বন্যাদুর্গত বিপর্যস্ত মানুষদের জন্য আর্থিক সহায়তা চেয়ে ফেসবুকে লাইভ করেন তরুণ গায়ক তাসরিফ খান। সেই লাইভ মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। দেশের মানুষের কাছে অনুদান পান ১৬ লাখ টাকা। তারপর তাঁদের লেনদেনের সীমা শেষ হয়ে যায়। কোনো কূলকিনারা পাচ্ছিল না তাসরিফের দল। পরে গতকাল আবারও মানুষের কাছে সহায়তা চেয়ে ফেসবুক লাইভ করেন এবং মুঠোফোনে আর্থিক লেনদেনের নম্বর দিয়ে দেন। সেই নম্বরগুলোতে গত ২৪ ঘণ্টায় জমা হয়েছে এক কোটি টাকার বেশি।
ত্রাণের কাজে বিরামহীন ব্যস্ততা, কথা বলাসহ নানা কারণে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েন তাসরিফ। তরুণ এই গায়ক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাই, আমি কথা বলতে পারছি না। আমার গলায় কিছুটা ব্যথা।’ ভয়াবহ বন্যার শুরু থেকেই ঠিকমতো শরীরের যত্ন নেওয়া হয়নি। এমন অবস্থা ছিল যে অনুদান দেওয়া শেষ হলে যেখানে রাত, সেখানেই কাত। দু–তিন ঘণ্টা ঘুমিয়ে আবারও শুরু হতো বন্যায় দুর্গত মানুষের বিপদে ছুটে চলা। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো কূলকিনারা পাচ্ছিলাম না। আমরা প্রথম দিকে এক লাখ দুই লাখ করে ১৬ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছিলাম। এই টাকা দিয়ে তিন হাজারের মতো পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু আমরা একটা অথই সাগরে পড়ে গিয়েছিলাম। এই বিপদে কী করা যায়। আমাদের আরও টাকা দরকার। পরে অনুদান চেয়ে আবার লাইভ করি। দেশের মানুষ আমাদের ওপর বিপুল সাড়া দেন। এবার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমরা অভাবনীয়ভাবে এক কোটি টাকার বেশি অনুদান পেয়েছি।’
মানুষের পাশে দাঁড়ানো তাসরিফের এবারই প্রথম নয়। কৈশোরকাল থেকেই তিনি মানুষের পাশে দাঁড়ান। মানুষের ইচ্ছাপূরণেও এগিয়ে আসতেন। আশপাশে অসহায় মানুষদের বিপদে–আপদে ছুটে যেতেন। চিকিৎসা, লেখাপড়া নানা কাজে এগিয়ে যেতেন। তাসরিফ বলেন,‘এবার আমরা ১ কোটি ১০ লাখের মতো টাকা দিয়ে ১০ হাজারের বেশি পরিবারের পাশে দাঁড়াব। আগে আমরা শুকনো খাবার দিয়েছি। এবার চাল–ডালসহ সব ধরনের খাবার দেব। আগামী চার দিন ধরে চলবে আমাদের এই সহায়তা। প্রতিদিন আড়াই হাজার পরিবারের পাশে থাকব। আর আমরা সিলেট থেকে দূরবর্তী এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াব। যেখানে এখনো হয়তো ত্রাণসহায়তা পৌঁছায়নি। আমাদের টিমের সদস্য রয়েছে দুই শতাধিক। সবাই রাতদিন কাজ করছেন।’
এই সময় তাসরিফ আরও বলেন, ‘আমরা দেশের সব মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ। যাঁরা আমাদের ওপর আস্থা রেখেছেন। তাঁরা না থাকলে হয়তো একবুক কষ্ট নিয়ে সিলেট থেকে ফিরতে হতো। আমি খুশি হাজার হাজার মানুষ আমাদের সহায়তায় যেমন এগিয়ে এসেছেন, তেমনি টিমেও কাজ করতে চাইছেন। এ ছাড়া আমরা সরকার, সেনাবাহিনীসহ সবার কাছে কৃতজ্ঞ। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কার্যক্রম চলমান থাকবে।’ তরুণ এই গায়ক ২০১৭ সাল থেকে নিয়মিত মৌলিক গান করছেন। তাঁর প্রকাশিত গানের সংখ্যা ৯০টির মতো। তাঁর ব্যান্ডের নাম ‘কুঁড়েঘর’। এই গায়কের ‘আমি মানে তুমি’, ব্যাচেলর’, ‘তাইতো আইলাম সাগরে’, ‘ময়নারে’সহ বেশ কিছু গান জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
সিলেটে তখনো তেমন বন্যা শুরু হয়নি। তারপরও কিছু এলাকায় বন্যা দেখা দেয়। সেই পরিস্থিতি দেখে মাসের শুরুতেই সিলেটের ভক্তদের আগেই কথা দিয়েছিলেন সিলেটের দুর্গতদের পাশে দাঁড়াবেন। কথা রাখতে সিঙ্গাপুরের শো শেষে ১৪ জুন দল নিয়ে সিলেট যান তরুণ সংগীতশিল্পী তাসরিফ খান। তারপর থেকে হঠাৎ প্রচণ্ড বন্যা বাড়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে মানুষ। তার পর থেকেই ঘরবাড়ি ডুবে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা হাজারো মানুষের পাশে রয়েছেন তিনি।