বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০ বাংলা গানের তালিকায় শাহনাজ রহমতউল্লাহর গাওয়া গান চারটি স্থান পেয়েছে! গানগুলো হলো খান আতাউর রহমানের কথা ও সুরে ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, গাজী মাজহারুল আনোয়ারের কথা ও আনোয়ার পারভেজের সুরে ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’ আর ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল’।
দেশের বরেণ্য সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমতউল্লাহ আর নেই। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় বারিধারায় নিজ বাসায় শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় তিনি মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। তিনি স্বামী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। স্বামী মেজর (অব.) আবুল বাশার রহমতউল্লাহ ব্যবসায়ী, মেয়ে নাহিদ রহমতউল্লাহ থাকেন লন্ডনে আর ছেলে এ কে এম সায়েফ রহমতউল্লাহ যুক্তরাষ্ট্রের এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করে এখন কানাডায় থাকেন। শাহনাজ রহমতউল্লাহকে ১৯৯২ সালে একুশে পদক দেওয়া হয়।
মেজর (অব.) আবুল বাশার রহমতউল্লাহ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, আজ রোববার বাদ জোহর বারিধারার ৯ নম্বর রোডের পার্ক মসজিদে শাহনাজ রহমতউল্লাহর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বনানীতে সম্মিলিত সামরিক বাহিনীর কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।
দেশাত্মবোধক গান গেয়েও তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন শাহনাজ রহমতউল্লাহ। তাঁর উল্লেখযোগ্য দেশের গান হলো ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’, ‘আমার দেশের মাটির গন্ধে’, ‘আমায় যদি প্রশ্ন করে’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে আমায় বল’।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের দাপুটে সময় পার করেছেন শাহনাজ রহমতউল্লাহ। অসাধারণ গায়কির কারণে নিজেকে চলচ্চিত্রের গানে অপরিহার্য করে তুলেছিলেন শাহনাজ রহমতউল্লাহ। ‘অধিকার’ ছবিতে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের কথা ও আলী হোসেনের সুরে তিনি গেয়েছিলেন ‘কোন লজ্জায় ফুল সুন্দর হলো’। ১৯৯০ সালে ‘ছুটির ফাঁদে’ ছবির ‘সাগরের সৈকতে কে যেন ডাকে আয়’ গানটির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা গায়িকার সম্মান ওঠে তার হাতে।
শাহনাজ রহমতউল্লাহর গাওয়া কালজয়ী গানের তালিকায় রয়েছে ‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়’, ‘ফুলের কানে ভ্রমর এসে’ (পিচ ঢালা পথ), ‘ওই ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায়’, ‘পারি না ভুলে যেতে’ (সাক্ষী), ‘যেভাবে বাঁচি বেঁচে তো আছি’, ‘আমি সাত সাগরের ওপার হতে’ (কত যে মিনতি), ‘শোনেন শোনেন জাহাঁপনা’ (সাত ভাই চম্পা), ‘কে যেন সোনার কাঠি ছোঁয়ায় প্রাণে’, ‘আমি যে কেবল বলে তুমি’ (আগন্তুক), ‘একটু সময় দিলে না হয়’ (সূর্য ওঠার আগে), ‘স্বপ্নের চেয়ে সুন্দর কিছু নেই’, ‘আবার কখন কবে দেখা হবে’, ‘যদি চোখের দৃষ্টি দিয়ে চোখ বাঁধা যায়’, ‘তোমার আগুনে পোড়ানো এ দুটি চোখে’, ‘তুমি কি সেই তুমি’, ‘ও যার চোখ নাই’ (তাসের ঘর), ‘ঘুম ঘুম ঘুম চোখে’ (ঘুড্ডি), ‘আমি তো আমার গল্প বলেছি’, ‘বন্ধুরে তোর মন পাইলাম না’, ‘খোলা জানালায় চেয়ে দেখি তুমি আসছ’, ‘একটি কুসুম তুলে নিয়েছি’, ‘আমায় তুমি ডাক দিলে কে’, ‘ওই আকাশ ঘিরে সন্ধ্যা নামে’, ‘আমার ছোট্ট ভাইটি মায়ায় ভরা মুখটি’, ‘আষাঢ় শ্রাবণ এলে নেই তো সংশয়’, ‘বারোটি বছর পরে’, ‘আরও কিছু দাও না দুঃখ আমায়’, ‘আমি ওই মনে মন দিয়েছি যখন’, ‘আমার সাজানো বাগানের আঙিনায়’, ‘দিগন্তজোড়া মাঠ’, ‘তোমার আলোর বৃন্তে’, ‘এই জীবনের মঞ্চে মোরা’ গানগুলো।