স্বামী বরেণ্য চিত্রনায়ক আলমগীরকে নিয়ে এবার জন্মদিন নিরিবিলিভাবে পালন করতে চেয়েছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। তাই তো জন্মদিনের আগেই কলকাতায় যান আলমগীর ও রুনা লায়লা। চাইলেই কি মহাতারকার জন্মদিন নিরিবিলিভাবে পালন করা যায়! রুনা লায়লার ক্ষেত্রে তা মোটেও সম্ভব হলো না। কলকাতার যে হোটেলে রুনা লায়লা উঠেছেন, সেই হোটেলেই স্ত্রীসহ উঠেছেন ভারতের জনপ্রিয় গায়ক ও সংগীত পরিচালক বাপ্পি লাহিড়ী। একই হোটেলে রুনা লায়লার থাকার খবর জানতে পেরে ফোনে কথা বলেন বাপ্পি লাহিড়ী। তারপর দুজন দেখা করলেন। ফুল আর কেক নিয়ে হোটেলে রুনার কক্ষে হাজির বাপ্পি লাহিড়ী। এ সময় বাপ্পি লাহিড়ীর সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী। ভিনদেশে জন্মদিনের আয়োজনে বন্ধুকে কাছে পেয়ে আনন্দিত রুনা লায়লা। জন্মদিনে এটা দারুণ সারপ্রাইজ ছিল বলেও প্রথম আলোকে জানান রুনা লায়লা।
১৬ নভেম্বর বিকেলের ফ্লাইটে স্বামীসহ কলকাতায় যান রুনা লায়লা। যাওয়ার আগে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘গোয়িং টু মাই সেকেন্ড হোম, কলকাতা টু সেলিব্রেট মাই বার্থডে’। ১৭ নভেম্বর ছিল রুনা লায়লার ৬৭তম জন্মদিন। ৫৩ বছরের সংগীতজীবনে হাতে গোনা কয়েকবার দেশের বাইরে জন্মদিন পালন করেছেন রুনা লায়লা। এর মধ্যে ২০১৫ সালে লন্ডনে আর এর আগে দুবার ভারতে। রুনা লায়লা বলেন, ‘আমি বরাবরই জন্মদিনটা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কাটাতে পছন্দ করি। তবে এবার দেশের বাইরে হওয়ার কারণে স্বামী ছাড়া পরিবারের অন্যদের মিস করেছি।’
কলকাতা থেকে আজ রোববার সকালে রুনা লায়লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাপ্পি পরিবার নিয়ে কলকাতায় এসেছিল। যখন জানতে পেরেছে আমরাও একই হোটেলে, ফোন করল। ফুল নিয়ে এল। কেক কাটলাম সবাই মিলে।’
আশির দশকে ‘সুপার রুনা’ অ্যালবামের কাজের সূত্রে রুনা লায়লার সঙ্গে বাপ্পি লাহিড়ীর পরিচয়। সেই থেকে এখনো তাঁদের সম্পর্ক অটুট আছে। পেশাগত কারণে সম্পর্কের শুরু হলেও অনেক আগেই তা পারিবারিক সম্পর্কে রূপ নিয়েছে। রুনা লায়লার মেয়ের সঙ্গেও নাকি বাপ্পি লাহিড়ীর মেয়ের দারুণ বন্ধুত্ব। গতকাল শনিবার রাতে রুনা লায়লা ও আলমগীর রাতের খাবার খেয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। ওই সময় তাঁদের হোটেল কক্ষে স্ত্রীসহ আসেন বাপ্পি লাহিড়ী।
রুনা লায়লা বলেন, ‘কেক কাটার পর আমরা চারজন মিলে দারুণ আড্ডা দিই। বছরখানেক পর আমাদের দেখা হয়েছে। মাঝেমধ্যে লন্ডনে থাকলে ফোনে আমাদের যোগাযোগ হয়, কথা হয়। তবে দেখা হয়নি অনেক দিন। জন্মদিনে বন্ধুকে এভাবে পেয়ে যাব ভাবিনি। ভালোই কেটেছে সময়টা। ওর স্ত্রী ছিল। আলমগীর সাহেবও ছিলেন। পুরোনো দিনের কত কথা, “সুপার রুনা”র রেকর্ডিং নিয়ে স্মৃতিচারণা করি। এখনকার গান নিয়েও আমরা কথা বলেছি। সব মিলিয়ে দুই পরিবারের দারুণ সময় কেটেছে।’
এদিকে জন্মদিন উপলক্ষে চার দিন ধরে অসংখ্য শুভেচ্ছা বার্তা পেয়েছেন রুনা লায়লা। ভক্ত, শুভাকাঙ্ক্ষী, বন্ধু আর পরিবারের সদস্যরা তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সবার ভালোবাসায় অভিভূত রুনা লায়লা। তিনি বলেন, ‘এমন ভালোবাসার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমি অনেক বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে গেছি। খুব আনন্দিত হয়েছি। এই জীবনে শিল্পী হিসেবে শুধু নয়, একজন মানুষ হিসেবে এত মানুষের দোয়া আর ভালোবাসা পেয়েছি, এর চেয়ে বড় পাওয়া বোধ হয় আর হয় না। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা, আমার জন্য দোয়া করবেন, সুস্থ থেকে ভবিষ্যতে যেন আরও ভালো ভালো গান উপহার দিতে পারি, সবার জন্য গাইতে পারি আর দেশের নাম উজ্জ্বল করতে পারি।’
উর্দু ছবি ‘জুগনু’তে রুনা লায়লা গান গেয়েছেন ১৯৬৫ সালের জুন মাসে। এরপর তিনি গেয়েছেন হাজার দশেক গান। অর্জন করেছে স্বাধীনতা পদক। দেশ-বিদেশে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ছয়বার। পাঁচ দশকের দীর্ঘ সংগীতজীবনে ১৭টি ভাষায় ১০ হাজারেরও বেশি গান করেছেন রুনা লায়লা। অর্জন করেছেন উপমহাদেশের কোটি মানুষের ভালোবাসা। বাংলা ছাড়া রুনা লায়লা উর্দু, হিন্দি আর ইংরেজি ভাষা জানেন। তবে বাংলা, হিন্দি, উর্দু, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, গুজরাটি, পশতু, বেলুচি, আরবি, পারসিয়ান, মালয়, নেপালি, জাপানি, ইতালিয়ান, স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ ও ইংরেজি ভাষায় গান করেছেন তিনি।