‘সিন্ডিকেট’, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’, ‘গোলাম মামুন’–এর সিরিজ বানিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন শিহাব শাহীন।
‘সিন্ডিকেট’, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’, ‘গোলাম মামুন’–এর সিরিজ বানিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন শিহাব শাহীন।

শিহাব শাহীনের সাফল্যের রহস্য কী

‘আগস্ট ১৪’, ‘মরীচিকা’, ‘মায়াশালিক’, ‘সিন্ডিকেট’, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’, ‘কাছের মানুষ দূরে থুইয়া’ থেকে হালের ‘গোলাম মামুন’—ওটিটিতে শিহাব শাহীনের বেশির ভাগ কাজই আলোচিত হয়েছে। দেশি ওটিটি প্ল্যাটফর্মের শুরুর দিকে যেসব নির্মাতা নিয়মিত কাজ করছেন, তাঁর মধ্যে তিনি অন্যতম।

পরপর দর্শকপ্রিয় ওয়েব সিরিজ ও সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি। তাই বহুল চর্চিত হলেও গতকাল দুপুরের আলাপের শুরুতেই তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়—ওটিটিতে টানা সাফল্যের রহস্য কী?

কাজটা ভালো করে মনোযোগ দিয়ে করতে হয়—শুরুতে এককথায় উত্তর দিলেন নির্মাতা। একটু পরেই বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন শিহাব শাহীন। তিনি জানান নিজের কাজের দর্শন।

অনেকেই বলেন আমরা আসলে তখন টিভির জন্য সিনেমাই বানিয়েছি। এটা আসলে নির্মাতাদের মধ্যে একটা বোধ তৈরি করেছে, দক্ষতাকে আরও শাণিত করেছে। টিভিতে আমরা খুব কম বাজেটে কাজ করেছি। এখন ওটিটি প্ল্যাটফর্মে কাজের বাজেট বেড়েছে, পরিসর বেড়েছে; বাজেটের মধ্যে সেরা কাজ বের করে আনার অভ্যাস টিভি থেকেই হয়েছে
শিহাব শাহীন
শিহাব শাহীন। কবির হোসেন

শিহাব শাহীন বলেন, ‘প্রথমে কাজটি নিয়ে দর্শক হিসেবে ভাবি। নিজের কাছে ভালো লাগলে তারপরই এগোই। আমার নিজের কাছে ভালো লাগলে দর্শকও কাজটির সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে। প্রতিটি কাজ চেষ্টা করি যতটা সম্ভব ডিটেইলে তুলে ধরতে, এটা দর্শকও পছন্দ করেন। এ ছাড়া আমি চেষ্টা করেছি সব সময় সমসাময়িক থাকতে। দেশে বা দেশের বাইরে কী হচ্ছে, সেটির একটা ছাপ হয়তো কাজে রয়ে গেছে। এসব দর্শকপ্রিয়তার কারণ হতে পারে, বাকিটা হয়তো গিফটেড।’

ওটিটির এই সাফল্যের পেছনে টেলিভিশনে কাজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে বলেও জানান এই নির্মাতা। ওটিটিতে গল্প বলা, চরিত্র নির্মাণে তাঁর যে মুনশিয়ানা সেটির ভিত তৈরি হয়েছে ছোট পর্দার জন্য কাজ করতে করতেই।

‘গোলাম মামুন’–এর পোস্টার থেকে। ফেসবুক থেকে

টিভি আরও দুটি বিষয় শিখিয়েছে—সময়ের মধ্যে ও নির্দিষ্ট বাজেটে কাজ করা। আগে অনেক টেলিফিল্ম নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন। এক–দেড় ঘণ্টার দৈর্ঘ্যের এই টেলিফিল্মগুলো তাঁকে নির্মাতা হিসেবে আরও পোক্ত করে তুলেছে বলেও মত দিলেন হালের আলোচিত এই পরিচালক। ‘অনেকেই বলেন আমরা আসলে তখন টিভির জন্য সিনেমাই বানিয়েছি। এটা আসলে নির্মাতাদের মধ্যে একটা বোধ তৈরি করেছে, দক্ষতাকে আরও শাণিত করেছে। টিভিতে আমরা খুব কম বাজেটে কাজ করেছি। এখন ওটিটি প্ল্যাটফর্মে কাজের বাজেট বেড়েছে, পরিসর বেড়েছে; বাজেটের মধ্যে সেরা কাজ বের করে আনার অভ্যাস টিভি থেকেই হয়েছে’—বললেন শিহাব শাহীন।

