করোনায় মারা গেছেন ওস্তাদ শাহাদাত হোসেন খান

ওস্তাদ শাহাদাত হোসেন খান
ছবি: ফেসবুক থেকে

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত সরোদবাদক ওস্তাদ শাহাদাত হোসেন খান মারা গেছেন। গতকাল শনিবার রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই মেয়েসহ অসংখ্যক শিক্ষার্থী, ভক্ত-অনুরাগী রেখে গেছেন। প্রথম আলোকে ওস্তাদ শাহাদাত হোসেন খানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ। মামুনুর রশীদ জানান, শাহাদাত হোসেনকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী করস্থানে তাঁর বাবার কবরের পাশে দাফনের কথা ভাবছে পরিবার। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এখনো বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। তাই কখন দাফন হবে, তা ঠিক হয়নি।

শাহাদাত হোসেন খান ১৯৫৮ সালের ৬ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন।

জানা গেছে, করোনায় আক্রান্ত হলে ১২ দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হন শাহাদাত হোসেন। প্রথমে কিছুটা সুস্থ হলেও পরে আবার সংকটে পড়েন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সন্ধ্যায় তাঁর মৃত্যু হয়। মামুনুর রশীদ বলেন, তাঁর মৃত্যুর পর বাংলাদেশে সরোদবাদন সংকটে পড়ল। কেননা, দেশে সরোদের তেমন ওস্তাদ নেই।

শাহাদাত হোসেন খান ১৯৫৮ সালের ৬ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ওস্তাদ আবেদ হোসেন খান একজন প্রখ্যাত উচ্চাঙ্গসংগীতশিল্পী ও সেতারবাদক।

সাত বছর বয়সে বাবার কাছে শাহাদাত হোসেনের তবলা ও সরোদের হাতেখড়ি হয়।

সাত বছর বয়সে বাবার কাছে শাহাদাত হোসেনের তবলা ও সরোদের হাতেখড়ি হয়। পরে তিনি তাঁর চাচা বাহাদুর হোসেন খানের কাছে সরোদের তালিম গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে আলাউদ্দিন সংগীত সম্মেলনে বাহাদুর হোসেনের সঙ্গে যুগলবন্দী হয়ে সরোদ পরিবেশন করেন। ১৯৮১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ১৯৮৫ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার আলী আকবর কলেজ অব মিউজিক থেকে সংগীত বিষয়ে স্নাতক সমমানের ‘বাদ্যালংকার’ ডিগ্রি লাভ করেন।

শাহাদাত হোসেন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সংগীতের শিক্ষক ও প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন নানা সময়ে।

শাহাদাত হোসেন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সংগীতের শিক্ষক ও প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন নানা সময়ে। তিনি সরকারি সংগীত কলেজের ডেমোনেস্ট্রেশন-কাম-লেকচারার, সংগীতবিষয়ক বক্তা ও প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উচ্চতর প্রশিক্ষণ কোর্সে সেতার, সরোদ, বেহালা, বাঁশি ও গিটারের প্রশিক্ষক এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংগীত একাডেমিতে কণ্ঠ ও যন্ত্রসংগীতের প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন।

সংগীতে অবদানের জন্য শাহাদাত হোসেন ১৯৯৪ সালে একুশে পদক লাভ করেন।

শাহাদাত হোসেন ‘মৃত্যুহীন প্রাণ’ ও ‘মিট বাংলাদেশ’ নামক দুটি প্রামাণ্যচিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন। ২০০০ সালে যুক্তরাজ্য থেকে একটি সিডি প্রকাশিত হয়। পরে সেখান থেকে আরেকটি এবং বাংলাদেশ থেকে তিনটি সিডি ও ক্যাসেট প্রকাশিত হয়, যার মধ্যে ‘রিপলস ইন মেডোস’ সিডিটি প্রকাশিত হয় বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে।
শাহাদাত হোসেনের দুই যমজ মেয়ে আফসানা খান সেতারবাদক ও রুখসানা খান সরোদবাদক। সংগীতে অবদানের জন্য শাহাদাত হোসেন ১৯৯৪ সালে একুশে পদক লাভ করেন।

সংগীতে অবদানের জন্য শাহাদাত হোসেন ১৯৯৪ সালে একুশে পদক লাভ করেন।