আরমান খানের সুরেই মমতাজ গেয়েছিলেন ‘নান্টু ঘটক’ গানটি
আরমান খানের সুরেই মমতাজ গেয়েছিলেন ‘নান্টু ঘটক’ গানটি

কোথায় আছেন, কেমন আছেন

কোথায় মমতাজের সেই ‘আগুনের গোলা’

প্রমিথিউস ব্যান্ডের বিপ্লবের গাওয়া ‘চান্দের বাতির কসম দিয়া’, আর্ক ব্যান্ডের হাসানের কণ্ঠে ‘শীত নয় গ্রীষ্ম নয় এসেছে বসন্ত’, ‘লাল বন্ধু নীল বন্ধু’ গানগুলোর সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন আরমান খান। এ রকম বহু গানের সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন তিনি, যেগুলো তখনকার দিনের ‘ভাইরাল’। হাটে-মাঠে-ঘাটে সারাক্ষণ বাজতে শোনা যেত গানগুলো। সেই মিউজিশিয়ান এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন?

‘পোলা তো নয় যেন আগুনের গোলা’! মঞ্চে উঠলেই হলো। মমতাজের কাছে গানটির অনুরোধ আসবেই। দারুণ জনপ্রিয়তা পাওয়া ‘নান্টু ঘটক’ গানের সেই ‘আগুনের গোলা’, মানে গানটির গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক আরমান খান সংগীতাঙ্গন লাপাত্তা।

প্রমিথিউস ব্যান্ডের বিপ্লবের গাওয়া ‘চান্দের বাতির কসম দিয়া’, আর্ক ব্যান্ডের হাসানের কণ্ঠে ‘শীত নয় গ্রীষ্ম নয় এসেছে বসন্ত’, ‘লাল বন্ধু নীল বন্ধু’ গানগুলোর সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন আরমান খান। এ রকম বহু গানের সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন তিনি, যেগুলো তখনকার দিনের ‘ভাইরাল’। হাটে-মাঠে-ঘাটে সারাক্ষণ বাজতে শোনা যেত গানগুলো। সেই মিউজিশিয়ান এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন?

আরমান খান ও আইয়ুব বাচ্চু

গানবাজনা প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন আরমান খান। রীতিমতো ‘আত্মগোপন’ করে আছেন সিলেটে। ২০১৩ সালে হোটেল গ্র্যান্ড সুলতানের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ শুরু করে এখন তিনি হোটেলটির সহকারী মহাব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করছেন। মিউজিক ছেড়ে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘গান করতাম মানুষকে আনন্দ দেওয়ার জন্য, এখনো সেটাই করছি। আমাদের হোটেলে অতিথিরা এসে যেন একটু আনন্দে সময় কাটাতে পারেন, সেই কাজটিই নিষ্ঠার সঙ্গে করে যাচ্ছি।’ এ কাজেরও স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি। গত বছর সিএমও গ্লোবাল আতিথেয়তা খাতের সেরা মহাব্যবস্থাপক হিসেবে পুরস্কৃত করেছে তাঁকে।

একসময় অনেক গানের কাজ আসত আরমান খানের হাতে। অডিও অ্যালবামের পাশাপাশি নাটকের আবহসংগীত ও বাবা সুরকার আলম খানের সঙ্গে চলচ্চিত্রের জন্য সংগীতায়োজনের কাজ করতেন তিনি। ২০০২ থেকে ২০০৫—তিন বছরে প্রায় ২৩টি গানের অ্যালবাম করে ক্লান্ত হয়ে পড়লেন আরমান খান। ক্লান্তির সঙ্গে যোগ হয়েছিল হতাশা। তিনি বলেন, ‘সে সময় বেশ কটি টিভি চ্যানেল এসে পড়ে। নাটকের চাহিদা বেড়ে যায়। পরিচালকেরা ভিড় করতে শুরু করেন আমার স্টুডিওতে। খুব গুরুত্ব দিয়ে সেই কাজগুলো করতে শুরু করেছিলাম। ভীষণ আনন্দ, ভীষণ রোমাঞ্চকর সেই অনুভূতি। নাট্যকার আবদুল্লাহ আল–মামুনের ‘জোয়ারভাটা’ নাটক থেকে শুরু করেছিলাম কাজ।’ তারপর?

কেন সংগীতাঙ্গন ছাড়লেন? আরমান খান বলেন, ‘শিল্পীরা মঞ্চে গান করে অনেক টাকা পেতেন। অথচ আমার সঙ্গে যে গীতিকার ও যন্ত্রশিল্পীরা কাজ করতেন, তাঁদের সম্মানী ও পারিশ্রমিক ছিল খুবই কম। একটা গান লিখে একজন গীতিকার পেতেন আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। এই বঞ্চনা ভালো লাগত না। যন্ত্রশিল্পীদের পারিশ্রমিক বাড়ছিল না। আমার ইচ্ছে করত, তাঁদের হাতে কিছু টাকা বেশি তুলে দিই। কিন্তু পেরে উঠছিলাম না। আবার দেখা যেত, অডিও ক্যাসেট চলত শিল্পীদের নাম আর ছবিতে। অ্যালবামের ভেতরে কলাকুশলীদের ছবি রাখলেও খুব ছোট করে। হঠাৎ এল সিডির যুগ, নতুন বাস্তবতা হিসেবে দেখা দিল পাইরেসি। ছেড়ে দিলাম।’

একটু অবকাশ পেলে আবার গান করতে চান আরমান খান। ইচ্ছে করে, কিন্তু ফুসরত মেলে না। করোনা মহামারিতে একটু সময় পেতেই করে ফেলেছেন একটি ইউটিউব চ্যানেল ‘বেস্ট অ্যান্ড গ্রেট’। এই চ্যানেলে পাওয়া যাবে সংগীতাঙ্গনের বড় মানুষগুলোকে, যাঁরা বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশের সংগীতাঙ্গনকে নিজ হাতে গড়ে তুলেছেন। সত্তর ও আশির দশকের জনপ্রিয় গানগুলোর জন্মকথা নিয়ে আরমান খান আড্ডা দেন তাঁদের সঙ্গে। পাশাপাশি শোনা যায় সেসব গান। এ অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে আরমান খান বলেন, ‘দীর্ঘদিন সংগীত থেকে দূরে ছিলাম। একটু অন্যভাবে এই অঙ্গনকে দেখার সুযোগ হয়েছে। যখন কাজ করতাম, তখন সেটা সম্ভব ছিল না। কোনো কিছু ছেড়ে এলে, সেটাকে একটু অন্যভাবে দেখার সুযোগ পাওয়া যায়। এ সময় মনে হলো দেশের বড় বড় অনেক মিউজিশিয়ান আছেন, তাঁদের নিয়ে কিছু করা যায় কি না। সেই ভাবনা থেকেই এই চ্যানেল।’

‘বেস্ট অ্যান্ড গ্রেট’ চ্যানেলে একজন মিউজিশিয়ানের জীবনসংগ্রাম ও অধ্যবসায়ের গল্প উঠে আসবে। পাশাপাশি জানা যাবে তাঁর সময়ের সংগীতাঙ্গনকে। সংগীত পরিবারের সদস্য হিসেবে একরকম দায়বোধ থেকে কাজটি করে যাবেন বলে জানালেন আরমান খান।