বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস সূত্রে জানা গেছে, মোট ২৬টি অ্যালবাম নিবন্ধন করেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু।
সেগুলোর মধ্যে ১৩টি একক এবং ১৩টি ব্যান্ড অ্যালবাম।
এই ২৬ অ্যালবামের সব গান আইয়ুব বাচ্চুর নামে নিবন্ধিত। অর্থাৎ ব্যক্তি আইয়ুব বাচ্চুর নামে, এলআরবি ব্যান্ডের নামে নয়।
‘এলআরবি একটি পরিবার। সারা জীবন এ পরিবার থাকবে। আমরা না থাকলেও আমাদের উত্তরাধিকারীরা এই পরিবারে থাকবে। তারাই এগিয়ে নিয়ে যাবে এলআরবিকে।’ প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটিই বলেছিলেন এলআরবি ব্যান্ডের প্রধান উদ্যোক্তা শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। দুই বছর হতে চলেছে নিজের ‘রুপালি গিটার’ ফেলে তিনি চলে গেছেন। রয়ে গেছে তাঁর সংগীতকর্ম, প্রশ্ন উঠেছে এসবের মেধাস্বত্ব বা কপিরাইট নিয়ে। তাঁর গাওয়া, সুর করা গান নিয়ে নানা আলাপ চলছে হরহামেশা, তাঁর ব্যান্ড দল নিয়ে ঘটছে নানা ঘটনা। যে যেভাবে পারছেন, ব্যবহার করছেন তাঁর গান। তবে কি আইয়ুব বাচ্চুর অনুপস্থিতিতে তাঁর গান এবং এলআরবি হয়ে যাবে নাটাইছেঁড়া ঘুড়ি?
বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস সূত্রে জানা গেছে, মোট ২৬টি অ্যালবাম নিবন্ধন করেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। সেগুলোর মধ্যে ১৩টি একক এবং ১৩টি ব্যান্ড অ্যালবাম। এই ২৬ অ্যালবামের সব গান আইয়ুব বাচ্চুর নামে নিবন্ধিত। অর্থাৎ ব্যক্তি আইয়ুব বাচ্চুর নামে, এলআরবি ব্যান্ডের নামে নয়। নিয়ম অনুযায়ী কপিরাইট অফিসে কোনো সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের লোগোর নিবন্ধন হয়। এলআরবির লোগোটিও নিবন্ধিত হয়েছে, একই সঙ্গে ‘এলআরবি’ নামটি তালিকাভুক্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও শুধু আইয়ুব বাচ্চুর নামেই এলআরবির লোগো এবং নাম নিবন্ধন করা হয়েছে। তাঁর গানগুলো এবং এলআরবির মালিকানা কেবল আইয়ুব বাচ্চুর উত্তরাধিকারীদের।
রেজিস্ট্রার অব কপিরাইটস (যুগ্ম সচিব) জাফর রাজা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু গানগুলো ব্যক্তি আইয়ুব বাচ্চু নিজের নামে নিবন্ধন করেছেন, সেহেতু বাণিজ্যিকভাবে এ গানগুলো ব্যবহারের অধিকার কেবল তাঁর আইনগত উত্তরাধিকারীদের। অন্য শিল্পী বা দূরে থাকা এলআরবির অন্য সদস্যরা এ গানগুলো বাণিজ্যিকভাবে পরিবেশন করতে পারবেন না।’ কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, আইয়ুব বাচ্চুই দেশের প্রথম অনলাইন নিবন্ধন আবেদনকারী। ই-কপিরাইট সিস্টেমে কোনো সৃজনকর্মের কপিরাইট রেজিস্ট্রেশনের প্রথম আবেদনকারী আইয়ুব বাচ্চু তাঁর ‘জীবনের গল্প’ অ্যালবামটি ই-কপিরাইট পদ্ধতিতে নিবন্ধনের জন্য অনলাইনে আবেদন করেছিলেন।
‘আমরা বাবা হারিয়েছি, কিন্তু আইয়ুব বাচ্চুকে আপনারা কোনো দিন হারাবেন না, তিনি আপনাদেরই থাকবেন।’ফাইরুয সাফরা আইয়ুব এবং আহনাফ তাযওয়ার আইয়ুব
এটা স্পষ্ট, নিবন্ধন অনুযায়ী এলআরবির মালিক শুধু তাঁর দুই সন্তান, ফাইরুয সাফরা আইয়ুব এবং আহনাফ তাযওয়ার আইয়ুব। সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন তাঁরা। সেখানে বলা হয়েছে, ‘বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন ব্যক্তি আমাদের অনুমতি ছাড়াই তাঁর (আইয়ুব বাচ্চুর) লেখা, সুরারোপিত ও গাওয়া গানগুলোর স্ট্যান্ডার্ড বজায় না রেখে যেনতেনভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে গাইছেন, এমনকি বাণিজ্যিকভাবেও ব্যবহার করছেন।
এখন থেকে আমাদের সম্মতি ছাড়া এলআরবি নামের অপব্যবহার করে আইয়ুব বাচ্চুর কপিরাইট করা গানগুলো পরিবেশন থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করছি। অন্যথায় আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’ তাঁদের ভাষায়, ‘বাবুই তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের মাঝে যেভাবে ছিলেন, সেভাবেই যেন থাকেন, সেটাই আমরা শতভাগ নিশ্চিত করব। আইয়ুব বাচ্চুর ভক্তদের কাছে একটাই চাওয়া-এই মুহূর্তে তাঁর সৃষ্টিকর্মের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে একটু সময় দিন। আমরা বাবা হারিয়েছি, কিন্তু আইয়ুব বাচ্চুকে আপনারা কোনো দিন হারাবেন না, তিনি আপনাদেরই থাকবেন।’
‘সন্তানেরা আপাতত তাঁদের বাবার সৃষ্টিকর্মের আইনি মালিকানার প্রতিকূলতা নিয়ে ভাবছে। গিটার নিয়ে সামনে আমাদের বড় পরিকল্পনা আছে। যথাসময়ে সেটা জানানো হবে।’চন্দনা ফেরদৌস, আইয়ুব বাচ্চুর স্ত্রী
ভক্তদের মনে প্রশ্ন তৈরি হতে পারে, আইয়ুব বাচ্চুর গিটারগুলো কোথায়? প্রথম আলোর সঙ্গে এক আলাপে তৎকালীন এলআরবির অন্যতম সদস্য মাসুদ জানান, কিছু গিটার আইয়ুব বাচ্চু বিক্রি করেছিলেন, কিছু উপহার হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছিলেন। বাকি গিটারগুলোর ছবি তুলে বিস্তারিত তথ্যসহ আইয়ুব বাচ্চুর স্ত্রীকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি সেগুলো বাসায় নিয়ে গেছেন। আইয়ুব বাচ্চুর স্ত্রী চন্দনা ফেরদৌস আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সন্তানেরা আপাতত তাঁদের বাবার সৃষ্টিকর্মের আইনি মালিকানার প্রতিকূলতা নিয়ে ভাবছে। গিটার নিয়ে সামনে আমাদের বড় পরিকল্পনা আছে। যথাসময়ে সেটা জানানো হবে।’ তিনি জানান, আইয়ুব বাচ্চুর অবশিষ্ট গিটার রয়েছে ৫০টি।