চুপ থাকার গল্প নয়

‘দ্য সাইলেন্স’ সিরিজের একটি দৃশ্য
ছবি : সংগৃহীত

মেহজাবীন, শ্যামল মাওলা থেকে শুরু করে আজিজুল হাকিম, বিজরী বরকতুল্লাহ—সবারই মুখ সেলাই করা। প্রিয় তারকাদের এই রূপে দেখে চমকে গেছেন ভক্তরা। কেন তাঁদের মুখে সেলাই, কেনই–বা ফেসবুক স্ট্যাটাসে মেহজাবীন লিখলেন, ‘এভাবে আর কত দিন মুখ বন্ধ করে রাখব?’ মেহজাবীনদের কী হলো—ভক্তদের মনে যখন এমন অনেক কৌতূহলী প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল, ঠিক সে সময় জানা গেল, এটা ছিল ওয়েব সিরিজ ‘দ্য সাইলেন্স’–এর প্রচারণা কৌশল। গল্প সম্পর্কে ধারণা দিতেই পরিচালক ভিন্ন পথে হেঁটেছেন। তাতে তিনি যে সফল, দর্শকেরাই সেটা বলছেন। গত সপ্তাহে বিঞ্জে মুক্তির পর থেকে দর্শকদের আলোচনা ও প্রশংসায় ভাসছে সিরিজটি।

‘দ্য সাইলেন্স’ সিরিজের একটি দৃশ্য

‘দ্য সাইলেন্স’ মূলত একটা খেলার গল্প। খেলোয়াড় অয়ন ও রুবি। কিন্তু কেমন খেলা, সেটা বোঝা যাবে সিরিজটি দেখার পর। অতিভোজন, হিংসা, ক্রোধ, অহংকার, লোভ, লালসা, অলসতা—এগুলোই ‘দ্য সাইলেন্স’-এর বিষয়। অন্য রকম ভালোবাসার গল্পও অবশ্য আছে। সিরিজটি নির্মাণ করেছেন ভিকি জাহেদ। ‘পুনর্জন্ম’, ‘রেডরাম’সহ ভিকি জাহেদের নির্মাণের সঙ্গে যাঁরা পরিচিত, তাঁরা জানেন, থ্রিলারটা তিনি ভালোই বানান। ‘দ্য সাইলেন্স’ও ব্যতিক্রম নয়। সাধারণ দর্শকের পাশাপাশি অভিনয়শিল্পী, পরিচালকসহ অনেকেরই মন কেড়েছে সিরিজটি। সিরিজটির সবচেয়ে বড় চমক মডেল ও অভিনয়শিল্পী সজল। অনেকেই বলছেন, সিরিজটিতে নিজেকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছেন তিনি।

ঢাকা শহর ও আশপাশের দোহার এবং পূর্বাচলে হয়েছে ‘দ্য সাইলেন্স’–এর শুটিং। ১৪ দিনেই সিরিজটির শুটিং শেষ করেন পরিচালক। আগেও ‘ডার্ক’ ঘরানার কাজ করেছেন ভিকি জাহেদ। তবে ‘দ্য সাইলেন্স’ মুক্তির আগে একটু চিন্তায় ছিলেন। দর্শকেরা কীভাবে গ্রহণ করবেন, এ নিয়েও টেনশন ছিল। তবে মুক্তির পর দর্শকেরা নিরাশ করেননি। জানান, প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তিই বেশি যোগ হয়েছে। ভিকি বলেন, ‘এটা যে ধরনের গল্প, বাংলাদেশে এর আগে এমন কিছু তৈরি হয়েছে বলে মনে হয় না। কাজটা নিয়ে দর্শক অস্বস্তি অনুভব করেননি। শেষ না দেখে উঠতে পারেননি। তবে আমি খুব ভয়ে ছিলাম। এটা যেহেতু নিরীক্ষাধর্মী গল্প, তাই সংশয়ে ছিলাম, মানুষ কীভাবে নেয়, সেটা নিয়ে।’

‘দ্য সাইলেন্স’ সিরিজের পাত্রপাত্রীরা

শুধু সাধারণ দর্শক নয়, শিল্পী ও পরিচালকেরা ‘দ্য সাইলেন্স’ নিয়ে লেখালেখি করেছেন। জ্যেষ্ঠ অভিনয়শিল্পী ডলি জহুর যেমন প্রশংসা করেছেন, তেমনি করেছেন জাকিয়া বারী মম, মনিরা মিঠুসহ অনেকেই। ‘দ্য সাইলেন্স’–এ রুবি চরিত্রে অভিনয় করেছেন মেহজাবীন চৌধুরী। তিনিও জানান, মুক্তির পর থেকে অনেক ভালো সাড়া পাচ্ছেন, ‘শুধু যে আমি-ই পাচ্ছি, তা নয়। নির্মাণ, সিনেমাটোগ্রাফি, অভিনয় নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য দেখছি, শুনছি, পড়ছি। পুরো টিম প্রশংসা পাচ্ছে। অনেক ভালো লাগছে।’

চরিত্রটি হয়ে ওঠা তাঁর জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল বলে জানান মেহজাবীন। তবে গল্পের টানে সেই চ্যালেঞ্জ উতরে গেছেন। মেহজাবীন জানান, গল্পটা এত বেশি ইন্টারেস্টিং ছিল যে শোনার পরই কাজটি করতে রাজি হয়ে যাই। অভিনয়ের অনেক সুযোগ ছিল। মনে হয়েছে, যদি চরিত্রটা ফুটিয়ে তুলতে পারি, তাহলে দর্শকদের মায়াও লাগবে, আবার রাগও হবে। তাই এমন একটা চরিত্র হাতছাড়া করতে চাইনি। রুবিকে নিয়ে পরিচালকের দর্শন বুঝে আমার মতো করে গুছিয়ে নিই। মুখের গঠনে পরিবর্তন আনতে আলাদা দাঁত ব্যবহার করতে হয়েছে। এটা আসলেই অনেক কঠিন ছিল। দাঁতের ওপর দাঁত ব্যবহার করে কথা বলা, এক্সপ্রেশন দেওয়া—মোটেও সহজ ছিল না। কঠিন কিছু করতেই পছন্দ করি, তাই চেয়েছিলাম কথা বলা, বহিঃপ্রকাশভঙ্গি কিছুটা আলাদা-ই হোক।’

‘দ্য সাইলেন্স’ সিরিজের একটি দৃশ্য

দুই দশকের অভিনয়জীবনে বহুবার নিজেকে ভিন্নরূপে দর্শকের সামনে উপস্থাপন করেছেন সজল। কিন্তু ‘দ্য সাইলেন্স’–এ তিনি করেছেন শিবলি নামের চরিত্র, লোভী মানুষদের নিয়ে যে খেলতে ভালোবাসে। নানা ফাঁদে তাদের আটকে রাখে, নিতে চায় মন, আত্মা ও বিবেক; ছড়িয়ে দিতে চায় লোভ, লালসা, হিংসা! সজল বলেন, ‘ভিকি জাহেদের কাজ বরাবরই পছন্দের। তিনি যখন এই চরিত্রের কথা বললেন, সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে যাই। এখন টের পাচ্ছি, ভুল করিনি। সহশিল্পী হাকিম ভাই, বিজরী আপা, শ্যামল মাওলা, মেহজাবীনসহ পুরো ইউনিটের প্রতি কৃতজ্ঞতা।’

পরিচালক ভিকি জানিয়ে রাখলেন, ‘দ্য সাইলেন্স’–এর সিকুয়েল বানাতে পারেন। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে সেভাবেই চাচ্ছে। গল্পটা যেখানে শেষ হয়েছে, সেখান থেকে একটা সুযোগ রয়েছে সিকুয়েল তৈরির।