১৯৯৬ সালের কথা। সামনে ঈদ। সন্ধ্যা। নিউ এলিফ্যান্ট রোডের একটি অডিও ক্যাসেটের দোকান থেকে ভেসে আসে গান, ‘ওরে আমার পাগল মন/ চিন্তাভাবনা কইরা তুমি/ দিয়ো তোমার মন’। গানটা শুরু হতে না হতেই কয়েকজন তরুণ আর কিশোর এসে ভিড় করে দোকানে। কয়েক মিনিটে বিক্রি হয়ে যায় নতুন গানের অ্যালবামটির সবগুলো কপি। ওই সময়ের জনপ্রিয় ব্যান্ড আর্কের ‘তাজমহল’ ছিল বছরে সর্বাধিক ব্যবসাসফল অ্যালবাম।
এমন অনেক ব্যবসাসফল অ্যালবামের ব্যান্ড আর্ক। দীর্ঘ এক যুগ বিরতির পর নতুন গান করছে তারা, ফিরছে গানের বাজারে। দলটির মূল উদ্যোক্তা কানাডাপ্রবাসী আশিকুজ্জামান টুলু বেশ কিছু দিন আগে দেশে এসে আর্ক টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব দিয়ে যান পুরোনো সদস্য হাসানকে। ইতিমধ্যে তারকা শিল্পী হাসানের সঙ্গে সমসাময়িক কয়েকজন শিল্পী মিলে সক্রিয় করেছে দলটিকে। সম্প্রতি তাঁরা নতুন অ্যালবামের কাজ করছেন। ঈদে জি-সিরিজ প্রকাশ করবে আর্কের নতুন গান। চলছে গানের সংগীত ও ভিডিও চিত্র ধারণের কাজ।
আর্কের শুরুটা ১৯৯০ সালে, ওই সময়ের তারকা শিল্পী আশিকুজ্জামান টুলুর নেতৃত্বে। ১৯৯২ সালে আর্ক প্রকাশ করে তাদের প্রথম অ্যালবাম ‘মুক্তিযুদ্ধ’। এই অ্যালবামে ‘সেদিনও আকাশে ছিল চাঁদ’ ও ‘হারিকেন লণ্ঠন’ শিরোনামের দুটি গান ব্যাপক সাড়া জাগায়। ১৯৯৬ সালে আর্কের দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘তাজমহল’ আসে। এখানে ‘সুইটি’, ‘গুরু’, ‘পাগল মন’, ‘এমন একটা সময়’ গানগুলো তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। এই সময় ‘একাকী’ ও ‘সুইটি’ গান দুটির জনপ্রিয়তার কারণে দলের অন্যতম সদস্য ভোকাল হাসান তারকা খ্যাতি পেয়ে যান, তৈরি হয় তাঁর আলাদা পরিচিতি। অবশ্য এর আগে ১৯৯৪ সালে দুটি মিশ্র অ্যালবামে হাসানের গান আলোচনায় আসে।
আর্কের তৃতীয় অ্যালবাম ‘জন্মভূমি’ বাজারে আসে ১৯৯৮ সালে। ‘বাংলাদেশ’, ‘যারে যা’, ‘অভিমান নয়’, ‘আকাশের নীলে’ গানগুলো জনপ্রিয়তা পায়। মাঝে আরও কিছু অ্যালবাম প্রকাশ করে আর্ক। ২০০২ সালে অন্যতম সদস্য পঞ্চম দল ছেড়ে নিজে নতুন ব্যান্ড গঠন করেন। এর কিছু পরে হাসান আর আশিকুজ্জামান টুলু নিজেদের কাজ ব্যস্ত হওয়ায় ব্যান্ডটি প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।
পরে আর্ক থেকে বেরিয়ে হাসান বসে থাকেননি। ‘স্বাধীনতা’ নামে একটি ব্যান্ড গঠন করেন তিনি। ‘কারবালা’ নামের একটি সফল অ্যালবাম প্রকাশ করেন তাঁরা। চলচ্চিত্রেও গান করেন হাসান। পাশাপাশি একক এবং মিশ্র অ্যালবামে গান করে দেশের অডিও বাজারে নিজের অবস্থান দারুণভাবে টিকিয়ে রাখেন। অন্যদিকে জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে আর্কের, কমে যায় কর্মকাণ্ড। একসময় হাসান আবার আর্কে ফিরে আসেন। এর মধ্যে তিনি আর্ককে নিয়ে টেলিভিশন লাইভ অনুষ্ঠান ও কনসার্টে অংশ নেন।
হাসান বলেন, ‘আর্ক ছেড়ে খুব একাকিত্বে ভুগেছি। ভেতর থেকে অনুভব করলাম, আমার সবকিছু আর্কের জন্য। তাই টুলু ভাইয়ের পরামর্শে আবার আর্ক চালু করি। আমি আগের মতো আর্ক ব্যান্ডের হয়েই গান করে যাচ্ছি, ভবিষ্যতেও আর্কের সঙ্গেই থাকব।’
আর্কের মূল উদ্যোক্তা আশিকুজ্জামান টুলু বলেন, ‘আর্ককে চালু রাখার জন্য আমিই হাসানকে বলেছি। কারণ আমি চাই আর্ক টিকে থাকুক। আর্ক নামটা যেন হারিয়ে না যায়। সেখানে আমি না থাকলেও অসুবিধা নাই।’
এখন আর্ক ব্যান্ডে মূল ভোকাল হিসেবে আছেন হাসান। কি-বোর্ড ও ভোকাল হিসেবে আছেন টিংকু আজিজুর রহমান। গিটারে এস আই সুমন, আসাইফ হোসাইন নমন, ইরশাদ আলী নিপু এবং ড্রামসে ইমতিয়াজ আলী জীমি।
ঈদের আগেই আর্কের নতুন গানটি মিউজিক ভিডিওসহ প্রকাশ হবে বলেও জানিয়েছেন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জি-সিরিজের উদ্যোক্তা নাজমুল হক ভূঁইয়া। আর্কের পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম ছাড়া হবে ঈদের পর।