কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু প্রয়াত হয়েছেন গত বৃহস্পতিবার। গত শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে তাঁকে দাফন করা হয়। এরপর এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে আইয়ুব বাচ্চুর গড়া ব্যান্ড এলআরবি নিয়ে। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় এই ব্যান্ডের ভবিষ্যৎ কী? কীভাবে চলবে এই ব্যান্ডের কার্যক্রম? কারা থাকবেন এর সঙ্গে? লিড গিটার আর গান গাওয়ার জন্য নতুন কেউ যুক্ত হচ্ছেন? এই দুটি কাজ দারুণ সাফল্যের সঙ্গে আইয়ুব বাচ্চু নিজেই করেছেন। এই দুটি কাজে তিনি এতটাই সফল হয়েছেন যে নিজেকে নিয়ে যান জনপ্রিয়তার শীর্ষে।
এলআরবির ম্যানেজার শামীম এখন আছেন চট্টগ্রামে। আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহের সঙ্গে গত শনিবার তিনি সেখানে যান। আজ সোমবার সকালে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। জানালেন, আজ বিকেলে আইয়ুব বাচ্চুর স্ত্রী ফেরদৌস আক্তার, ছেলে আহনাফ তাজওয়ার আর মেয়ে ফাইরুজ সাফরা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরছেন। আগামী বৃহস্পতিবার ঢাকায় আইয়ুব বাচ্চুর সবকিছু তাঁর পরিবারকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
এলআরবির ভবিষ্যৎ নিয়ে শামীম বললেন, ‘এ ব্যাপারে আগামী বৃহস্পতিবার আইয়ুব বাচ্চুর পরিবারের সঙ্গে আমরা আলোচনা করব। আমরা আইয়ুব বাচ্চুর ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে এলআরবিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আহনাফ তাজওয়ার এখন কানাডায় পড়াশোনা করছেন। এ সময় আমরা তাঁকে কোনো চাপ দেব না। প্রয়োজনে তাঁকে সহযোগিতা করব। এখন এলআরবির সঙ্গে আমরা চারজন আছি। আমি ম্যানেজার, মাসুদ-গিটার, স্বপন-বেস আর রোমেল-ড্রামস। দ্বিতীয় আরেকজন আইয়ুব বাচ্চুকে পাওয়া যাবে না, এটা সত্যি। তবে ব্যান্ডের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার জন্য আমরা নতুন সদস্য যুক্ত করব। আইয়ুব বাচ্চুর গান দেশে অনেকেই চর্চা করেন। আমরা হয়তো কোনো বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে “এলআরবির জন্য ভোকাল হান্ট” করব। যাঁকে পাওয়া যাবে, তাঁকে এলআরবির মতো প্রস্তুত করব। আমরা এলআরবিকে রাখতে চাই। আইয়ুব বাচ্চুর অনেক স্বপ্নের কথা আমরা জানি। সেসব স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য এলআরবিকে টিকিয়ে রাখতে হবে। আইয়ুব বাচ্চুর অবর্তমানে এলআরবির জনপ্রিয়তায় যেন এতটুকু ভাটা না পড়ে, সেদিকটাও দেখব।’
চট্টগ্রামে ব্যান্ড সংগীতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা আজ সন্ধ্যায় শহরের কাজীর দেউড়ির সমাদর ক্লাবে ৪০০ জন এতিম শিশুকে রাতের খাবার খাওয়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের উদ্যোগে আগামী বুধবার বাদ আসর চট্টগ্রামের জমিয়াতুল ফালাহ জামে মসজিদে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হচ্ছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে আইয়ুব বাচ্চুর জন্য পৃথক পৃথক দোয়া মাহফিল হচ্ছে।
গত ২৫ আগস্ট শহরের ২ নম্বর গেট এলাকায় ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’ রেস্টুরেন্টে ‘এবি লাউঞ্জ’ উদ্বোধন করেন আইয়ুব বাচ্চু। প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আইয়ুব বাচ্চুর স্মৃতি ধরে রাখার জন্য এবি লাউঞ্জের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এবি লাউঞ্জে প্রতি শনিবার চট্টগ্রামসহ দেশের উঠতি ও প্রতিষ্ঠিত ব্যান্ড গান করবে। আইয়ুব বাচ্চু বলেছিলেন, ব্যান্ড সংগীতের সঙ্গে জড়িতদের পারফর্ম করার জন্য নিজস্ব একটা জায়গা চাই। এবি লাউঞ্জ হবে তেমনি একটি স্থান।
শামীম আরও বলেন, ‘দেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের মিউজিক ইনস্টিটিউট হবে, এখান থেকে দক্ষ ছেলেমেয়ে তৈরি হবে, এমন স্বপ্ন আইয়ুব বাচ্চু অনেক বছর ধরে দেখেছেন। পাশাপাশি আমরা চাই আইয়ুব বাচ্চুর গানগুলো যেন বেঁচে থাকে। চট্টগ্রাম কিংবা দেশের যেকোনো স্থানে যাতে এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়া সম্ভব হয়, এ ব্যাপারে আমরা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করব। এ ছাড়া আইয়ুব বাচ্চুর ব্যবহার করা গিটার, গান ও বিভিন্ন কিছু নিয়ে তাঁর নামে একটা স্মৃতি জাদুঘর করার ব্যাপারেও ভাবছি। তাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কিংবদন্তি এই সংগীতশিল্পীকে জানতে পারবে, তাঁকে নিয়ে চর্চা করবে, তাঁর কাজ নিয়ে গবেষণা করবে।’