এ ছাড়া টিভিতে দীর্ঘদিন কাজের সুবাদে দর্শকদের চাহিদা বোঝার ক্ষমতাও তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’–এ নাসির উদ্দিন খান

ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো থ্রিলার কনটেন্টের প্রাধান্য দেখা যায়; কিন্তু শিহাব শাহীন থ্রিলারের পাশাপাশি ‘মায়াশালিক’, ‘কাছের মানুষ দূরে থুইয়া’র মতো রোমান্টিক কাজও করেছেন। তবে আলাপে আলাপে নির্মাতা জানান কনটেন্ট থ্রিলার হবে নাকি রোমান্টিক ঘরানার হবে তাঁর চেয়েও তিনি বেশি ভাবেন ড্রামা নিয়ে। শিহাব শাহীনের ভাষ্যে, ‘পর্দায় ড্রামা আর মানুষের সম্পর্ক তুলে ধরা নিয়ে ভাবি। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, পর্যবেক্ষণ, পড়াশোনা মিলিয়ে নিজের ভেতরেই একটা বোধ তৈরি হয়েছে; আমার কাজে তাই বারবার সম্পর্কের গল্প উঠে এসেছে। সেটা থ্রিলারই হোক বা রোমান্টিক গল্পই হোক।’

ওটিটিতে কাজ করতে এসে শিহাব শাহীনের নাম জড়িয়ে গেছে একটি ‘প্রথম’-এর সঙ্গে। দেশের প্রথম স্পিন-অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ বানিয়েছেন তিনি। দ্বিতীয় স্পিন-অফ সিরিজ ‘গোলাম মামুন’ও তাঁর। দুটিই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিদেশে অনেক দিন থেকেই স্পিন-অফ সিরিজ হলেও বাংলা কনটেন্টে এটার চল ছিল না। কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?

এমন প্রশ্নের উত্তরে শিহাব শাহীন বলেন, ‘স্পিন-অফ সিরিজটির মতো আরেকটি সিরিজের একটি চরিত্র ধরে কাজ করা। প্লট ও গল্প গুরুত্বপূর্ণ হলেও ওটিটিতে কিন্তু চরিত্র নির্মাণই বড় বিষয়। চরিত্রটির লক্ষ্য কী, তাঁর দর্শন কী, দুর্বলতা-সবলতা কী—সেসব ধরে নির্মাণই বড় চ্যালেঞ্জ। এটা নিয়ে কাজ করেছি।’

উপমহাদেশে একটা প্রবণতা দেখা যায়, কোনো নির্মাতা সফল হলে তাঁকে নিয়ে জনপ্রিয় সব প্ল্যাটফর্মই কাজ করতে চায়। বেশি কাজ হলে কি কাজের গুণগত মানে প্রভাব পড়তে পারে? শিহাব শাহীন আশ্বস্ত করলেন, তাঁর ক্ষেত্রে এমন আশঙ্কা নেই। কারণ তিনি কখনো একটি শেষ না করে অন্য প্রকল্প শুরু করেন না। বছরে দুটির বেশি কাজও করেন না।

শিহাব শাহীন। কবির হোসেন

গত কয়েক বছরে টিভি থেকে আসা নির্মাতারা চলচ্চিত্র নির্মাণে সফল হয়েছেন; কিন্তু ২০১৫ সালে ‘ছুঁয়ে দিলে মন’-এর পর আর বড় পর্দায় শিহাব শাহীনের সিনেমা পাওয়া যায়নি। নির্মাতা জানান, খুব বেশি অপেক্ষা করতে হবে না। ২০২৫ সালেই তাঁর সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে।