কাওসার আহমেদ চৌধুরীর লেখা ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’ গানটি অন্য মাত্রায় চলে গেছেন কুমার বিশ্বজিৎ
কাওসার আহমেদ চৌধুরীর লেখা ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’ গানটি অন্য মাত্রায় চলে গেছেন কুমার বিশ্বজিৎ

‘কাওসার আহমেদ চৌধুরী কিন্তু ২০ কোটি মানুষের মধ্যে একজন’

এই জীবনে কাওসার ভাইয়ের কথায় সব মিলিয়ে পাঁচ-সাতটি গান গেয়েছি। লাকী ভাইয়ের (লাকী আখান্দ্‌) সুর—সব মিলিয়ে ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’ গানটি অন্য মাত্রায় চলে গেছে। এগুলো সবার ভাগ্যে হয় না। আমি বলব যে অনেক ভাগ্যবান। কাওসার আহমেদ চৌধুরী এমন একজন গীতিকবি, যিনি বাংলা আধুনিক গানে, স্বাধীনতা-উত্তর যে ধরনের কাব্য-সাহিত্য, অন্ত্যমিলে আমাদের সংগীতকে সমৃদ্ধ করে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। মানুষ মরণশীল, মানুষ চলে যাবে। কিন্তু তাঁদের শূন্যস্থান পূরণ হওয়ার নয়। কারণ, কাওসার ভাইয়ের কথা কখনো আবেগে ভাসিয়েছে, কখনো উপলব্ধিতে নিয়ে গেছে, কখনো দুঃখ-বেদনায় তাঁর গান সবাই আশ্রয় হিসেবে নিয়েছে।
গীতিকার ও গীতিকবির মধ্যে পার্থক্য আছে, যেমনটা গায়ক ও শিল্পীর মধ্যে পার্থক্য।

আমাদের বাংলা গানকে যেভাবে তাঁরা সমৃদ্ধ করেছেন, তাঁদের মধ্যে অবশ্যই কাওসার ভাই অন্যতম। এত বড় শূন্যতা সাংস্কৃতিক অঙ্গনে জানি না কবে পূরণ হবে। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে অ্যালার্মিং মনে হয়। একজন কাওসার আহমেদ চৌধুরী কিন্তু ২০ কোটি মানুষের মধ্যে একজন।

কাওসার আহমেদ চৌধুরী

‘যেখানে সীমান্ত তোমার’ গানটি যখন গাই, একই সময়ে ‘সব কথা বলো তুমি, কিছুই বল না’, এমন কথার একটি গানও গাই। এরপর ‘শ্রীলা, তোমাকে লেখা ৫১টি চিঠি ফিরিয়ে দিলাম’ গানটিও গেয়েছিলাম। যখনই আমি মঞ্চে ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’ গান গাইতে উঠি, প্রতিটি গানের আগে গীতিকার ও সুরকারের নাম বলি। যখনই ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’ গানের কথা বলি, যে আওয়াজটা পাই, তা শিহরিত করার মতো। এমনকি এই গান গাওয়া শুরু করলে আমাকে বেশিক্ষণ গাইতে হয় না। শ্রোতারাই পুরোটা গান। উচ্চ আয়ের মানুষ থেকে নিম্ন আয়ের রিকশাচালকও গানটি পুরোপুরি গান। কাউকে ছোট করে কথাটি বলছি না। বলা এ জন্যই যে গানটির সার্থকতা তুলে ধরা। আবার যদি ভাবি, গানটি কিন্তু সহজ নয়। অনেক কাব্য, সাহিত্য ও অন্ত্যমিল আছে। তারপরও এটি সবার কাছে পৌঁছেছে।

১৯৭৭-৭৮ সালে আজিমপুরের বাসায় কাওসার আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে পরিচয় কুমার বিশ্বজিৎ এর

১৯৭৭-৭৮ সালে চট্টগ্রাম থেকে এসে প্রথম যখন লাকী আখান্দ্‌ ভাইয়ের আজিমপুরের বাসায় গান রেকর্ড করতে যাই, সেখানে প্রথম কাওসার ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয়। ওইবার প্রায় ১৫-২০ দিন লাকী ভাইয়ের বাসায় ছিলাম, আজিমপুর কলোনিতে। কলোনিতে লাকী ভাইয়ের বাসার জানালা থেকে একটি পেয়ারাগাছ দেখা যেত।

এখনো পরিষ্কার মনে আছে, লাকী ভাই বলেছিলেন, ‘বিশ্ব, পেয়ারাগাছটা দেখছ না, এটা নিয়ে কিন্তু একটা বিখ্যাত গান আছে। কাওসার আহমেদের লেখা।’ আমি বললাম, ‘কোনটা, “একটি দুষ্টু ছেলে একটি মিষ্টি মেয়ে, তারা পেয়ারা চুরি করে ধরা পড়েছিল”।’ পেয়ারাগাছ নিয়ে যে এমন একটি গান হতে পারে, ভাবতেই পারি না।

কাওসার আহমেদ চৌধুরী

গান বাংলা চ্যানেলের জন্য যখন ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’ গানটি নতুন করে তৈরি করছিলাম, তখনই শেষবারের মতো কাওসার ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়। তখন কাওসার ভাই অসুস্থ ছিলেন। আরেকটি কথা, কাওসার ভাইয়ের সঙ্গে যখনই দেখা হতো, হাত দেখাতাম।