চঞ্চল চৌধুরী ও মেহের আফরোজ শাওনের গাওয়া ‘যুবতী রাধে’ গানটি প্রকাশের পরপরই তৈরি হয় জটিলতা। ২০২০ সালে প্রকাশিত চঞ্চল ও শাওনের গাওয়া এই গান সরলপুর ব্যান্ড নিজেদের বলে দাবি করে। ২০১০ সালে তারা ময়মনসিংহ ও শেরপুরে কনসার্টে পরিবেশন করে। গানটি নিজেদের দলের সদস্যের লেখা ও সুর করা দাবি করে মারজিয়া তুরিন তাঁর ফেসবুকে লেখেন, গানটি তাঁরা লেখা শুরু করেন ২০০৬ বা ২০০৭ সাল থেকে। তৈরি হয় জটিলতা। এই জটিলতা নিরসন গড়ায় কপিরাইট অফিস পর্যন্ত। কপিরাইট নিবন্ধন কর্মকর্তা জাফর রাজা চৌধুরী তখনই প্রথম আলোকে বলেন, যেহেতু গানটির কপিরাইট ইস্যুতে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, তাই আমরা তথ্য-উপাত্ত আবার নতুন করে যাচাই-বাছাই করব। এরপর যদি এটি লোকগান হিসেবেই প্রমাণিত হয়, তাহলে যে কেউ তা গাওয়ার অধিকার রাখবে। আর যদি সরলপুর ব্যান্ডের হয়, অধিকার তাদেরই থাকবে।’ অবশেষে গানটি লোকগান হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। সরলপুর ব্যান্ডের দাবি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
‘মৈমনসিংহ গীতিকা’র বহুল জনপ্রিয় গান ‘সর্বত মঙ্গল রাধে’র বেশ কয়েকটি লাইন চুরি করে ‘যুবতী রাধে’ নামের একটি গানকে নিজেদের বলে দাবি করেছে সরলপুর ব্যান্ড। অবশেষে তাদের কপিরাইট স্বত্ব বাতিল করা হয়েছে। বুধবার রাতে কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ‘যুবতী রাধে’ গানের সঙ্গে ‘সর্বত মঙ্গল রাধে’র লাইন জুড়ে দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সরলপুর ব্যান্ডের কপিরাইট স্বত্ব বাতিল করা হয়েছে।
২০২০ সালে আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের পৃষ্ঠপোষকতায় ও পার্থ বড়ুয়ায় সংগীত পরিচালনায় ‘সর্বত মঙ্গল রাধে’ প্রকাশের পর তাদের বিরুদ্ধে কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে সরলপুর ব্যান্ড। তাদের অভিযোগ ছিল, ২০১৮ সালের জুনে ‘যুবতী রাধে’ শিরোনামে গানের জন্য সরলপুর ব্যান্ডকে কপিরাইট সনদ দেয় বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস। সেই গানের কথা ও সুর হুবহু রেখে সরলপুরের অনুমতি ছাড়াই ‘সর্বত মঙ্গল রাধে’ শিরোনামে গানটি প্রকাশ করেছে আইপিডিসি। সরলপুর ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ভোকালিস্ট ও গিটারিস্ট তারিকুল ইসলাম তপনকে ‘যুবতী রাধে’ গানের গীতিকার ও সুরকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল কপিরাইট অফিস। পরে এ নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে কপিরাইট অফিস বিষয়টি তদন্ত শুরু করে। বাংলা একাডেমি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগে চিঠি দেয় তারা। সেখান থেকে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, সরলপুর ব্যান্ডই গানটি চুরি করেছে।
কপিরাইট রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিটি বিভাগ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, গানটিতে “মৈমনসিংহ গীতিকা”র জনপ্রিয় গান থেকে হুবহু বেশ কয়েকটি লাইন কপি করা হয়েছে। বিমল কুমার মুখোপাধ্যায় রচিত “গ্রামের ছড়া” বইটির একটি ছড়া থেকেও প্রমাণিত হয়েছে যে সরলপুর ব্যান্ড “যুবতী রাধে” গানের ৩২ লাইনের মধ্যে ১২ লাইন হুবহু কপি করেছে। বাকি ৫টি লাইনে এমন কিছু শব্দ তারা যোগ করেছে, যা ওই আসল গানটির ভাব ও অর্থের সঙ্গে মিলে যায়। আশুতোষ মুখার্জি রচিত একটি বইয়েও “তুমি হও যমুনা রাধে” গানের সঙ্গেও “যুবতী রাধে” গানের মিল পাওয়া যায়।’
জাফর রাজা চৌধুরী আরও বলেন, ‘এই চৌর্যবৃত্তির অপরাধে “যুবতী রাধে” গানটির স্বত্ব সরলপুর ব্যান্ডের আর থাকছে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।’ তিনি বলেন, সরলপুর ব্যান্ড কপিরাইট আইনের ৮৮ ও ৮৯ ধারা ভঙ করেছে। নিয়ম অনুযায়ী, তাদের বিরুদ্ধে অর্থদণ্ড আর শাস্তির বিধানও ছিল। কিন্তু এ বিষয়ে যেহেতু কেউ দাবি জানায়নি। তাই আমরা বিধান দিতে পারি না।
কপিরাইট আইন ভাঙলে সর্বোচ্চ ৪ লাখ টাকা ও সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং সর্বোচ্চ ২ বছরের জেল ও সর্বনিম্ন ৬ মাসের জেলের বিধান রয়েছে। এর আগে ‘যুবতী রাধে’ গানকে ‘সংগৃহীত’ বলে উল্লেখ করে কণ্ঠশিল্পী সুমি মির্জা লেজার ভিশনের ব্যানারে ইউটিউবে প্রকাশ করেছিলেন। তখন কপিরাইট অফিসে দুই পক্ষের শুনানিতে সুমি মির্জা গানটিকে ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’ পালা বলে দাবি করলেও তার সত্যতা না পাওয়ায় সরলপুরকে কপিরাইট সনদ প্রদান করে কপিরাইট অফিস। পরে গানটি নিয়ে সুমি মির্জার সঙ্গে সরলপুর ব্যান্ডের দ্বন্দ্ব আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
আইপিডিসির পৃষ্ঠপোষকতায় ‘যুবতী রাধে’ গানটি চঞ্চল চৌধুরী ও মেহের আফরোজ শাওন কাভার করলে তাঁদেরও সমালোচনা করে সরলপুর ব্যান্ড। এখন তাদের কপিরাইট স্বত্ব বাতিল হওয়ার পর চঞ্চল চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, সত্যের জয় হয়েছে।