আদালতের কাঠগড়ায় বাবাকে দেখে অপমানে কাঁদলেন মিলা। আদালত থেকে বাসায় ফিরে ‘লজ্জিত হও’ শিরোনামে লিখলেন কবিতা। কবিতাটি নিজের ফেসবুকে পোস্টও করেছেন। প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে আজ রোববার দুপুরে জানালেন, ‘বাবার অপমান সইতে না পেরে কবিতার আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। বললেন, কবিতা এমনই একটা মাধ্যম, যা দিয়ে অনেক কিছুই বলা যায় অকপটে। প্রচণ্ড ক্ষোভ, যন্ত্রণা, লজ্জা, অপমান থেকে কবিতাটি লিখেছি।’
বিয়ের তথ্য গোপনের অভিযোগে সাবেক স্বামী এস এম পারভেজ সানজারির করা মামলায় জামিন পেয়েছেন সংগীতশিল্পী মিলা। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত গত বুধবার এই জামিন মঞ্জুর করেন। আদালত সূত্র বলেছে, এই মামলায় মিলা ও তাঁর বাবা শহীদুল ইসলাম বুধবার ঢাকার সিএমএম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে আদালত তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেন। আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তাপস চন্দ্র দাস।
মিলা বলেন, ‘কবিতাটা আমি লিখতে চাইনি। বাধ্য হয়েছি। বাবাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে দেখে আমি সবচেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছি। বাবাকে প্রতারণার মামলায় জড়ানো হলো! সবকিছু মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু মেয়ের সামনে বাবা অপমানিত হচ্ছে—এ দৃশ্য দেখা অসম্ভব। বলা হয়েছে, আমার আগের বিয়ে গোপন করেছি, যা একেবারে বানোয়াট। আমার আগের বিয়ের খবর সবাই জানত, পারভেজ সানজারিও জানত। সে আমার সঙ্গে ১০ বছর ধরে প্রেম করেছে। সবকিছু জেনেই আমার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছে। এখন প্রতারণার মামলা করেছে!’
মিলা এ–ও বলেন, ‘মামলার বিষয়টা সবাই নানাভাবে লিখছে! আব্বা যখন কাঠগড়ায়, এ দৃশ্য আমি মেনে নিতে পারিনি। মনে হয়েছে, আমার জীবনে এর চেয়ে বাজে দৃশ্য আর কখনো আসেনি, আসবেও না। সানজারিকে আমি আমার সিদ্ধান্তে বিয়ে করেছিলাম, বাবা মেনে নিতে চায়নি। মেয়ের কারণে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েছিলেন। আমার বাবা জীবনের লম্বা সময় দেশের জন্য কাজ করেছেন, নীতিতে আপস করেননি—আজ শুধু মেয়ের কারণে এভাবে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হলো। এ দৃশ্য যে কী কষ্টের, বলে বোঝাতে পারব না (কান্না)।’
সংগীতাঙ্গনে মিলা একটা লম্বা সময় সুন্দরভাবে কাটিয়েছেন। বিয়ের পর তাঁর সংগীতজীবনে একটা বড় ছন্দপতন হয়। মিলা বলেন, ‘আমি একজন আর্টিস্ট, আমার কারণে আব্বা-আম্মা কোথায় গর্ব করবেন, সেখানে কিনা তাঁদের প্রতারক হিসেবে দেখতে হচ্ছে! আমার তো মরে যেতে ইচ্ছে করছিল। ওই সব ক্ষোভ থেকে আমি কবিতা লিখেছি।’
মিলা জানালেন, মামলার পর থেকে তিনি নানা ধরনের চাপের মুখে আছেন। অনেক যন্ত্রণাও সহ্য করছেন। বললেন, ‘আদালতে বাবা যেদিন কাঠগড়ায় দাঁড়ালেন, সেদিন সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে বাবার পা ধরে ক্ষমা চেয়েছি। কেঁদেছি। বলেছি, বাবা আমাকে মাফ করে দাও। আমার মনে হয়েছে, পৃথিবীতে যত দোষ করেছি, এটাই ছিল সবচেয়ে বড় দোষ। বাবাকে কাঠগড়ায় দেখাটা মেয়ে হিসেবে আমার মরে যাওয়ার মতো অবস্থা।’
সাবেক স্বামী পারভেজ সানজারির বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। কয়েক দিন আগে সানজারিও পাল্টা মামলা করেছেন। সব মিলিয়ে জীবন নিয়ে ভালো জটিলতায় আছেন গায়িকা মিলা। ১৩ মার্চ এসব ঘটনা নিয়েই একটি কবিতা লেখেন মিলা, যা পোস্ট করেছেন নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ ও ফ্যান পেজে। বাবাকে উৎসর্গ করে মিলার লেখা এই কবিতার শিরোনাম ‘লজ্জিত হও’। প্রথম কয়েকটি লাইন ‘মিলা নামের ওপর বেঁচে থাকা জীব একটু লজ্জা করো/ যদি হয়ে থাকো মায়ের পেটের দীপ, সংবাদ পাঠে ব্যবহার করো আমার নাম/ ভুলে যেও না আমার পরেই তারা সংযুক্ত করে তোমার নাম।’
বিয়ের তথ্য গোপন করার অভিযোগে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর মিলার বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা করেন পারভেজ সানজারি। মামলাটি আমলে নিয়ে পল্লবী থানাকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। পুলিশ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। গত ২ ফেব্রুয়ারি পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদন আমলে নিয়ে মিলা ও তাঁর বাবাকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেন।
গত বছরের ৫ জুন সংগীতশিল্পী মিলার বিরুদ্ধে অ্যাসিড হামলার অভিযোগে মামলা করেন তাঁর সাবেক স্বামী পারভেজ সানজারির বাবা এস এম নাসির উদ্দিন। অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনের মামলায় মিলাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি হলেন কিম জন পিটার হালদার। ওই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তিনি কারাগারে।
যৌতুক ও নির্যাতনের অভিযোগে ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর সংগীতশিল্পী মিলা তাঁর সাবেক স্বামী পারভেজ সানজারির বিরুদ্ধে মামলা করেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার হন সানজারি। পরে তিনি জামিনে ছাড়া পান। গত বছরের ১১ জুলাই মিলা সানজারির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন।