কোহরা: মুক্তির পর থেকেই যে কারণে আলোচনায় এই হিন্দি সিরিজ

ওয়েব সিরিজ ‘কোহরা’র একটি দৃশ্য
আইএমডিবি

সিরিজের পাত্র–পাত্রীদের প্রায় কাউকেই আপনি চেনেন না। মুক্তির আগে সিরিজটি নিয়ে কোনো প্রচারও হয়নি। তারপরও কেন সিরিজ দেখবেন? যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা কেনই–বা এটিকে চলতি বছরের অন্যতম সেরা হিন্দি সিরিজ বলছেন? এককথায় এর উত্তর দেওয়া শক্ত। তার চেয়ে বরং শুরু থেকেই শুরু করা যাক। গল্পের শেষে হয়তো আপনি উত্তরটা পেয়ে যাবেন।

‘দ্য নাইট ম্যানেজার’, ‘ট্রায়াল বাই ফায়ার’, ‘ফরজি’, ‘স্কুপ’, ‘দাহাড়’ থেকে ‘জুবলি’—চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে একের পর এক প্রশংসিত সিরিজ মুক্তি পেয়েছে। পরের ছয় মাসের শুরুটাও হলো দুর্দান্ত।

১৪ জুলাই নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে ‘কোহরা’, ছয় পর্বের সিরিজটি নিয়ে মুক্তির আগে তেমন আলাপ হয়নি। নেটফ্লিক্সের পক্ষ থেকেও সেভাবে প্রচার চালানো হয়নি। তবে সিরিজপ্রেমীরা ঠিকই জানতেন, ভালো কিছু আসছে। কারণ, এই সিরিজের ক্রিয়েটর যে সন্দীপ শর্মা! আগে ‘উড়তা পাঞ্জাব’-এর মতো সিনেমা, ‘পাতাল লোক’-এর মতো সিরিজ এসেছে যাঁর হাত ধরে।

কিছুদিন আগে জিও সিনেমাতে মুক্তি পাওয়া সিরিজ ‘অসুর টু’ নিয়ে কম মাতামাতি হয়নি। এই সিরিজের ভক্ত যদি হন, আর ভারতের টিভি সিরিয়াল দেখার অভ্যাস থাকে, তাহলে বরুণ সবতি নামটা আপনার নিশ্চয়ই জানা।

ওয়েব সিরিজ ‘কোহরা’র একটি দৃশ্য

‘কোহরা’য় আমজনতার চেনামুখ বলতে তাঁর নামই আসবে কেবল, বাকি অনেককেই হয়তো আপনি প্রথমবার আবিষ্কার করবেন। প্রায় অচেনা অভিনেতা নিয়ে, কোনো প্রচার ছাড়াই কীভাবে মুক্তির পর সিরিজটি দর্শক-সমালোচকদের মন কেড়ে নিল?

গল্প, চিত্রনাট্য, অভিনয় আর নির্মাণ মিলিয়ে ‘কোহরা’ টিম যে মায়াজাল তৈরি করেছে, তাতে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। তবে এটি যে খুব টান টান গল্প, পরতে পরতে টুইস্ট লুকিয়ে রেখেছে, ব্যাপারটি তেমন নয়। আবার এটি এমনও সিরিজ নয়, যার অনেক কিছুই আপনার মাথার ওপর দিয়ে যাবে।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী ভারতীয় পল বিয়ে করতে নিজের রাজ্য পাঞ্জাবে আসে। কিন্তু বিয়ের আগেই খেতে তার লাশ পাওয়া যায়। কে খুন করল তাকে? সঙ্গে তার বন্ধু লিয়াম কি না, ব্রিটিশ নাগরিক সে–ও লাপাত্তা। অচেনা, বিদেশে এসে সেও–বা গেল কোথায়। তদন্তে নামে পাঞ্জাব পুলিশের সাবইন্সপেক্টর বলবীর সিং ও তার এএসই গারুন্ডি। শুনে ক্রাইম, থ্রিলার মনে হলেও ‘কোহরা’ পুরোপুরি সেটা নয়। খুনের তদন্তের মোড়কে দুর্দান্ত এক ড্রামা বানিয়েছেন নির্মাতারা। সুদীপ শর্মা পাঞ্জাবের গল্প বললে কী হয়, তার প্রমাণ তিনি ‘উড়তা পাঞ্জাব’-এ দিয়েছেন। এখানেও তাঁর ব্যতিক্রম নয়।
সিরিজে তিনি মাদক, প্রবাসী বরকে বিয়ে করে পাঞ্জাবের নারীদের বিদেশে স্থায়ী হওয়ার প্রবণতা, দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ, রাজনীতিবিদ—সবই তুলে এনেছেন।

ওয়েব সিরিজ ‘কোহরা’র একটি দৃশ্য

সিরিজের প্রধান চরিত্র বলবীর সিং রূপে সুবিন্দর ভিকি অসাধারণ অভিনয় করেছেন। তদন্তে দিশাহারা হওয়া, পারিবারিক ব্যর্থতা, পেশাগত ব্যর্থতা, ওপরের চাপ—দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। তাঁর অধীনস্থ কর্মকর্তা গারুন্ডির চরিত্রে বরুণ সবিতও দারুণ। যেমনভাবে সিরিজের অন্য পাত্র–পাত্রীরাও। সিরিজে দেখা গেছে র‍্যাচেল শেলিকেও প্রায় দুই যুগ আগে আমির খান অভিনীত ‘লগান’ ছবিতে অভিনয় করে ভারতের দর্শকের কাছে যিনি পরিচিতি পেয়েছেন।

চলতি বছরেই নেটফ্লিক্সের আরেক মিনি সিরিজ ‘ট্রায়াল বাই ফায়ার’ মুক্তির পর ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। সেই সিরিজের দুই নির্মাতার একজন রণদীপ ঝা পরিচালনা করেছেন ‘কোহরা’। টানা দুই সিরিজের সাফল্যের পর তাঁর পরের কাজের জন্য মুখিয়ে থাকবেন দর্শক।

ওয়েব সিরিজ ‘কোহরা’র একটি দৃশ্য

‘কোহরা’ অর্থ কুয়াশা। সিরিজের প্রথম দৃশ্যটিও শুরু হয় কুয়াশার মধ্যেই। ‘কোহরা’র প্রায় সব চরিত্রই ধূসর, প্রত্যেকের চরিত্রের নানা স্তর আছে। এটিই সিরিজটিকে অন্য স্তরে নিয়ে গেছে। ‘কোহরা’য় যৌনতা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে সেটা কীভাবে, সেটা জানতে দেখতে হবে পুরো সিরিজ।

ইনভেস্টিগেটিং থ্রিলারের আড়ালে ‘কোহরা’ আসলে জেনারেশন গ্যাপের গল্প। তরুণ প্রজন্মের চাহিদা, জীবনযাপনের সঙ্গে তাঁদের আগের প্রজন্মের যোগাযোগের যে কতটা ফারাক, সেটাই যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো হয়েছে। মা–বাবার সঙ্গে সন্তানদের এই ব্যবধানের পরিণতি যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে, সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছে সিরিজটি।