গান নয়, কবিতা শোনালেন মিতালি

জন্মদিনে কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের বাসায় তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কেক কাটার পর অভিনয়শিল্পী আফজাল হোসেন ও বাংলাদেশ–ভারতের গুণী সংগীতশিল্পী মিতালি মুখার্জি। ছবি প্রথম আলো
জন্মদিনে কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের বাসায় তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কেক কাটার পর অভিনয়শিল্পী আফজাল হোসেন ও বাংলাদেশ–ভারতের গুণী সংগীতশিল্পী মিতালি মুখার্জি। ছবি প্রথম আলো

পাশাপাশি বসে আছেন দুই অঙ্গনের দুজন গুণী। একজন কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন ও অন্যজন বাংলাদেশ-ভারতের বরেণ্য গায়িকা মিতালি মুখার্জি। যে মিতালিকে সবাই এত দিন গায়িকা হিসেবে চিনেছেন, তাঁকে আজ দেখা গেল একেবারেই অন্য একরূপে। গান নয়, জনপ্রিয় এই গায়িকা একের পর এক কবিতা আবৃত্তি করে গেলেন। পাশে বসে মন্ত্রমুগ্ধের মতো এসব কবিতা শুনছিলেন রাবেয়া খাতুন।

গতকাল বুধবার রাতে কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের বনানীর বাসায় এই দৃশ্য দেখা গেল। প্রিয় মানুষের জন্মদিনে তাঁকে চমকে দিতে গতকাল বিকেলেই মুম্বাই থেকে ঢাকায় উড়ে আসেন মিতালি মুখার্জি। জীবনের বিশেষ দিনে রাবেয়া খাতুনও তাঁর পছন্দের একজন শিল্পীর এমন উপস্থিতিতে খুশি হন।

ময়মনসিংহের মেয়ে মিতালি মুখার্জি মুম্বাইয়ে স্থায়ীভাবে আবাস গড়েছেন। তবে বিশেষ দিবসে মাঝেমধ্যে তাঁর বাংলাদেশে আসা হয়। বছর খানেক আগে চ্যানেল আইয়ের গানের রিয়্যালিটি শোতে যুক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশে তাঁরা যাওয়া-আসাটা বাড়তে থাকে। চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগরের মাধ্যমে তাঁর পরিবারের সবার সঙ্গে একটা চমৎকার সম্পর্ক গড়ে ওঠে মিতালির। সম্পর্কের সূত্র ধরে ফরিদুর রেজা সাগরের মা কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনকে খালাম্মা বলে সম্বোধন করেন মিতালি।

কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন আজ ২৭ ডিসেম্বর ৮৪ বছরে পা দিলেন। কথাসাহিত্যিক হিসেবে বেশি পরিচিত হলেও রাবেয়া খাতুন একসময় শিক্ষকতা করেছেন। সাংবাদিকতার সঙ্গেও দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন। ইত্তেফাক, সিনেমা পত্রিকা ছাড়াও তাঁর সম্পাদনায় পঞ্চাশের দশকে বের হতো অঙ্গনা নামের একটি মহিলা মাসিক পত্রিকা। তাঁর প্রকাশিত পুস্তকের সংখ্যা শতাধিক। সাহিত্যচর্চার জন্য পুরস্কার পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার ইত্যাদি।

মিতালি মুখার্জি যখন রাবেয়া খাতুনকে কবিতা পড়ে শোনাচ্ছিলেন, তখন একটু দূর থেকে তা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিলেন ফরিদুর রেজা সাগর, গুণী অভিনয়শিল্পী আফজাল হোসেন, রন্ধনশিল্পী কেকা ফেরদৌসি, শিশুসাহিত্যিক আমীরুল ইসলাম ও এ প্রজন্মের সংগীতশিল্পী কোনাল।

সবাই মিতালি মুখার্জির এমন রূপে আবির্ভূত হওয়ায় মুগ্ধতা প্রকাশ করেন। কবিতা পাঠ শেষে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা হয় মিতালি মুখার্জির। জানতে চাইলাম, কবে থেকে কবিতাচর্চার সঙ্গে আছেন?

জন্মদিনে কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনকে তাঁর বাসায় কবিতা শোনাচ্ছেন বাংলাদেশ ও ভারতের জনপ্রিয় গায়িকা মিতালি মুখার্জি। ছবি প্রথম আলো

মিতালি মুখার্জি বললেন, ‘আমি যখন খুবই ছোট, তখন আমাকে নাচ আর কবিতা আবৃত্তি শেখানো হয়েছিল। আমার পরিষ্কার মনে আছে, কাজী নজরুল ইসলামের “খুকী ও কাঠ্‌বেরালি” কবিতাটি আমাকে প্রায় পড়তে হতো। আমি যখন কবিতা পড়তাম, আমার মা আর দিদিকে অনেক কিছু ধরিয়ে দিতেন। গানবাজনার পাশাপাশি আমার বাবাও খুব ভালো কবিতা আবৃত্তি করতেন। আমাদের পরিবারের মধ্যে সবার ভাব আদান-প্রদান হতো কবিতার লাইন দিয়ে। তাই গানের পাশাপাশি কবিতাও আমার আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। বিষয়টি বাংলাদেশের কেউ এত দিন জানত না, আজ জেনে গেল আরকি।’

প্রিয় মানুষ রাবেয়া খাতুনকে বিশেষ দিনে কবিতা শোনাতে পেরে খুশি মিতালি মুখার্জিও। তিনি বলেন, ‘এবারের জন্মদিনে আমি তাঁর (রাবেয়া খাতুন) সান্নিধ্যে আসার আগে অনেকগুলো উপলব্ধি কাজ করেছে। তাই এখানকার কাউকে কিছু না জানিয়েই মুম্বাই থেকে ছুটে আসি, আমাকে দেখে খালাম্মাসহ সবাই যে খুশি হয়েছেন—এটাই আমাকে অনেক বেশি আনন্দ দিয়েছে।’

কথায় কথায় গায়িকা মিতালি মুখার্জি জানালেন তাঁর কয়েকজন প্রিয় কবির কথা। তাঁদের মধ্যে আছেন কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শামসুর রাহমান, হেলাল হাফিজ, জয় গোস্বামী, শুভ দাশগুপ্ত ও শ্রীজাত ব্যানার্জির কবিতা প্রায়ই পড়েন। প্রিয় কবিদের কবিতা থেকে কিছু লাইন তিনি লিখে রাখেন তাঁরা দুটি খাতায়।

রাবেয়া খাতুনের জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল রাতে তাঁর বনানীর বাড়িতে একেবারে ঘরোয়া আয়োজনে কেক কাটার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে পরিবারের পরিবারের অন্যদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মিতালি মুখার্জি। কবিতার পাশাপাশি গান গেয়েও শোনান তিনি।