প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বরেণ্য সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দীর চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থাপত্র সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতি মিললেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেওয়া হবে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা শেষে প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানান জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জাতীয় সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন ও জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ।
সপ্তাহখানেক ধরে অসুস্থ হয়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন সুবীর নন্দী। বরেণ্য এই শিল্পীর সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে সন্ধ্যায় গণভবন যান চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। এই দলে সামন্ত লাল সেন আর কুমার বিশ্বজিৎ ছাড়াও ছিলেন বরেণ্য গায়ক রফিকুল আলম ও তপন চৌধুরী। ব্যস্ততার মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী সময় নিয়ে সুবীর নন্দীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন।
প্রথম আলোকে আজ শনিবার দুপুরে সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘গতকাল রাতেই সুবীর নন্দীর চিকিৎসার সব ব্যবস্থাপত্র আমরা সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে, তাহলেই সুবীর নন্দীকে সেখানে নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী ওর ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। সব খোঁজখবর নিলেন। আসার সময় প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকা অন্য শিল্পীদেরও শরীরের যত্ন নিতে বলেন। তাঁদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোমরা একটু সাবধানে থেকো। তোমরা তো আমাদের দেশের সম্পদ। সবার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী এত বেশি কনসার্ন, এত ব্যস্ততার মধ্যে তাঁর এসব ভাবনা আমার বেশ ভালো লেগেছে।’
কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই শিল্পীদের ব্যাপারে আন্তরিক। তাঁর এই আন্তরিকতার প্রমাণ তিনি আমাদের বারবার দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি সবার খোঁজখবর যেভাবে রাখেন, তা ভেবে বিস্মিত হই। দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েও এত ব্যস্ততার মধ্যে কীভাবে সম্ভব করেন! সমগ্র শিল্পীসমাজের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আমরা তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করছি।’
সুবীর নন্দীর জামাতা রাজেশ সিকদার প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, ১২ এপ্রিল পরিবারের সবাই মিলে মৌলভীবাজারে আত্মীয়ের বাড়িতে যান। সেখানে একটি অনুষ্ঠান ছিল। ঢাকায় ফেরার ট্রেনে ওঠার জন্য বিকেলে মৌলভীবাজার থেকে শ্রীমঙ্গলে আসেন তাঁরা। ট্রেনেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ভাগ্যক্রমে সেখানে একজন চিকিৎসক থাকায় তাঁর পরামর্শে সুবীর নন্দীকে নিয়ে তাঁরা ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশনে নেমে যান। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাত ১১টার দিকে তাঁকে দ্রুত সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হয়।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে কিডনি ও হার্টের অসুখে ভুগছিলেন সুবীর নন্দী। দীর্ঘ ৪০ বছরের সংগীতজীবনে আড়াই হাজারের বেশি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্রে নিয়মিত গাইছেন এখনো। ১৯৮১ সালে তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম ‘সুবীর নন্দীর গান’ প্রকাশিত হয়। চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম গান করেন ১৯৭৬ সালে ‘সূর্যগ্রহণ’ চলচ্চিত্রে। সুবীর নন্দী জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন চারবার। সংগীতে অবদানের জন্য এ বছর একুশে পদক পান তিনি।