দর্শকদের প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিতে হবে

মীর রাব্বি
ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
বছরে একসময় যাঁকে মাত্র দু–একটি কাজে দেখা যেত, তিনিই এখন বছরভর ব্যস্ত। গত মাসে মুক্তি পাওয়া ওয়েব ফিকশন এন্ড কাউন্টার দিয়ে প্রশংসা পাচ্ছেন। শেষ করেছেন ফ্রেঞ্জি, ফ্যাঁকড়া নামের দুটি ওয়েব সিরিজের কাজ। মুক্তির অপেক্ষায় আছে তিনটি সিনেমা: কুরকাব, বকুলের বুকে রক্তকরবী, জুন। তরুণ অভিনেতা মীর রাব্বির খোঁজখবর করলেন মনজুরুল আলম

কাজের ব্যস্ততা কি হঠাৎ বেড়ে গেছে? প্রশ্ন শুনে রাব্বি জানালেন, ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই তাঁকে ভেবেচিন্তে কাজ নিতে হয়েছে। শুরুতে জিরো ডিগ্রি সিনেমা মুক্তির পর প্রস্তাব পেয়েও খুব বেশি কাজ করার উপায় ছিল না। ‘সে সময়ে চাকরি ছিল আমার প্রধান পেশা। অভিনয় চলত পাশাপাশি। তখন ছুটি পাওয়া সাপেক্ষে খুবই অল্পসংখ্যক কাজে নাম লেখাতে পারতাম। এটাই কাজ কম থাকার কারণ,’ বলেন রাব্বি।

মীর রাব্বি

নিজেকে আবিষ্কার
শৈশব থেকেই টুকটাক অভিনয়ে যুক্ত ছিলেন। এভাবে অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা। পেশা হিসেবে অভিনয়কে নেওয়ার ইচ্ছা কম ছিল। তাকদীর, ব্রোকার, ইন্টার্নশিপ তাঁর ব্যস্ততা বাড়িয়ে দেয়। পরিচিতি বাড়ায় বুকের মধ্যে আগুন, বুক পকেটের গল্প। এই অভিনেতা বলেন, ‘সিরিয়াসলি অভিনয় করব, এটা তো আগে ভাবিনি। পরে যখন দেখলাম পরপর অনেকগুলো কাজ ভালো হয়ে গেল, দর্শকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়তে শুরু করল, তখন মনে হলো, শুধু অভিনয়কেই পেশা হিসেবে নেওয়া যায়। দুই বছর ধরে আমি নিয়মিত। দুই বছর ধরে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করছি।’

শুধুই থ্রিলারে বিশ্বাসী নন
ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সিনেমা-সিরিজ মানেই যেন থ্রিলার। যেখানে থাকবে টান টান উত্তেজনা। তবে রাব্বি আবার শুধু থ্রিলারে বিশ্বাসী নন। এমনকি ওটিটির গল্প, চিত্রনাট্য হাতে পাওয়ার আগে থ্রিলার গল্পের প্রত্যাশাও করেন না। তিনি মনে করেন, থ্রিলার গল্প দর্শক বেশি পছন্দ করলেও কমেডি, সামাজিক গল্পও পছন্দ করেন। এই অভিনেতা বলেন, ‘আমাদের ইন্টার্নশিপ যেমন গতানুগতিক কাজের বাইরে ছিল। কমেডি ঘরানার ওয়েব সিরিজটির অনেক ভালো ফিডব্যাক পেয়েছি। দিন শেষে মানুষ আসলে চায় ভালো গল্প। ভালো প্রেজেন্টেশন খোঁজ করে, নতুনত্ব খোঁজে। যে কারণে আমি চিত্রনাট্য পেলেই সেটা নিয়ে ডিজাইন কেমন হবে, উপস্থাপনা কেমন হবে, সেগুলোর দিকে মনোযোগ দিই।’

মীর রাব্বি। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

ওটিটির চ্যালেঞ্জ
শুরুর দিকে দেশের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম যেভাবে এগিয়েছে, যে মানের গল্প নির্মিত হয়েছে, সেখানে কিছুটা ধীরগতি ছিল বলে মনে করেন রাব্বি। তিনি জানান, দর্শক এখন আগের চেয়ে বেশি ওটিটিমুখী হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ওটিটিকে চ্যালেঞ্জিং সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। কারণ, দর্শকদের চোখ এখন নেটফ্লিক্স, অ্যামাজনমুখী। কোন প্ল্যাটফর্মে কী মুক্তি পাচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো দেখছেন দর্শক। রাব্বি বলেন, ‘ওটিটিতে আগে আরও ভালো গল্প হয়েছে। সেখানে আমরা এখন নানা রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এমন নয় যে আমাদের বাজেট কমেছে। কিন্তু দিন শেষে দর্শক আমাদের প্রোডাকশন দেখে দিল্লি ক্রাইম, মির্জাপুর, পাতাললোক-এর সঙ্গে তুলনা করে। একটা মির্জাপুর-এর বাজেটের সমান বাংলাদেশের প্রায় সব ওটিটির বাজেট। আমাদের যেমন বাজেট দরকার, তেমনি দরকার ভালো গল্প। দর্শক ধরতে হলে গল্পের ট্রিটমেন্টেও পরিবর্তন আনতে হবে।’

মীর রাব্বি

যে জন্য অপেক্ষা
সিনেমা দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু হলেও সেই সিনেমা নিয়ে মনের কোণে রয়েছে হতাশা। কারণ, দেশের দর্শক এ মুহূর্তে সিনেমামুখী নন। হাতে গোনা কয়েকটি হল। রাব্বি বলেন, ‘এমনও অনেক জেলা রয়েছে, যেখানে কোনো সিনেমা হলই নেই। কিন্তু ভালো সিনেমা দেখার দর্শক রয়েছে। প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে যদি ভালো মানের সিনেমা হল করা যায়, তাহলে সিনেমার দিন ফিরতে পারে। মাধ্যম বাড়াতে হবে। তাহলে সব জায়গায় দর্শক বাড়বে। তবে মনে রাখতে হবে, এখন দর্শকদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। দর্শকদের প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিতে হবে।’

‘এন্ড কাউন্টার’– এ পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাব্বী। ছবি: সংগৃহীত