ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম নেই। তবে আছে ওয়াকম্যানে গান শোনা। আর আছে নাচে-গানে ভরপুর হিন্দি সিনেমা। আরও এমন অনেক কিছুই আছে যা আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে নব্বইয়ের দশকে, উসকে দেবে অনেক স্মৃতিই। তবে সিরিজটি দেখতে বসে খুব বেশিক্ষণ আপনি স্মৃতি রোমন্থনের সুযোগ পাবেন না; অ্যাকশন আর রোমাঞ্চ আপনাকে টেনে নেবে। হচ্ছিল ‘সিটাডেল: হানি বানি’র কথা। রাতে অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওতে মুক্তি পেয়েছে রাজ ও ডিকের সিরিজটি। স্পাই-থ্রিলার ঘরানার সিরিজটি নির্মিত হয়েছে নব্বইয়ের দশকের প্রেক্ষাপটে। ধুন্ধুমার অ্যাকশনের কারণে অনেক দর্শকই পছন্দ করেছেন সিরিজটি। সত্যিই কি সিরিজ হিসেবে জমল ‘সিটাডেল: হানি বানি’?
একনজরে‘সিটাডেল: হানি বানি’পরিচালক: রাজ নিডিমরু ও কৃষ্ণ ডিকেঅভিনয়: বরুণ ধাওয়ান, সামান্থা রুথ প্রভু, কে কে মেনন, সাকিব সেলিম, সিকান্দর খের, কাশভি মজুমদারস্ট্রিমিং: অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওপর্ব সংখ্যা: ৬পর্বের দৈর্ঘ্য: ৪৫-৫৫ মিনিটকেন দেখবেন: দুর্দান্ত অ্যাকশন
নিজের মতো কিছু করতে চায় হানি। হাজির হয় বম্বেতে। অডিশন দিতে হাজির হয় সিনেমা পাড়ায়। এদিকে সিনেমায় স্টান্টম্যান হিসেবে কাজ করে বানি। স্টান্টম্যান হিসেবে কাজ করলেও বানি আদতে একটি সংস্থার এজেন্ট।
হানিকেও নিজের দলে ভেড়াতে চায়। শুরুতে না করে দেয় সে। পরে অর্থাভাবে জর্জরিত হানি বুঝতে পারে, এটা করা ছাড়া তার আর উপায় নেই। এভাবেই সে জুড়ে যায় বানিদের দলে। এই সংস্থা চলে ‘বাবা’ ওরফে ‘বিশ্ব’-এর কথায়। এক মিশনে তারা হাজির হয় বিদেশে।
সেখানে এমন এক ঘটনা ঘটে, হানি আর বানি আলাদা হয়ে যায়। আট বছর পর খোঁজ মেলে হানির। তার পিছু নেয় বিশ্বর দল, এ ছাড়া আরেকটি গুপ্তচর সংস্থা সিটাডেলও তাকে পেতে মরিয়া। অতীত মুছে দিয়ে হানি তত দিনে দেরাদুনের এক রেস্তোরাঁ চালায়। মেয়ে নাদিয়াকে নিয়ে সেখানেই থাকে। তবে হঠাৎই তছনছ হয়ে যায় তার জীবন। মেয়েকে নিয়ে আবারও ছুটতে হয় জীবন বাঁচাতে। এরপর কী হয়, তা নিয়েই এগিয়েছে গল্প।
‘সিটাডেল: হানি বানি’ মূলত গত বছর মুক্তি পাওয়া ‘সিটাডেল’ সিরিজের প্রিকুয়েল। এই ফ্র্যাঞ্চাইজির ক্রিয়েটর নন্দিত হলিউড নির্মাতা জো ও অ্যান্থনি রুশো। গত বছর ‘সিটাডেল’-এ দেখা যায় রিচার্ড ম্যাডেন ও প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে। রাজ ও ডিকের ‘সিটাডেল: হানি বানি’ সেই সিরিজের আগের গল্পই দেখিয়েছে। এই সিরিজের সামান্থার মেয়ে নাদিয়া, বড় হওয়ার পর ‘সিটাডেল’-এ যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রিয়াঙ্কা।
