‘মোবারকনামা’য় মোশাররফ করিম ও শাহনাজ সুমি। কোলাজ
‘মোবারকনামা’য় মোশাররফ করিম ও শাহনাজ সুমি। কোলাজ

ধর্ষণের শিকার এক নারী আর খ্যাপাটে আইনজীবীর গল্প

সমাজের অনেক চেনা গল্প নিয়েই পাঁচ পর্বের নতুন সিরিজ ‘মোবারকনামা’। গোলাম সোহরাব দোদুল পরিচালিত সিরিজটি গত বৃহস্পতিবার মুক্তি পেয়েছে ।

তথাকথিত ‘আধুনিক’ পোশাক পরলেই কি রাস্তাঘাট বা গণপরিবহনে একজন তরুণীর শরীর স্পর্শ করতে পারবেন পুরুষ? নিজের মতো চলা একটা তরুণীকে নিয়ে যা খুশি তা-ই বলা যায়? এখনো দেখা যায়, কোনো তরুণী যৌন হয়রানির শিকার হন, তখন তাঁর পাশে পাড়ামহল্লার জ্যেষ্ঠ, প্রতিবেশী, এমনকি পরিবারের সদস্যদেরও পাওয়া যায় না! আর বড় বোনের স্বামীর কাছে কোনো নারী যদি ধর্ষণের শিকার হন, তাহলে হয়তো সমাজে মানসম্মান হারানোর ভয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়ে শেষ করে ফেলতে চায় পরিবারটি!

‘মোবারকনামা’র দৃশ্য। ছবি : ভিডিও থেকে নেওয়া

আমাদের সমাজের এমন অনেক চেনা গল্প নিয়েই ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচইয়ের পাঁচ পর্বের নতুন সিরিজ ‘মোবারকনামা’। গত বৃহস্পতিবার মুক্তি পাওয়া সিরিজটি পরিচালনা করেছেন গোলাম সোহরাব দোদুল। কী আছে এই সিরিজে? চলুন ঢুকে পড়া যাক ‘মোবারকনামা’য়।

‘তোর জামাই আমাকে রেপ করছে!’—‘মোবারকনামা’র গল্পের শুরুটা এখান থেকেই। বড় বোনের স্বামীর কাছে ধর্ষণের শিকার হন ছোট বোন সুরাইয়া। এরপর কী হয়, তা-ই নিয়েই ‘মোবারকনামা’।

মোশাররফ করিমকে এ ঘটনায় আইনজীবী মোবারক চরিত্রে দেখা গেছে। ব্যক্তিগত এক ট্রমায় চার বছরের বেশি সময় ধরে আদালত থেকে দূরে তিনি। তাই সুরাইয়াকে নিয়ে বন্ধু বিল্টু যখন তাঁর কাছে সাহায্য চাইতে যান, তিনি রাজি হন না। আর তিনি আদালতের পথ মাড়াতে চান না। কারণ, আদালত চত্বরে গেলেই তাঁর মনে পড়ে যাবে ‘দুঃস্বপ্নের অতীত’। পরে অবশ্য ঠিকই রাজি হন মোবারক। সুরাইয়াকে বলেন, মামলা না করলে উল্টো তিনিই সুরাইয়ার বিরুদ্ধে মামলা করবেন।

‘মোবারকনামা’র দৃশ্য। ছবি : ভিডিও থেকে নেওয়া

‘মহানগর’ সিরিজে ওসি হারুন চরিত্রের পর এই সিরিজে আইনজীবী মোবারক চরিত্রেও মোশাররফ করিম তাঁর অভিনয়ের জন্য প্রশংসার দাবিদার। চরিত্রের সংলাপ, অসহায়ত্ব, আদালতে দুঁদে আইনজীবীর ভূমিকায় দারুণভাবে মানিয়ে গেছেন তিনি।

ধর্ষণের শিকার নারী সুরাইয়াকে কেন্দ্র করেই সিরিজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গল্প এগিয়েছে। এই চরিত্রে দারুণ অভিনয় করেছেন শাহনাজ সুমি। কখনো তিনি অসহায়, কখনো প্রতিবাদী, কখনো উচ্ছল এক তরুণী—সব ভূমিকাতেই ভালোভাবে উতরে গেছেন এই অভিনেত্রী।

সিরিজে আইনজীবী মোবারকের স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া হাজির হয়েছেন নিতু চরিত্রে, সিরিজে তাঁর উপস্থিতি স্বল্প সময়ের। তবে যতক্ষণ ছিলেন, ভালো করেছেন তিনি।

‘মোবারকনামা’র দৃশ্য। ছবি : ভিডিও থেকে নেওয়া

এই সিরিজ দিয়ে অনেক দিন পর পর্দায় দেখা গেল নওরিন খান জেনিকে। আসামিপক্ষের হয়ে আইনজীবী সাবনিন চরিত্রে হাজির হয়েছেন তিনি। বেশির ভাগ হাততালি পাওয়া সংলাপ মোবারকের ভাগে পড়লেও মোটাদাগে জেনির প্রত্যাবর্তনও খারাপ হয়নি। তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীর চরিত্রটি আরও শক্তিশালী হতে পারত। সুরাইয়ার বড় বোন আবিদা চরিত্রে সামিয়া অথই, তাঁর স্বামী, অর্থাৎ ধর্ষণ মামলার আসামির চরিত্রে সাইদ জামান শাওনের অভিনয়ও মন্দ ছিল না।

সিরিজে দেখা গেছে, আইনজীবী মোবারক তাঁর পেশাগত জীবনে সব সময় সততার সঙ্গে সত্যের পক্ষে লড়েছেন। কিন্তু একটি মামলায় জয়ী হলেও পরে বুঝতে পারেন, তিনি আসলে হেরে গেছেন। এরপর মোবারক আইনপেশা থেকে সরে যান। পুরো সিরিজেই এই ‘তিক্ত অতীত’ তাড়া করে ফিরেছে তাঁকে।

‘মোবারকনামা’র দৃশ্য। ছবি : ভিডিও থেকে নেওয়া

সমাজে একজন নারী ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর তাঁর আশপাশের মানুষ অনেক সময়ই ‘জাজমেন্টাল’ আচরণ শুরু করেন। সেই বিষয়গুলো ছোট ছোট করে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে ‘মোবারকনামা’ সিরিজে। এই সিরিজে গল্পটি পুরো সমাপ্ত করে, পরবর্তী সিজন আসতে পারে—এমন ইঙ্গিত রয়েছে। সিরিজটি মাত্র দুই ঘণ্টার, তবে কিছু কিছু বিষয় আরও বিস্তারিতভাবে উঠে আসতে পারত।

‘মহানগর’-এর ওসি হারুনের ‘দুইডা কথা মনে রাখবা’ আলোচিত সংলাপ ধরে ‘মোবারকনামা’ সিরিজ নিয়ে আমার নিজের ‘দুইটা কথা’—এ ধরনের চরিত্রে মোশাররফ করিমই সেরা আর সমাজে মোবারকের মতো আইনজীবী দেখা যায় না।