অনেক শিল্পীর ঘরেই এখন গড়ে উঠেছে গানের স্টুডিও। হোম স্টুডিও হিসেবে তাঁরা এগুলো ব্যবহার করছেন। প্রযুক্তির উন্নয়নে এখন নিজেদের ব্যবস্থাপনায় অনেক সংগীতশিল্পীই নিজের ঘরে গানের স্টুডিও স্থাপন করেছেন। এসব স্টুডিওতে অডিও থেকে শুরু করে সিনেমার গানও রেকর্ড হচ্ছে। বাপ্পা মজুমদার, বালাম, হাবিব, হৃদয় খান, ইমরান, বেলাল খান, কিশোর, আহম্মেদ হুমায়ন, নাভেদ পারভেজ, তানজীব সারোয়ারসহ অনেক সংগীতশিল্পীই নিজেদের ব্যক্তিগত হোম স্টুডিও গড়ে তুলেছেন।
বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন বাপ্পা মজুমদার। ‘মিউজিক স্টেশন’ নামে তাঁরও একটি স্টুডিও আছে। তিনি বলেন, ‘একজন শিল্পীর ঘরে নিজের স্টুডিও থাকতেই পারে। তবে অবশ্যই যেন সেটি মানসম্পন্ন হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শুধু একটি সাউন্ড কার্ড আর একটি কম্পিউটার বসিয়ে স্টুডিও বানিয়ে ফেললে হবে না।’
একসময় পেশাদার স্টুডিওগুলোতে সুরকার, গীতিকার, যন্ত্রশিল্পী ও কণ্ঠশিল্পী মিলে একসঙ্গে গান তৈরি হতো। এর মাধ্যমে সংগীতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে একটা পারিবারিক যোগাযোগ তৈরি হতো। সেই জায়গার অভাব অনুভব করেন কি? এমন প্রশ্নের জবাবে বাপ্পা মজুমদার বলেন, ‘অবশ্য সেই অভাব অনুভব করি, করছি। এখন হোম স্টুডিও হওয়াতে সবাই নিজস্ব জায়গা থেকে সবকিছু ভাবছেন। এতে করে সবার সঙ্গে যোগাযোগ কমে গেছে। কারণও আছে। এখন তো অডিও থেকে কোনো আয় নেই। খরচটা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। হোম স্টুডিও হওয়াতে গানের টিমওয়ার্ক কমেছে। একটি গান টিমওয়ার্ক করে তৈরি করলে যেমন হবে, হোম স্টুডিওতে বসে করলে সে রকমভাবে হবে না। আগে বড় বড় স্টুডিওতে বেশির ভাগই টিমওয়ার্ক করেই কাজ হতো।’
শ্রুতি ১, শ্রুতি ২, সারগাম, সাসটেইন, ঝংকার, সিম্ফনি, স্পন্দন, অডিও আর্ট, সাউন্ড গার্ডেন, এলভিস, গিফটন, আর্ট অব নয়েজসহ আরও অনেক পেশাদার বড় বড় স্টুডিও ঢাকা শহরে গড়ে উঠেছিল। আশির দশক থেকে শুরু করে ২০১০-২০১২ সাল পর্যন্ত এসব স্টুডিওতে অডিও ও সিনেমার গান তৈরি হতো। এসব পেশাদার স্টুডিও থেকে অনেক ব্যান্ডের জনপ্রিয় অ্যালবাম ও অসংখ্য জনপ্রিয় সিনেমার গান তৈরি হয়েছে। সাত-আট বছরে স্টুডিওগুলোর বেশির ভাগই বন্ধ হয়ে গেছে।
এই সময়ের তরুণ সংগীত পরিচালক ও শিল্পী ইমরান মাহমুদুল ‘মিউজিক ল্যাব’ নামে নিজের ঘরে স্টুডিও তৈরি করেছেন। শিল্পীদের ঘরে ঘরে স্টুডিওর বিষয়টিতে সুবিধা ও অসুবিধা দুটোই দেখছেন তিনি। ইমরান বলেন, ‘ঘরে স্টুডিও হওয়ায় কাজের সুবিধা হয়েছে, মুড আসলেই গান নিয়ে স্টুডিওতে বসতে পারছি। প্রযুক্তির কল্যাণেই এই সুবিধাটা হয়েছে। তবে হোম স্টুডিওগুলো হওয়ার কারণে অ্যাকুয়াস্টিক যন্ত্রের ব্যবহার কমে গেছে। বড় বড় স্টুডিওতে আগে যেভাবে পারিবারিক পরিবেশে কাজ হতো, বিশেষ করে সবাই একসঙ্গে বসে অনুশীলন করে গান রেকর্ডিং হতো, এখন তার অভাব তৈরি হয়েছে।’
এ ব্যাপারে আরেকটি স্টুডিওর স্বত্বাধিকারী, সংগীত পরিচালক ও শিল্পী আহম্মেদ হুমায়ুন বলেন, ‘ভালো গান করতে গেলে প্রচুর সময় লাগে। নিজের স্টুডিওতে সেই সুযোগটা কাজে লাগানো যায়। তবে আমাদের এখানকার শিল্পীদের ঘরের স্টুডিওগুলোতে গানের সাউন্ড ডিজাইনের জন্য মিক্সিং মাস্টারিং ল্যাব নেই বললেই চলে। ফলে গানের গুণগত মান ঠিকভাবে বজায় থাকে না।’