তরুণ যে ছেলেটা আজ কাঁধে গিটার নিয়ে ঘুরছে, তার তাড়নাটা এসেছে আইয়ুব বাচ্চুর কাছ থেকে। বাংলাদেশের যে বাচ্চা ছেলেটা আজও মা–বাবার কাছে গিটার কিনে দেওয়ার আবদার করে, সেটাও ওই আইয়ুব বাচ্চুর কারণে। আইয়ুব বাচ্চুর মতো গিটারিস্ট হতে চায় তারা। আইয়ুব বাচ্চু নিজেকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন, যেখানে পৌঁছানোর স্বপ্ন আবার তিনিই দেখিয়েছেন তরুণদের।
‘নতুন কুঁড়ি’র একটা সম্মানীর চেক অনেক দিন ধরে পড়ে ছিল আমার কাছে। সেটা হালনাগাদ করতে গিয়েছিলাম বাংলাদেশ টেলিভিশনে। সেখানেই বাচ্চু ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম পরিচয়। ১৯৮৮ সালের দিকে গিটারিস্ট নিলয়দার মাধ্যমে আমাদের সম্পর্ক গভীর হয়। আমাদের তখন ‘দ্য ব্লুজ’ নামের একটা ব্যান্ড ছিল। সারগামে আড্ডার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক গভীর হতে থাকে। একটা মিশ্র অ্যালবামের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সে সময়, অর্থাৎ ১৯৯৪ সালে বাচ্চু ভাইয়ের জন্য প্রথম সুর করলাম ‘পালাতে চাই’ গানটা। গানটা তাঁর ভালো লাগল, তিনি গাইতে রাজি হলেন। তারপর থেকে তিনি আমার সুর করা বেশ কিছু গান গেয়েছেন। গান বানানো প্রসঙ্গে একটা কথা বলেছিলেন, সেটা এখনো আমার কানে বাজে—‘আমাদের হলো গান লাগন দিয়া কথা। গান লাগলে আমরা আছি, না লাগলে নাই।’
বাচ্চু ভাইদের সঙ্গে মূলত দেখা হতো তিনটি স্টুডিওতে, সারগাম, অডিও আর্ট ও সাউন্ড গার্ডেনে। তবে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে তিনি আমার বাসায় আসতেন। একদিন বাচ্চু ভাই আমার বাসায় এলেন, খাওয়াদাওয়া হলো আর রাতভর গানবাজনা হলো। পরে জানতে পারলাম, সেদিনই তাঁর জন্মদিন ছিল। বাচ্চু ভাই সেভাবে নিজের জন্মদিনটা উদযাপন করতেন না। একটু বোহেমিয়ান আর পুরোটাই গানমুখী একজন মানুষ ছিলেন তিনি।
বাচ্চু ভাই সব সময় তরুণদের বলতেন, ‘বুক ফুলিয়ে গিটার বাজাও, নিজের সবটা ঢেলে দিয়ে বাজাও। দেখবে গিটার তোমার কথা শুনবে।’ মৃত্যুর কিছুকাল আগে সাউন্ড অব সাইলেন্স নামে একটা অনুষ্ঠানে বাজিয়েছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। সেখানে কোনো গান ছিল না, ছিল কেবল গিটার বাদন। মন্ত্রমুগ্ধের মতো বসে বসে সেই বাদন শুনেছে হাজারখানেক তরুণ।
আমার সুরে তাঁর গাওয়া একটি গানের দুটি বাক্য আজ খুব করে মনে পড়ছে—হারায়ে বুঝেছি তুমি কী ছিলে আমার/কী ছিলে আমার তুমি/ বোঝানো না যায়...।