‘হাসিন দিলরুবা’র সেই প্রেমিক জুটির কথা মনে আছে? দাম্পত্যজীবনের অভিমান, ধোঁকা থেকে প্রেম-প্রতিশোধের কাহিনি নিয়ে ২০২১ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি ছাপ ফেলেছিল দর্শকদের মনে। ছিমছাম গল্প আর রোমাঞ্চকর সমাপ্তির অনেকেই অপেক্ষায় ছিলেন পরের কিস্তির। রানী আর ঋষুর কী হলো শেষ পর্যন্ত সেটাও জানতে কৌতূহলী ছিলেন সিনেমাপ্রেমীরা।
অবশেষে ৯ আগস্ট নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে ‘হাসিন দিলরুবা’র সিকুয়েল ‘ফির আয়ি হাসিন দিলরুবা।’ প্রথম কিস্তি বানিয়েছিলেন ভিনিল ম্যাথু, এবার সিকুয়েল সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন জয়প্রদ দেশাই। তবে দুই কিস্তির লেখক একই আছেন—কণিকা ধিলোঁ।
একনজরেসিনেমা: ‘ফির আয়ি হাসিন দিলরুবা’জনরা: রোমান্টিক থ্রিলারস্ট্রিমিং: নেটফ্লিক্সপরিচালক: জয়প্রদ দেশাইঅভিনয়: তাপসী পান্নু, বিক্রান্ত ম্যাসি, সানী কৌশল, জিমি শেরগিল
‘হাসিন দিলরুবা’ যেখানে শেষ হয়, এর পর থেকেই শুরু হয় এই সিনেমার গল্প। রানী ও ঋষু জাওয়ালপুর থেকে আগ্রায় চলে যায়। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ না রেখে নতুন করে তাদের জীবন শুরু করে। তবে পুলিশের কাছে ধরা পড়ার ভয়ে তারা আলাদা থাকে। কারও সঙ্গে কেউ সরাসরি যোগাযোগ করে না। ঋষু নতুন নাম নেয় রবি, যাতে কেউ তার আগের পূর্বপরিচয় জানতে না পারে। রানী ও ঋষু দুজনেই কাজ শুরু করে আর টাকা জমাতে থাকে দেশের বাইরে চলে যাওয়ার জন্য।
এদিকে রানীর প্রেমে পড়ে যায় মেডিকেল অফিসার অভিমন্যু। আর ঋষুর বাসার মালকিন পুনম চায় তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়াতে। অন্যদিকে স্থানীয় থানায় হাজির হন পুলিশ কর্মকর্তা মৃত্যুঞ্জয় মন্টু। তিনি সম্পর্কে ঋষু ও আগের পর্বে মারা যাওয়া নীলের চাচা। তিনি নতুন করে ভাতিজা নীলের মৃত্যুর তদন্ত শুরু করেন।
ঋষুকে বাঁচাতে রানী বিয়ে করে অভিমন্যুকে। তবে দুঁদে পুলিশ কর্মকর্তা ‘মন্টু চাচা’ সহজেই ধরতে পারেন রানীর চাল। কিন্তু ঘটনাক্রমে অভিমন্যু জেনে যায় ঋষুর কথা। রানী দেখতে পায় অভিমন্যুর এক নতুন রূপ, যার পরতে পরতে লুকিয়ে আছে ভয় ধরানো আতঙ্ক। রানী কি পারবে ঋষুর সঙ্গে এক হতে? পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিতে? নাকি স্বামীকে বাঁচাতে আবার জড়িয়ে পড়বে নতুন কোনো অপরাধে? জানতে হলে দেখতে হবে ‘ফির আয়ি হাসিন দিলরুবা’ সিনেমাটি।
সিনেমার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন তাপসী পান্নু, বিক্রান্ত ম্যাসি ও সানী কৌশল। কিন্তু আগের সিনেমার অভিনয়কে মোটে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি তাপসী, বিক্রান্ত কেউই। দুজনের রসায়নও তেমন জমে ওঠেনি পর্দায়। তার চেয়ে বরং সানীর অভিনয় ভালো ছিল। জটিল এক চরিত্রকে তিনি দুর্দান্তভাবে পর্দায় তুলে ধরেছেন। ঠান্ডা গলায়, সাধারণ চাহনিতে তাঁর এক একটা সংলাপ বলা ছিল দুর্দান্ত। তবে একের পর এক টুইস্ট দেখাতে গিয়ে তাঁর চরিত্রটি যেন ঠিকভাবে ফুটে ওঠেনি। ‘মন্টু চাচা’ চরিত্রে জিমি শেরগিলের আগমন ছিল দুর্দান্ত। কিন্তু তাঁর মতো অভিনেতাকে মোটেও কাজে লাগানো হয়নি। শেষ পর্যন্ত তাই চরিত্রটি মাঠে মারা যায়।
গল্পের ধীরগতি আর চরিত্রদের দুর্বল বুনন পরিচালকের খামতিকেই যেন তুলে ধরছিল। বেশ কিছু জায়গার ধীরগতি চাইলেই এড়ানো যেত সহজে। একের পর এক চমক দিয়ে যদিও চেষ্টা করা হয়েছে এক চরিত্রকে অন্য চরিত্রের মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার, তবে গল্পে গভীরতা কম থাকায় কেউই সেটা পারেননি। তাই চরিত্ররা ফুটে ওঠার যেন সুযোগ কম পেয়েছে। দর্শকেরাও পাননি মনে রাখার মতো কাউকে।
গল্পেও নতুনত্বের অভাব ছিল। তবে হালকা মেজাজে সিনেমাটি দেখতে বসলে দর্শকেরা খুব একটা হতাশ হবেন না। ‘হাসিন দিলরুবা’র মতো ‘ফির আয়ি হাসিন দিলরুবা’তেও দীনেশ পণ্ডিতের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। তাঁর বইগুলোর এক একটা সংলাপ যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, তা বেশ প্রশংসনীয়।
তবে তাঁর ব্যাপারে সবচেয়ে অবাক করা তথ্য জানতে দর্শকদের অপেক্ষা করতে হবে একদম শেষ দৃশ্য পর্যন্ত। সিনেমার গল্পের গাঁধুনিতে বেশ কিছু বড় ফাঁক চোখে পড়বে। তবে শেষ পর্যন্ত সব প্রশ্নেরই উত্তর মেলে।
তবে ‘হাসিন দিলরুবা’ সিনেমার শেষটা দর্শককে যতটুকু চমকে দিতে পেরেছিল, ‘ফির আয়ি হাসিন দিলরুবা’ সে ক্ষেত্রে অনেকটাই ব্যর্থ। চমক ছিল না তা না, তবে দর্শকদের কি একই চমকে বারবার মুগ্ধ করা যায়? ‘হাসিন দিলরুবা’ ফ্র্যাঞ্চাইজিতে লেখক কনিকা ধিলোঁ মূলত হিন্দি পাল্প ফিকশন লেখকদের শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে চেয়েছেন; তবে দুর্বল চিত্রনাট্যের কারণে সে চেষ্টা পুরোপুরি সফল হয়নি।