একটার পর একটা মোমবাতি জ্বালানো হচ্ছে। দমকা বাতাস এসে নিভিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। বাতাস কমে এলে ছেলে জয় এন্ড্রু সপ্তক ও স্ত্রী লিপিকা এন্ড্রু ইতি আবার প্রথম থেকে শুরু করলেন। প্লেব্যাক সম্রাটের সমাধি তখন ফুলে ফুলে ঢাকা। তার ওপরে মোমের আলো নিভছে, জ্বলছে। এলেন চার্চ অব বাংলাদেশের ফাদার। তাঁর সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে সবাই গাইলেন ‘যেদিনও তোমার ঘিরিবে আঁধার’ এভাবেই আজ বুধবার বিকেলে রাজশাহী নগরের শ্রীরামপুর এলাকায় দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রিয় শিল্পী এন্ড্রু কিশোরের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এন্ড্রু কিশোরের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর ছেলে ও স্ত্রী আগেই রাজশাহীতে এসেছেন। আজ বিকেল চারটায় তাঁরা এন্ড্রু কিশোরের বোন শিখা বিশ্বাসের সঙ্গে রাজশাহী নগরের শ্রীরামপুর এলাকায় অবস্থিত চার্চ অব বাংলাদেশের খ্রিস্টিয়ান কবরস্থানে আসেন।
প্রথমেই শিখা বিশ্বাস কবরের ক্রশে একটি ফুলের মালা রাখেন। তারপর গাঁদা ফুলের পাপড়ি ছড়ানো হয়। সমাধিতে সারিবদ্ধভাবে মোমবাতি বসানো হয়। একে একে সব মোমবাতিতে আগুন জ্বালানো হয়। অনেকক্ষণ ধরে ছেলে সপ্তক ও স্ত্রী লিপিকা চেষ্টা করতে থাকলেন, যেন মোমবাতিগুলো বাতাসে নিভে না যায়। নিভে গেলে নতুন করে জ্বালিয়ে দিতে থাকলেন। একপর্যায়ে চার্চ অব বাংলাদেশের রাজশাহীর ফাদার রেভারেন্ড মিখায়েল এলেন। তিনি বাইবেল থেকে বিশেষ অংশ পাঠ করলেন। এরপর আত্মার শান্তি কামনা করে প্রার্থনায় বললেন, ‘দয়াময় পিতা, আজকে তোমার যে সন্তান এই জগৎ ছিল, যে সন্তানের কাজ দিয়ে তুমি মহিমান্বিত হয়েছ, আমরা বিশ্বাস করি, তোমার সেই সন্তানের কর্মফলের মাধ্যমে তোমার সেই মহাস্থানে, যেখানে তুমি তাঁর জন্য স্থান প্রস্তুত করেছ, সেখানেই সে রয়েছে এবং সেই বিশ্বাস আমাদের দান কর যে একদিন না একদিন এই জগৎ ছেড়ে চলে যেতেই হবে; সেই চিন্তা আমাদের জীবনে দান করো।’ সবাই মিলে একটি প্রার্থনাসংগীত গাইলেন ‘যেদিনও তোমার ঘিরিবে আঁধার’।
শ্রদ্ধানিবেদন শেষে এক প্রশ্নের জবাবে লিপিকা এন্ড্রু প্রথম আলোকে বলেন, এন্ড্রু কিশোর আগেও যেমন জনপ্রিয় ছিলেন, এখনো তিনি সমান জনপ্রিয়। তিনি ইউটিউবে ঢুকে দেখেন, তাঁর (এন্ড্রু কিশোর) ভক্তরা তাঁর গাওয়া গান আপলোড করছেন, আগের মতোই তাঁর গান শুনছেন। এন্ড্রু কিশোর আগেও যেমন জনপ্রিয় ছিলেন, এখনো তেমনই রয়েছেন।
নতুন প্রজন্ম তাঁর শূন্যতা পূরণ করতে পারছে কি না, জানতে চাইলে লিপিকা বলেন, এন্ড্রু কিশোর এক প্রজন্মে গেয়েছেন। সেই প্রজন্মকে তিনি দিয়ে গেছেন। এখন আরেক প্রজন্ম এসেছে। নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা তাঁদের মতো করে গান করছেন। এক প্রজন্মের দ্বারা আরেক প্রজন্মের ‘রিপ্লেসমেন্ট’ হয় না।
বোন শিখা বিশ্বাস বলেন, এন্ড্রু কিশোর রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি রাজশাহীকে ভালোবাসতেন, তাই মাঝেমধ্যেই রাজশাহীতে ছুটে আসতেন। ওস্তাদ আবদুল আজিজ বাচ্চু স্মৃতিসংসদের মাধ্যমে তিনি তৃণমূল পর্যায়ের শিল্পীদের তুলে আনার জন্য কাজ করেছেন। তাঁর রেখে যাওয়া কাজটি আর হচ্ছে না। হয়তো সংসদ তাঁকে স্মরণ করছে। কিন্তু তিনি যে উদ্দেশ্য নিয়ে ছুটে আসতেন, সেটি হচ্ছে না।’
বিকেল ৫টায় রাজশাহী নগরের চার্চ অব বাংলাদেশে এন্ড্রু কিশোরের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। ওস্তাদ আবদুল আজিজ বাচ্চু স্মৃতিসংসদও একই আয়োজন করে।
২০২০ সালের ৬ জুলাই রাজশাহী নগরের মহিষবাথান এলাকায় বোন শিখা বিশ্বাসের বাসায় এন্ড্রু কিশোর শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।