জন্মদিনে জানা–অজানা ফেরদৌসী রহমান

২৮ জুন ২০২২। আজ ৮২ বছরে দেশের প্রথিতযশা সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমান। পল্লিগীতির সম্রাটখ্যাত আব্বাসউদ্দীনকন্যার সংগীতের সঙ্গে বসবাস খুব ছোটবেলা থেকে। করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ঘর থেকে খুব একটা বের হন না তিনি। বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘এসো গান শিখি’ অনুষ্ঠানের কয়েকটি পর্বের শুটিং করেছেন শুধু। জন্মদিনে একনজরে ঘুরে আসা যাক বরেণ্য সংগীতশিল্পীর পরিবার ও জীবনের নানা সময় থেকে...

ফেরদৌসী রহমানের বাড়িতে জন্মদিন সেভাবে উদ্‌যাপন করা হতো না। তিনি বলেন, ‘একমাত্র আমার বড় ভাই (সাবেক প্রধান বিচারপতি) মোস্তফা কামালের জন্মদিন হইচই করে উদ্‌যাপন করা হতো। গান হতো, কবিতা হতো, খাওয়াদাওয়া হতো। আমার জন্মদিন সেদিনই উদ্‌যাপন করা হয় ১৯৫৬ সালে যেদিন আমি মেট্রিকে স্ট্যান্ড করলাম, সারা দেশে মেয়েদের মধ্যে প্রথম হলাম। আমার রেজাল্ট বেরোল ২৬ জুন। ২৮ জুন ছিল আমার জন্মদিন।’
ছবি : প্রথম আলো
প্রকৌশলী স্বামী রেজাউর রহমানের সঙ্গে সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমান। ফেরদৌসী রহমানের দুই ছেলে। একজন রুবাইয়াত রহমান, যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে থাকেন, ফেসবুকে চাকরি করেন। রুবাইয়াতের তিন ছেলেমেয়ে। আর ছোট ছেলে রাজিন রহমান, লন্ডনে থাকেন তিনিও ওখানকার একটা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। রাজিনের দুই মেয়ে। আর ফেরদৌসী রহমানের স্বামী রেজাউর রহমান এখন অবসরজীবন যাপন করছেন। তিনি ছিলেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। তাঁর একটা ইন্ডাস্ট্রি ছিল, ফিল্টার তৈরির। দেশের একমাত্র ফিল্টার তৈরির প্রতিষ্ঠান। ছেলেরা বাইরে চলে যাওয়ার পর ফ্যাক্টরিও বিক্রি করে দেওয়া হয়।
ফেরদৌসী রহমান বেশ কিছুদিন ধরে আত্মজীবনী লিখছেন। এখনো লেখার কাজ শেষ হয়নি। জানালেন, মাঝে অনেক দিন লেখার কাজ ঠিকমতো করতে পারেননি। খুব শিগগির আবার লেখালেখির কাজ শুরু করবেন তিনি। বললেন, ‘এই বইয়ে আমার জন্ম থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত যা কিছু করেছি, যা যা করিনি, দুঃখ-বেদনা, সবকিছুই পাওয়া যাবে।’
অবসরে গান শোনেন ফেরদৌসী রহমান। নতুন শিল্পীদের যাঁরা টেলিভিশনে গাইতে আসেন, সবার গানই কমবেশি শোনা হয় তাঁর। উচ্চাঙ্গসংগীতের প্রতি একটা দুর্বলতা আছে বলে কারও কণ্ঠে উচ্চাঙ্গসংগীত শুনলে মনটা নাকি ওদিকেই চলে যায়। খুব শুনতে ইচ্ছা করে। উচ্চাঙ্গসংগীতের প্রচুর রেকর্ড ও সিডিও তাঁর কাছে আছে। ছবি: সংগৃহীত৫. ৮০ বছর পার করা বরেণ্য শিল্পী ফেরদৌসী রহমান জীবনকে নিয়ে অতটা স্বপ্ন দেখেননি। তবে তাঁকে নিয়ে যিনি বেশি স্বপ্ন দেখেছেন, তিনি তাঁর আব্বা। তিনি চেয়েছিলেন, মেয়ে সিএসপি অফিসার হবেন, পড়াশোনায় তুখোড় হবেন। ভালো স্কুলে পাঠিয়েছেন, ভালো ওস্তাদ রেখেছেন, গানেও তুখোড় হবেন। একটা মাত্র মেয়ে, তাঁকে নিয়ে বাবার প্রচুর স্বপ্ন ছিল
করোনার এই সময়ে বেশির ভাগ সময়ে মুঠোফোনে সময় কাটে ফেরদৌসী রহমানের। তিনি বলেন, ‘কোনো দিন ভাবিনি, জীবনে এমন দিন দেখতে হবে। জীবনের শেষের দিনগুলো একটু কষ্টে কাটছে মনে করছি। তারপরও ভালো আছি। বই পড়ি, গান শুনি, লেখালেখি করি। তবে মনোযোগ দিতে পারি না।’
করোনায় ঘর থেকে খুব একটা বের না হলেও এসেছিলেন মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের আজীবন সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করতে। গত ২৭ মে ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেম মিলনায়তনে তিনি রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমীনের হাতে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার তুলে দেন।
১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাতটায় ফেরদৌসী রহমানের এ গানের পরিবেশনা দিয়েই শুরু হয় যাত্রা বর্তমান বাংলাদেশ টেলিভিশনের
করোনার এই সময়ে একমাত্র শুটিং করেছেন ‘এসো গান শিখি’ অনুষ্ঠানের। বাংলাদেশ টেলিভিশন মিলনায়তনে ‘এসো গান শিখি’ অনুষ্ঠানে রেকর্ডিংয়ে ফেরদৌসী রহমান।
মা লুৎফুন্নেসা আব্বাসের সঙ্গে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ১৯৯৮ সালে মেয়ে ফেরদৌসী রহমান
স্বামী রেজাউর রহমান, বড় ছেলে রুবাইয়াত রহমান ও তাঁর দুই সন্তানের সঙ্গে ফেরদৌসী রহমান
টেলিভিশনের একটি রিয়েলিটি শোতে প্রধান বিচারক হয়েছিলেন ফেরদৌসী রহমান। তাঁর সঙ্গে বিচারক হিসেবে আরও ছিলেন এন্ড্রু কিশোর, আইয়ুব বাচ্চু ও মেহরীন।
১৯৯৮ সালে আব্বাস উদ্দিন সংগীত একাডেমী কার্যালয়ে আবদুল লতিফ (বামে), সুধীন দাশ ও ফেরদৌসী রহমান
২০১৪ সালে ছোট ছেলে রাজিন রহমান ও তাঁর স্ত্রী-কন্যার সঙ্গে ফেরদৌসী রহমান ও রেজাউর রহমান
ভাই মোস্তফা জামান আব্বাসীর মেয়ে সামিরা আব্বাসীর সঙ্গে ফেরদৌসী রহমান, ২০১০ সালে
১৯৬৬ সালের ২৬ অক্টোবর হোটেল শাহবাগে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে) প্রকৌশলী রেজাউর রহমানের সঙ্গে সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমানের বিয়ের অনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়
বড় ভাই সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামালের মেয়ে সংগীতশিল্পী নাশিদ কামালের সঙ্গে ফেরদৌসী রহমান