সংগীত পরিচালক ফরিদ আহমেদের স্ত্রী শিউলি আক্তার করোনায় আক্রান্ত দুই সপ্তাহ হতে চলল। পরিবারের সবার সুরক্ষার কথা ভেবে তিনি বোনের বাসায় চলে যান। কয়েক দিন পরই জানতে পারেন স্বামী ফরিদ আহমেদ কোভিড–১৯ পজিটিভ। নিজের হাতে অসুস্থ স্বামীর সেবা করবেন বলে বোনের বাসা থেকে তিনি চলে আসেন।
শিউলি আক্তারের মতে, তিনিও যেহেতু করোনা পজিটিভ, তাই করোনা পজিটিভ স্বামীর সেবা করতে তাঁর কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘তিনিও পজিটিভ, আমিও পজিটিভ—এই সময়ে আমি ছাড়া তাঁর কে সেবা করবে বলেন?’ এই সময়ে এর বাইরে আর কোনো উপায়ও নেই বলে মনে করছেন তিনি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে স্বামীর সেবার দায়িত্বটি নিজের কাঁধেই তুলে নিলেন ফরিদ আহমেদের স্ত্রী শিউলি আক্তার।
শিউলি আক্তার জানান, তাঁর ভাইবোনেরা দুলাভাইয়ের জন্য বাসা থেকে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি আজ আবার করোনার টেস্ট করতে দিয়েছেন। ফরিদ আহমেদের দুই মেয়ে। দুর্দানা ফরিদ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে এখন একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। ছোট মেয়ে লিয়ানা ফরিদ ঢাকার একটি স্কুলে ক্লাস এইটে পড়ছে। শিউলি আক্তার জানান, বড় মেয়েও বাবাকে দেখতে প্রতিদিনই হাসপাতালে আসছেন। মামার সঙ্গে সঙ্গে বড় মেয়েটা চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলছে, দেখভাল করছেন।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে ছয় দিন ধরে চিকিৎসাধীন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কাপ্রাপ্ত সংগীত পরিচালক ফরিদ আহমেদ। আজ বুধবার তাঁর শারীরিক অবস্থার খবর নিতে ফোন করা হলে স্ত্রী শিউলি আক্তার জানান, উন্নতি–অবনতি সে অর্থে কোনোটিই হয়নি। তাঁর ডায়াবেটিস ওঠানামা করছে। এটা একটু উদ্বেগের কারণ।
কয়েক দিন ভীষণ জ্বর ছিল সুরকার ও সংগীত পরিচালক ফরিদ আহমেদের। খাবারে স্বাদ-গন্ধ কিছুই পাচ্ছিলেন না। তিনবার করোনার পরীক্ষা করানো হয়। প্রথম দুই দফায় নেগেটিভ এলেও তৃতীয়বারে কোভিড-১৯ পজিটিভ ধরা পড়ে। এরপর আর বাসায় রাখা হয়নি তাঁকে। পরিবারের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ২৫ মার্চ রাতে তাঁকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়। এখনো সেখানেই চিকিৎসাধীন তিনি। শিউলি আক্তার বলেন, যদিও একটু কষ্ট হচ্ছে, তারপরও খাওয়াদাওয়া করতে পারছে। কাশি নেই, জ্বরও নেই।
করোনায় ফরিদ আহমেদের ফুসফুস সংক্রমিত হয়েছে। ফুসফুসের ৬০ ভাগ সংক্রমিত হয়েছে বলে জানান স্ত্রী শিউলি আক্তার। শরীরে অক্সিজেন লাগছে এখন ১৫ লিটার করে। আর অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৭-৯৮–এ থাকলেও মাঝেমধ্যে ওঠানামা করে।
অনেক কালজয়ী গানের সুরকার ফরিদ আহমেদ। স্কুলবন্ধু বায়েজীদের কাছে গিটারে তাঁর হাতেখড়ি। এরপর ফিরোজ সাঁইয়ের হাত ধরে পেশাদার সংগীতাঙ্গনে তাঁর পথচলা। ব্যান্ড ‘স্পন্দন’-এ তখন তিনি বেজ গিটার বাজাতেন। ফিরোজ সাঁই ‘স্পন্দন’ ছেড়ে দিলেও তাঁর সঙ্গে থেকেই তিনি গিটার বাজাতেন। লিটন অধিকারী রিন্টুর লেখা ও কুমার বিশ্বজিতের গাওয়া ‘তুমি ছাড়া আমি যেন মরুভূমি’ গানে সুর করে প্রশংসিত হন ফরিদ আহমেদ। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত বহু গানের সুর তৈরি করেছেন তিনি। করেছেন সংগীতায়োজনও।
বিশেষ করে উল্লেখ করতেই হয় হানিফ সংকেতের ‘ইত্যাদি’-এর টাইটেল সং ‘কেউ কেউ অবিরাম চুপি...’, কুমার বিশ্বজিতের ‘মনেরই রাগ অনুরাগ’,‘আমি তোরই সাথে ভাসতে পারি মরণ খেয়ায় একসাথে’, রুনা লায়লার ‘ফেরারী সাইরেন’, রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমীনের কণ্ঠে ‘দলছুট প্রজাপতি’, চ্যানেল আইয়ের ‘আজ জন্মদিন’, ‘খুদে গানরাজ’, ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’, সেরা কণ্ঠ প্রতিযোগিতার থিম সং, সুমী শবনমের জনপ্রিয় গান ‘ললিতা’, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার কণ্ঠে সিনেমার গান ‘তুমি আমার জীবনের গহীনে’সহ আরও অনেক জনপ্রিয় গানের সুরকার তিনি। নূর হোসেন বলাইয়ের ‘নিষ্পত্তি’ চলচ্চিত্রে প্রথম সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন ফরিদ আহমেদ।
২০১৭ সালে সংগীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প অবলম্বনে নির্মিত ‘তুমি রবে নীরবে’ সিনেমায় সংগীত পরিচালনা করে এ পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত এই সিনেমার পরিচালক মাহবুবা ইসলাম। এই সিনেমার আবহ সংগীতের কাজও করেন ফরিদ আহমেদ।