মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্রের কথা উঠলেই অনেকের মনে প্রথমেই আসে চাষী নজরুল ইসলামের ‘ওরা ১১ জন’ চলচ্চিত্রের নাম। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ওরা ১১ জন চলচ্চিত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে অভিনয় করিয়েছিলেন নির্মাতা-প্রযোজক। সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের না হলেও আরেকটি সিনেমার কথাও বলতে হয়, ‘জীবন থেকে নেয়া’। পাকিস্তান সেন্সর বোর্ড জহির রায়হানের এই সিনেমাকে আটকে দিয়েছিল। কিন্তু জহির হার মানেননি। সেন্সর বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে শুরু হয় তর্কবিতর্ক। সেই ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সালেহ সোবহান বানিয়েছেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘লাইটস, ক্যামেরা...অবজেকশন’। এটি ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকির নিজস্ব কনটেন্ট। মহান মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র সেকালের পূর্ণদৈর্ঘ্য ওরা ১১ জন বা একালের স্বল্পদৈর্ঘ্য লাইটস, ক্যামেরা...অবজেকশন থাকতে পারে স্বাধীনতা দিবসের কনটেন্ট দেখার তালিকায় শীর্ষে।
আজ ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস। দিবসটিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে দেখা যাবে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নানা কনটেন্ট। এর মধ্যে আছে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, নাটক, সিরিজ, অ্যান্থলজি, সিনেমা ইত্যাদি। সেই সূত্র ধরে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একগুচ্ছ কনটেন্ট দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে চরকি।
২৩ মার্চ থেকে ২৯ মার্চ স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মটিতে চলছে ‘স্বাধীনতা উৎসব’। এ উপলক্ষে চরকি প্ল্যাটফর্মে বিশেষ একটি বিভাগ যোগ করা হয়েছে। ‘ওরা ১১ জন’, ‘গেরিলা’, ‘আলোর মিছিল’, ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি’, ‘একাত্তরের যীশু’, ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ এবং চরকি অরিজিনাল সিরিজ ‘জাগো বাহে’—এ সাতটি সিনেমা শুধু নিবন্ধন করে ফ্রিতে দেখার সুযোগ রয়েছে।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে চরকিতে মুক্তি পেয়েছিল অ্যান্থলজি সিরিজ ‘জাগো বাহে’। সেই সিরিজের তিনটি পর্বে দেখা গেছে ভাষা আন্দোলন, ’৭০ ও ’৭১-এর প্রেক্ষাপট। ‘শব্দের খোয়াব’, ‘লাইটস...ক্যামেরা অবজেকশন’ ও ‘বাংকার বয়’ নামের পর্বগুলো পরিচালনা করেছেন সিদ্দিক আহমেদ, সালেহ সোবহান অনীম ও সুকর্ণ শাহেদ ধীমান। স্বাধীনতার এই দিনে দেখে ফেলতে পারেন চমৎকার এই সিরিজ।
‘ওরা ১১ জন’ চলচ্চিত্রের কথা কে না জানে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম এ সিনেমায় ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ, গেরিলাযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা তুলে ধরা হয়। সেই সঙ্গে দেখানো হয়েছে দেশীয় দালালদের পাকিস্তানিদের পক্ষে কাজ করার ঘৃণ্য ইতিহাস ও তার পরিণতি। এই ছবিতে তুলে আনা হয়েছে নারীদের বীরত্বগাথাও। মুক্তিযুদ্ধে বীরাঙ্গনা নারীর আত্মত্যাগ, যুদ্ধের ময়দানে পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের চিত্র উঠে এসেছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে একাত্তরের ডিসেম্বরে রণাঙ্গন থেকে অস্ত্র হাতে ঘরে ফিরেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
সেই অস্ত্র নিয়েই ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন খসরু, মুরাদ, হেলাল, বেবি, নান্টু, ওলীন, মঞ্জু, আতা, ফিরোজ, আবু, আলতাফরা। সিনেমার প্রয়োজনে কয়েকজন রাজাকারকেও ক্যামেরার সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
এ ছাড়া রাজ্জাক, শাবানা, নূতন, এ টি এম শামসুজ্জামানের মতো শিল্পীরাও ছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের প্রতিকূল পরিবেশে তখন সিনেমা নির্মাণ করা সহজ ছিল না। বলা যায়, দেশের প্রতি ভালোবাসার টানেই সেই অসাধ্য সাধন করেছিলেন দুই বন্ধু—প্রযোজক মাসুদ পারভেজ (সোহেল রানা) ও পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম। পুরোনো কালজয়ী চলচ্চিত্রের তালিকায় আরও আছে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘আলোর মিছিল’, শেখ নিয়ামত আলী ও মসিহউদ্দিন শাকের পরিচালিত ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’।
নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত ‘গেরিলা’ মুক্তি পায় ২০১১ সালে। সিনেমাটি সে বছর সর্বোচ্চ ১০টি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিল। জয়া আহসান, ফেরদৌস আহমেদ, শম্পা রেজা, আহমেদ রুবেল, এ টি এম শামসুজ্জামান অভিনীত এ চলচ্চিত্রটিও রয়েছে চরকির বিশেষ এই আয়োজনে।
তেমনি নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত আরও একটি সিনেমা ‘একাত্তরের যীশু’ও রয়েছে এ তালিকায়। এতে অভিনয় করেছেন পীযুষ বন্দোপাধ্যায়, হুমায়ুন ফরীদি, জহির উদ্দিন পিয়ার, শহীদুজ্জামান সেলিম, আবুল খায়ের প্রমুখ।
মাহবুবুর রহমান সমাজের সম্মানিত এক রাজনীতিবিদ। যে দেশ তিনি চাননি, সেই দেশের শাসকের জায়গায়ই বসেছেন তিনি।
একজন যুদ্ধাপরাধী নিজের কুৎসিত অতীত লুকিয়ে রেখে সেই দেশের শাসকের চেয়ারেই বসেছেন। ওদিকে তাঁর এই পাপের রেশ স্পর্শ করছে তাঁরই সন্তান কমলকে। কমল কি তার বাবার এই অতীত মেনে নেবে, নাকি তাঁকে দাঁড় করাবে তাঁর বিবেকের সামনে? মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও রেদওয়ান রনি পরিচালিত ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি’ সিনেমাটির গল্পটি এমন। এতে অভিনয় করেছেন সোহেল খান, মুনিরা মিঠুসহ আরও অনেকে।