১৯৯২ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সময়ের গল্প বলেছেন রাজ ও ডিকে। এই নির্মাতাদ্বয়ের বেশি ধন্যবাদ প্রাপ্য পর্দায় সেই সময়ে যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারায়। ‘সিটাডেল: হানি বানি’র সবচেয়ে ভালো দিক এর অ্যাকশন। সিনেমাটিতে যেভাবে অ্যাকশন কোরিওগ্রাফি করা হয়েছে, সেটা ভারতীয় কাজের ক্ষেত্রে বিরল। ভারতের সেরা অ্যাকশন সিরিজও বলা যেতে পারে এটিকে। হ্যান্ড টু হ্যান্ড অ্যাকশন, ধাওয়া, মুহুর্মুহু গোলাগুলি সবই ছিল চোখধাঁধানো।
সিরিজের আরেকটি ইতিবাচক দিক সামান্থা রুথ প্রভু আর বরুণ ধাওয়ানের নজরকাড়া উপস্থিতি। রাজ ও ডিকের ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’-এর দ্বিতীয় মৌসুমে অ্যাকশন তারকা হিসেবে চমকে দিয়েছিলেন সামান্থা। এই সিরিজে আরও বেশি অ্যাকশন দৃশ্যে দেখা গেছে তাঁকে। অ্যাকশন থেকে শুরু করে সিঙ্গেল মাদার হিসেবে পর্দায় পুরোপুরি অসহায়ত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। বরুণ ধাওয়ানকেও গতানুগতিক হিন্দি সিনেমার বাইরে এ সিরিজে দেখতে মন্দ লাগে না। অনেকের তাঁকে দেখে শ্রীরাম রাঘবনের ‘বদলাপুর’-এর কথা মনে পড়ে যেতে পারে।
অভিনয়ে চমকে দিয়েছেন কাশভি মজুমদার। তিনি অভিনয় করেছেন সামান্থা ও বরুণের মেয়ে নাদিয়ার চরিত্রে। ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’ থেকে শুরু করে রাজ ও ডিকের প্রায় সব কাজেই শিশুশিল্পীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে, ‘হানি-বানি’ও ব্যতিক্রম নয়। এ সিরিজে ছোট্ট কাশভি দুর্দান্ত করেছে, সামান্থার সঙ্গে তার রসায়নও জমেছে বেশ।
তবে ‘সিটাডেল: হানি বানি’র খামতি থেকে গেছে চিত্রনাট্যে। সিরিজে কেবল অ্যাকশনই আছে, অন্য কিছু যেন থেকেও নেই। খল চরিত্রে কে কে মেননের খুব বেশি কিছু করার ছিল না, তাঁর চরিত্রটির ঠিকঠাক লেখাই হয়নি। আর গল্পও খুব সাদামাটা।
আজকালকার ওটিটির দর্শক দেশ-বিদেশের এন্তার স্পাই-থ্রিলার সিরিজ দেখেন, তাঁদের এত অল্পতে মন ভরবে কেন। সিরিজে দুই গুপ্তচর সংস্থার মধ্যে রেষারেষির ব্যাপারটিও সেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি, অনেক কিছুই মনে হয়েছে উদ্দেশ্যহীন।
শেষটাও হয়ে যায় হঠাৎই। সিরিজের বড় সমস্যা আবেগকে ঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে না পারায়। সামান্থা-বরুণের রসায়ন সেভাবে জমে না, একই কথা প্রযোজ্য অন্য অনেক চরিত্রের ক্ষেত্রেই। ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’ এত দর্শক পছন্দ করেছিল সিরিজটিতে আবেগের উপস্থিতির কারণে, এই জায়গায় পিছিয়ে আছে ‘হানি বানি’।
তবে দুর্দান্ত অ্যাকশন, সিনেমাটোগ্রাফি পুষিয়ে দিয়েছে অনেকটাই। প্রায় ছয় ঘণ্টার সিরিজ, অ্যাকশনধর্মী কাজের ভক্তরা দেখতেই পারেন। আর পারেন ‘সিটাডেল’ ফ্র্যাঞ্চাইজির দর্শকেরা। ‘সিটাডেল’-এর আগের দুই কিস্তিকে অনেক বিচারেই ছাড়িয়ে গেছে ভারতীয় সংস্করণটি।