নতুন একটি গানের খবর নিতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সরাসরি জানালেন, ‘দেশের মঞ্চে আর গান গাইব না।’ তপন চৌধুরীর কাছ থেকে এমন কথা শুনে বিশ্বাস হচ্ছিল না। নিশ্চিত হতে তাই আবার জিজ্ঞেস করলাম। এবার আরও জোর দিয়ে বললেন, ‘দেশের মঞ্চে সত্যি আর কোনো দিন গান গাইব না।’
কারণ জিজ্ঞেস করতেই ফোনের ওপার থেকে তপন চৌধুরী বললেন, ‘এত অপমান, তারপর আবার গাইব! স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমার দেশ আমাকে রিকগনাইজ করতে পারল না, আর কীভাবে গান গাইতে ইচ্ছা করবে! চার দশকের বেশি সময় ধরে গান গাইছি। দেশের স্বার্থ জড়িত এমন কোনো অনুষ্ঠান নাই, যেখানে বলতে পারবে আমাকে পায়নি। দেশের প্রয়োজনে যেকোনো চ্যারিটি, কারও অসুস্থতা, বন্যার্তদের সহযোগিতা করা সব জায়গায় আমাকে পেয়েছে। সেই আমাকে আমার দেশের ৫০ বছর পূর্তির সাংস্কৃতিক আয়োজনে গাইবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করাটা মোটেও মানতে পারিনি। সেই থেকে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আর কোনো দিন দেশের মঞ্চে গান গাইব না। ইচ্ছা মরে গেছে।’
কথায় কথায় তপন চৌধুরী জানালেন, সপ্তাহখানেক আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একটি অনুষ্ঠানে গাইবার জন্য আমন্ত্রিত হন। সেখানে তিনি এক মঞ্চে গেয়েছেন দেশের আরেক প্রথিতযশা শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদীর সঙ্গে। একই অনুষ্ঠানে এক মঞ্চে গেয়েছিলেন কনকচাঁপা আর তনিমা হাদীও। তপন চৌধুরী বললেন, ‘হাদী ভাই আর আমি জীবনে প্রথম স্টেজে গান গাইলাম। “ভাত দে” সিনেমায় আমি প্রথম প্লে ব্যাক করি। সেই গানে সহশিল্পী ছিলেন হাদী ভাই। এরপর আর কোনো দিন গানটি গাওয়া হয়নি। তাই একসঙ্গে এক মঞ্চে গাইবার অনুভূতি অসাধারণ। নিউইয়র্কে মঞ্চে ওঠে হাদী ভাই আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। তিনি তো আমাদের সংগীতের মিয়া ভাই, বড় ভাই। একসঙ্গে গান গাইছি, ভাবতেই শিহরণ জাগে। আমাকে আর কনককে তিনি বলছিলেন, তোমরা দুজন একসঙ্গে গাইছ দেখে কী যে ভালো লাগছে।’
এ মুহূর্তে কানাডায় আছেন সংগীতশিল্পী তপন চৌধুরী। অসাধারণ সব গান গেয়ে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন সব বয়সীর শ্রোতার মনে। ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’, ‘তুমি আমার প্রথম সকাল’, ‘পলাশ ফুটেছে শিমুল ফুটেছে’, ‘এই রুপালি চাঁদে’, ‘মনে করো তুমি আমি’, ‘পাথরের পৃথিবীতে কাচের হৃদয়’, ‘আজ ফিরে না গেলেই কি নয়’, ‘আকাশের সব তারা ঝরে যাবে’, ‘আমি কি বেঁচে আছি’ এ রকম অনেক শ্রোতৃপ্রিয় গানের জন্য তিনি বেঁচে থাকবেন।