‘বর্তমান সময়ে অ্যাকশন, থ্রিলার, হরর, কমেডি—এসব ধরনের সিরিজ আমরা কমবেশি দেখে থাকি। কিন্তু চাকরিজীবনের আগে ইন্টার্ন সময় নিয়ে সিরিজ আমি এর আগে বাংলা মিডিয়া জগতে দেখিনি। একজন ইন্টার্নের লাইফের বিভিন্ন গল্প নিয়ে সিরিজটির কাহিনি এগিয়েছে। নতুন ধারার গল্প মনে হয়েছে আমার কাছে,’ গত সপ্তাহে ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকিতে মুক্তি পাওয়া ‘ইন্টার্নশিপ’ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমনটাই লিখেছেন সুমাইয়া আলম। তাঁর মতো অনেক দর্শকের মধ্যেই সাড়া ফেলেছে এই ওয়েব সিরিজ। ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে সিরিজটি মুক্তি পেয়েছে। মুক্তির চার দিনেই আলোচনায় রেজাউর রহমানের ‘সিচুয়েশনাল কমেডি’।
গল্পের শুরুতেই দর্শকের বুঝতে সময় লাগে না, নির্ভেজাল এক হাস্যকৌতুকনির্ভর সিরিজে ঢুকে গেছেন তিনি। দেখা যায়, স্নাতক শেষ করে একটা বিজ্ঞাপনী সংস্থায় যোগ দেয় শুভ্র। সে ভেবেছিল একটা চাকরি পেলেই জীবনের সব সমস্যা শেষ হবে। কিন্তু ইন্টার্নশিপে গিয়ে দেখে তার জীবনে ঝামেলার শেষ নেই! প্রথম দিনেই বিপত্তি—বড় কর্মকর্তার জন্মদিনের সারপ্রাইজ পার্টিতে কেকের সর্বনাশ করে সাড়া ফেলে দেয় সে। নতুন নতুন অনেক অভিজ্ঞতাই হতে থাকে। একসময় ব্যক্তিজীবন আর কর্মজীবনের নিয়ে দ্বন্দ্বে পড়ে যায় শুভ্র।
সিরিজটি দেখার পর ফেসবুকে মেহেদি হাসান নামের একজন তাঁর কর্মজীবনের ইন্টার্নশিপের অভিজ্ঞার মিল খুঁজে পেয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘চরকি যে আমার মতো অসহায় ইন্টার্নদের সংগ্রামের জীবন সবার সামনে আনার প্রয়োজনবোধ করেছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার। বিদেশি সিটকম দেখে পাগল বাঙালি জাতির খোরাক যেন এবার পূরণ হলো! ইন্টার্নকালের যত তিক্ত অভিজ্ঞতা, হাসি-তামাশা—সবকিছুর এক অনন্য প্যাকেজ এটি। সম্ভাব্য ইন্টার্ন আর এই ধাপ পার করে যাওয়া সবার জন্য রিকমেন্ডেড একটি সিরিজ।’
‘বাবা-মা বলত এসএসসিটা পাস কর, তারপর যা মন চায় তাই করবি। তারপর বলল এইচএসসিটা পাস কর, তারপর ইউনিভার্সিটিতে উঠে নিজের মতো চলিস। ফাইনালি, ইউনিভার্সিটি শেষে বলল একটা ভালো জব শুরু কর...,’ এমনটা লিখে সানজানা শ্রুতি নামের একজন প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কথাগুলো চেনা চেনা লাগছে? এই কথাগুলো কখনো বলেনি এমন বাবা–মা নিশ্চয়ই এই দেশে নাই।’ এই দর্শক আরও লিখেছেন, ‘ইন্টার্নদের কেচ্ছাকাহিনি নিয়ে নির্মিত “ইন্টার্নশিপ” দেখতে বসলে অনেকের জেগে উঠবে পুরোনো স্মৃতি, আবার অনেক নতুন ইন্টার্ন নিজেকে পর্দায় খুঁজে পাবেন। যাঁরা ভবিষ্যৎ ইন্টার্ন, তাঁরা ভাই এখনই কষে ফেলেন ইন্টার্নশিপ নামক এই অত্যাচার থেকে পালিয়ে বাঁচার ছক।’
সিরিজে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন সৌম্য জ্যোতি। মুক্তির পর কেমন সাড়া পাচ্ছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘খুব ভয়ে ছিলাম। ভেবেছিলাম কাজটা মনে হয় কেউ দেখবে না। কিন্তু অদ্ভুতভাবে সবাই কাজটা দেখছে, সেই সঙ্গে ভালোও বলছে। আমার বিশ্বাস ছিল যে গল্পটার সঙ্গে মানুষ কানেক্ট করতে পারবে। সবচেয়ে অবাক লেগেছে (নির্মাতা সৈয়দ আহমেদ) শাওকী ভাই যখন ভালো বলেছেন। ভাইয়ের টেক্সট পাওয়ার পর আমি খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।’
সিরিজটিতে শম্পা রেজার মতো জ্যেষ্ঠ শিল্পীর উজ্জ্বল উপস্থিতি যেমন দেখা গেছে, তেমনি আছেন তাসলিমা নদী, প্রিয়ন্তী উর্বী, সারা আলম, সাদিয়া আয়মানের মতো তুলনামূলক নবীন শিল্পী। সবার অভিনয় সাবলীল ছিল বলে মত দিয়েছেন বেশির ভাগ দর্শক। তাওহীদ আফ্রিদি, রাকিন আবসার, কারিনা কাইসার, ডানা ভাইয়ের মতো জনপ্রিয় ইনফ্লুয়েন্সারের উপস্থিতি বাড়তি আনন্দ দিয়েছে।
সিরিজটি নিয়ে পরিচালক রেজাউর রহমান বলেন, ‘সিরিজটার সঙ্গে আমার অনেক আবেগ জড়িয়ে আছে। ভাবিনি দর্শক সিরিজটি দেখে এত দ্রুত সাড়া দেবে। অন্য রকমের এক ভালো লাগা কাজ করছে। দর্শকের এমন সাপোর্ট আমার সামনের কাজের প্রেরণা হয়ে থাকবে।’