করোনায় স্থবির সংগীতাঙ্গন। প্রভাব পড়েছে সংগীতশিল্পীদের জীবনযাত্রায়। এ থেকে মুক্ত নন নাজমুন মুনিরা ন্যানসিও। ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে বাসায় স্বেচ্ছাবন্দী হয়ে কাটছে তাঁর সময়। কথা হলো তাঁর সঙ্গে।
ঢাকায় নাকি ময়মনসিংহে?
ঢাকাতেই আছি। এক বছর ধরে আমি ঢাকাতেই। ময়মনসিংহে ছিলাম। আমার শো ছিল। তার আগেই ঢাকায় চলে আসি।
এখন কি কোয়ারেন্টিনে আছেন?
অবশ্যই। ১৯ মার্চ থেকে একদম বাসায়।
আপনারও শো বাতিল হয়েছে নিশ্চয়ই?
১৩ তারিখে একটা শো ছিল। ১৯ তারিখে একটা শো ছিল। এগুলো বাতিল হয়েছে। ২১ তারিখে অস্ট্রেলিয়াতে চলে যাওয়ার কথা ছিল। এটা বাতিল হয়েছে। ৪ এপ্রিল আমার চলে যাওয়ার কথা ছিল কানাডায়। ২৪ এপ্রিল ফেরার কথা ছিল। এটা বাতিল হয়েছে। রোজার আগে পর্যন্ত অনেকগুলো শো ছিল। সব বাতিল হয়ে গেছে।
শোয়ের বাইরে রেকর্ডিং বাতিল হয়েছে?
বেশ কিছু রেকর্ডিং হওয়ার কথা ছিল। সেগুলোও বন্ধ আছে। আমি স্টেজ শো কম করি। রেকর্ডিং বেশি করি। ঈদের অনেকগুলো কাজ করার চিন্তা ছিল। সেগুলো হয়তো আর করা হবে না।
শুনলাম আপনি রেডিওতে আর জে হিসেবে জয়েন করেছেন?
ক্যাপিটাল এফএমে আরজে হিসেবে জয়েন করেছি। গত ২৫ মার্চ থেকে ক্যাপিটাল এফএমে আমার লাইভ শো হওয়ার কথা ছিল। ওটা করতে পারলাম না। যখন অস্ট্রেলিয়া ট্যুর বাতিল হলো তখন ওদের বললাম যে ২৫ তারিখ থেকে প্রোগ্রামটা শুরু করি। প্রতি সপ্তাহের বুধবার এটা যাবে।
করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আপনার জীবনে?
শুধু আমার কেন, প্রত্যেকের জীবনেই এর প্রভাব পড়ছে। আমরা পরিবারে চারজন মানুষ। আমরা সহজে কোয়ারেন্টিনে থাকতে পারব। সাধারণ মানুষ যাঁরা শ্রমজীবী, তাঁরা কীভবে দিনের পর দিন কোয়ারেন্টিনে থাকবেন? ডাল, চাল বিতরণ চলছে ঠিক আছে। কিন্তু এভাবে কত দিন করা সম্ভব হবে? আমাদের খুব ছোট একটা দেশ। অনেক কিছুর অভাব আমাদের। আমরা কীভাবে সারভাইব করব বুঝতে পারছি না।
আপনি একজন উদ্যোক্তা। সেই জায়গা থেকে অবস্থা কেমন দেখছেন?
আমার পরিচিত কিছু ব্যবসায়ী আছেন। তাঁদের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। তাঁরা বলছেন, বিভিন্ন জায়গায় লগ্নি করা আছে। দীর্ঘমেয়াদি হলে সমস্যায় পড়ে যাব। ময়মনসিংহে আমার একটা বিউটি পারলার আছে। ১৭ তারিখে ওদের ছুটি দিয়ে দিয়েছি। ওরা প্রতিষ্ঠানে থাকলে লোকজন আসবে। সেটার একটা স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে। পারলার সাময়িক বন্ধ করেছি। ৭ জন কর্মী আছে। যত দিনই বন্ধ থাকুক বেতন ঠিক দিয়ে যেতে হবে। আবার যেহুতু ভাড়া নিয়ে পারলার চালাই, সেক্ষেত্রে ভাড়াও চালিয়ে যেতে হবে। এভাবে বেশি দিন চললে অনেক বেকাদায় পড়ে যাবো। আয় না হলে, ব্যয় মেটাবো কীভাবে।
শুনলাম নতুন গাড়িও কিনেছেন।
ফেব্রুয়ারিতে আমি একটা গাড়ি কিনেছি। আমার স্বামী অর্ধেকটা টাকা দিল। আমি অর্ধেকটা দিলাম। তখন কি জানতাম এমন একটা বিপদ চলে আসবে! সাধারণত রমজান মাস আসার আগের তিনমাস আমরা চেষ্টা করি কাজকর্ম গুছিয়ে নিতে। কেননা রোজার মাসে তেমন কাজ থাকে না। অথচ তখনো সংসার চালাতে হয়। যদিও আমি শুধু স্টেজ নির্ভর শিল্পী না, নতুন নতুন গান রেকর্ডিংও হয় আমার। কিন্তু অনেক শিল্পী আছে, যাঁরা শুধু স্টেজ নির্ভর। করোনায় সবই অনিশ্চিত। বড় একটা ধাক্কা খেলাম। তবু নিজের জন্য তেমন ভাবি না। আমাদের হয়তো চলে যাবে। কিন্তু এই সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি, দেশের সাধারণ মানুষের কী হবে, এই ভেবে খুব অস্থির হয়ে যাই।