‘আমি ইচ্ছা করলেই দেশের বাইরে গিয়ে আমার হৃদ্রোগের চিকিৎসা করাতে পারতাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেই সুযোগও আমাকে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমার দেশপ্রেম আমাকে দেশ ত্যাগ করতে দেয়নি। আমি যেভাবে চেয়েছিলাম, সেভাবেই সবকিছু শুরু হয়েছিল। আমার বুকে ছিল জাতীয় পতাকা এবং পতাকার ওপর ছিল পবিত্র কোরআন।’ লিখেছেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, মুক্তিযোদ্ধা, গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। গত শনিবার রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক আফজালুর রহমানের তত্ত্বাবধানে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের হৃদ্যন্ত্রে দুটি স্টেন্ট পরানো হয়। জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বাসায় ফিরেছেন তিনি। এরপর ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানিয়ে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল লিখেছেন, ‘আমি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের ডাক্তারদের কাছ থেকে যে সর্বাত্মক সহযোগিতা পেয়েছি, যা ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব না। আমি শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে তাঁদের নাম স্মরণ করছি।’
সবার উদ্দেশে তিনি লিখেছেন, ‘আমার এই হৃদ্রোগ চিকিৎসা ছিল অত্যন্ত জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ, তাই আমার আত্মীয়স্বজন, বন্ধু, সহকর্মী, শিল্পী, সাংবাদিক ও অনেক কাছের শুভাকাঙ্ক্ষীদেরও কিছু বলে যাইনি। আমি অন্তর থেকে সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলাম।’
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের হৃদ্যন্ত্রে আটটি ব্লক ধরা পড়ার পর শুরুতে বলা হয়েছিল, বাইপাস করাতে হবে। দেশের গুণী এই সংগীত ব্যক্তিত্বের শারীরিক অবস্থার খবর জানতে পেরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর কার্যালয়ের পরিচালক চিকিৎসক জুলফিকার লেনিনকে দায়িত্ব দেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার। এরপর প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পরিচালকের নেতৃত্বে একটি চিকিৎসক দল আবারও পরীক্ষা শেষে সিদ্ধান্ত নেয়, বাইপাস নয়, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের হৃদ্যন্ত্রের ব্লকগুলোতে রিং (স্টেন্ট) পরাতে হবে।
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল তাঁর সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার কথা গত ১৬ মে ফেসবুকে একটি পোস্টের মাধ্যমে তুলে ধরেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমি এখন ২৪ ঘণ্টা পুলিশ পাহারায় গৃহবন্দী থাকি, একমাত্র সন্তানকে নিয়ে। এ এক অভূতপূর্ব করুণ অধ্যায়। একটি ঘরে ছয় বছর গৃহবন্দী থাকতে থাকতে আমি উল্লেখযোগ্যভাবে অসুস্থ। আমার হার্টে আটটা ব্লক ধরা পড়েছে, বাইপাস ছাড়া চিকিৎসা সম্ভব না।’
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সেই পোস্ট এরই মধ্যে দুই সহস্রাধিকের বেশি শেয়ার হয়েছে। শিল্পী-সহকর্মী থেকে শুরু করে ভক্তরাও প্রিয় মানুষটির সুস্থতা কামনা করে মন্তব্য করেন। আবেগঘন এই পোস্ট নজরে আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এরপর প্রধানমন্ত্রী গুণী মানুষটির চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্বভার নেওয়ার ঘোষণা দেন।
সংগীতজগতে অবদানের জন্য আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, রাষ্ট্রপতির পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন। মুক্তিযুদ্ধে যখন অংশ নেন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৫ বছর। সত্তরের দশকের শেষ দিকে ‘মেঘ বিজলি বাদল’ ছবিতে সংগীত পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। তিনি গানের অ্যালবাম করেছেন এবং অসংখ্য চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন। তাঁর সুরে ও সংগীতে বাংলাদেশের প্রথিতযশা শিল্পীদের পাশাপাশি এ প্রজন্মের অনেকে গান গেয়েছেন।
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল তিন শতাধিক চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন। চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করে দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। প্রথমটি ছিল ২০০১ সালে ‘প্রেমের তাজমহল’ আর দ্বিতীয়টি ছিল ‘হাজার বছর ধরে’ ছবির জন্য।