নামে গান করতে চান) সদস্যদের বলতে চাই, তাঁরা চাইলে এলআরবি নামে গান করতে পারেন। এ নিয়ে আমাদের কোনো বাধা নেই। প্রাথমিকভাবে তারা যেভাবে এলআরবি নামে গান করতে চেয়েছিলেন, সেভাবেই গান চালিয়ে যেতে পারেন। তাদের জন্য শুভকামনা রইল। আশা করি, তারা সফল হবেন এবং বাবার গান নিয়ে এগিয়ে যাবেন। আমার চাওয়া, এলআরবি সব সাফল্য অর্জন করবে।’

আজ শামীম আহমেদ বলেছেন, ‘বস যখন ছিলেন, তখনো তাজওয়ার এলআরবিতে বাজিয়েছে। ও খুব মেধাবী আর ভালো মিউজিশিয়ান। পাশাপাশি পড়াশোনাতে ও খুবই ভালো। বস কখনো চাননি তাঁর ছেলে গান করুক। তিনি চেয়েছেন, তাজওয়ার আগে পড়াশোনা শেষ করুক। আমরাও তা-ই চাই। ও যখন সিদ্ধান্ত নেবে, তখনই এলআরবিতে আসবে। আমরা এখন পাঁচজন আছি, ও এলে ছয়জন হবে। গতকাল ফেসবুকে ও যে স্ট্যাটাস দিয়েছে, তা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের সহায়তা করেছে। আমি বলব, বড় বিপর্যয়ের হাত থেকে আমরা সবাই রক্ষা পেয়েছি। এটা একদিকে আমাদের ব্যান্ডের জন্যও যেমন ভালো হলো, তেমনি বসের পরিবারের জন্যও তা ভালো হবে।’

শামীম আহমেদ জানান, প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এলআরবি এখন যে আয় করবে, তা থেকে একটা অংশ পাবে আইয়ুব বাচ্চুর পরিবার। তবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এলআরবির কনটেন্ট থেকে আইয়ুব বাচ্চুর পরিবার যা পাচ্ছে, তা তারা পাবে।

১৯৯০ সালের ৫ এপ্রিল এলআরবি প্রতিষ্ঠা করেন আইয়ুব বাচ্চু। শুরুতে এই ব্যান্ডের নাম ছিল ‘লিটল রিভার ব্যান্ড’ (এলআরবি)। ১৯৯৭ সালে নাম বদলে রাখা হয় ‘লাভ রানস ব্লাইন্ড’ (এলআরবি)।

গত বছরের ১৮ অক্টোবর সকালে নিজ বাসায় হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আইয়ুব বাচ্চু।