হালের সম্ভাবনাময় তিন তরুণ শিল্পী আফিয়া তাবাস্সুম, শাশ্বত দত্ত ও মুবাশশীরা কামালকে নিয়ে এই আয়োজন।
ক্যামেরার পেছনে কাজ করতে চেয়েছিলেন আফিয়া তাবাস্সুম; দর্শকের কাছে তিনি ‘বর্ণ’ নামে পরিচিত। এক ফটোশুটে নির্ধারিত মডেল হাজির না হওয়ায় কপাল খুলেছিল তাঁর, ক্যামেরার পেছন থেকে সামনে আসেন।
মডেলিংয়ে ক্যারিয়ার শুরুর বছরখানেকের ব্যবধানে নাম লেখান নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ সিনেমায়। কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশ থেকে প্রথমবার মনোনয়ন পাওয়া সেই সিনেমায় ‘অ্যানি’ চরিত্রে অভিনয় করে পরিচিতি পান বর্ণ। এ বছর হইচইয়ে মুক্তিপ্রাপ্ত ইয়াসির আল হকের ওয়েব সিরিজ সাড়ে ষোলো–তে ‘নাতাশা’ চরিত্রে অভিনয় করে আলোচিত হয়েছেন তিনি।
কখনো অসহায়, কখনো শক্তিশালী; আবার অন্তরঙ্গ দৃশ্যেও সাবলীলভাবে নিজেকে মেলে ধরেছেন বর্ণ। সাড়ে ষোলো মুক্তির পর একের পর এক কাজের প্রস্তাব পাচ্ছেন, তবে বেশির ভাগ চরিত্রেই নাতাশার ছায়া রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বর্ণ বলেন, ‘নির্মাতাদের অনেকেই আমাকে নাতাশার মতো চরিত্র করার প্রস্তাব দিচ্ছেন। কিন্তু আমি একটা চরিত্রেই আটকে থাকেত চাই না, কোনো গণ্ডিতে বাঁধা পড়তে চাই না।’
বছর চারেকের ক্যারিয়ারে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’, ‘সাড়ে ষোলো’ ছাড়া চরকির ‘মারকিউলিস’ সিরিজেও অভিনয় করেছেন বর্ণ। প্রতিটি সিনেমা ও সিরিজে আলাদা আলাদা চরিত্রে দেখা গেছে তাঁকে।
‘ধীরে চলো’ নীতিতে বিশ্বাসী বর্ণ জানান, পছন্দের চিত্রনাট্যের জন্য অপেক্ষায় থাকবেন, তবু যাচ্ছেতাই কাজ করবেন না, ‘অভিনয় করতে আমার ভালো লাগে। সুযোগ পেলে ক্যারিয়ারটা অনেক দূর নিয়ে যেতে চাই, অনেক সময় নিয়ে অল্প কাজ করছি।’
ইতিমধ্যে একটি বড় আয়োজনের সিনেমায় নাম লিখিয়েছেন বর্ণ, আপাতত সেটি নিয়েই আছেন। একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের কাজ শেষ করেছেন। ঈদের টুকটাক কয়েকটি নাটকে দেখা যেতে পারে তাঁকে।
ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে (ইউল্যাব) ইংরেজিতে পড়েছেন বগুড়ার মেয়ে বর্ণ। ২০১৮ সালে আলোকচিত্রী কৌশিক ইকবালের সহকারী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি। নির্ধারিত মডেল না আসায় মডেল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন বর্ণ, এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।
কাজ পেতে ছয় বছর ঘুরেছেন শাশ্বত
চরকির ওয়েব সিনেমা পুনর্মিলনে–তে তাসনিয়া ফারিণের স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করে আলোচনায় এসেছেন তরুণ অভিনেতা শাশ্বত দত্ত। গতকাল প্রথম আলোকে জানান, সিনেমাটি মুক্তির পর নানা ধরনের চরিত্রের প্রস্তাব পাচ্ছেন তিনি; তাঁকে ব্যক্তিত্ববান প্রেমিক হিসেবে ভাবছেন নির্মাতা।
একসময় কাজের জন্য একের পর এক অডিশন দিলেও কাজ মেলেনি তাঁর। সেই শাশ্বত দত্তের এখন দুই হাত ভরা কাজ। বঙ্গবিডির ব্যানারে কাজল আরেফিনের অসময় সিরিজে তাসনিয়া ফারিণের প্রেমিক চরিত্রে অভিনয় করছেন। নির্মাতা শরাফ আহমেদ জীবনের চক্কর সিনেমায়ও কাজ করছেন শাশ্বত, এতে তাঁর সহশিল্পী হিসেবে রয়েছেন মোশাররফ করিম। সিনেমা ও সিরিজের বাইরে ঈদের কয়েকটি টিভি নাটকেও পাওয়া যাবে শাশ্বত দত্তকে। তাঁর ভাষ্য, ‘কোনো মাধ্যমে কিংবা ঘরানায় আবদ্ধ থাকতে চাই না। সব মাধ্যমে কাজ করে যেতে চাই।’
ঢাকায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা শাশ্বতের। তিনি ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও দুটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে টুকটাক মঞ্চনাটকও চর্চা করেছেন।
২০১০ সালে ব্যাকগ্রাউডন্ড আর্টিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। মাঝখানে দুয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজও করেছেন, তবে পরে আর সুযোগ মেলেনি। শাশ্বত বলেন, ‘সে সময় টানা ছয় বছর বিজ্ঞাপনে কাজের জন্য অডিশন দিয়ে গেছি, কোথাও কাজ পাইনি।’
২০১৬ সালে ‘ইসমাইলের মা’ নামে একটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন, তবে ছবিটি আলোর মুখ দেখেনি। ২০২১ সালে তরুণ পরিচালক সেতু আরিফের ‘কবি প্লাস কুসুম’ দিয়ে নাটকে প্রথমবার কেন্দ্রীয় চরিত্রে কাজ করেছেন শাশ্বত, তাঁর বিপরীতে ছিলেন সাদিয়া আয়মান।
এ বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি মুক্তিপ্রাপ্ত ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প ‘সময় সব জানে’–তে অভিনয় করে তাঁর ক্যারিয়ারের বাঁকবদল ঘটেছে। ‘পুনর্মিলনে’ সিনেমা করে আরও আলো কেড়েছেন, এবার সামনে এগিয়ে যেতে চান তিনি।
ইরার নাচের ধারা
কানে গোঁজা জবা ফুল আর খোলা চুলে ‘সেনোরিতা’ গানে নাচছেন তরুণ নৃত্যশিল্পী মুবাশশীরা কামাল। তিনি ইরা নামে পরিচিত। কক্সবাজারে ধারণ করা সেই ভিডিওতে ইরার নাচে মজেছেন নাচের অনুরাগীরা। ‘ফ্লো উইথ ইরা’ (ইরার ধারা)’ নামে ফেসবুক পেজে নাচের ভিডিওটি পাঁচ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।
দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ভারতে খাজুরাহো মন্দির কিংবা দক্ষিণ কোরিয়ার গুয়াংজু শহরেও নাচের ভিডিও করেছেন ইরা। পেজে ভিডিওর পাশাপাশি নাচের ভঙ্গিমায় ছবিও প্রকাশ করেন তিনি।
গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে ব্যালে নাচের ভঙ্গিমায় তোলা ইরার কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। আলোকচিত্রী জয়িতা আফরিনের তোলা সেসব ছবিতে রাতারাতি পরিচিত পেয়েছিলেন তিনি।
এরপর একের পর এক বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেছেন তিনি। মূলত বিজ্ঞাপনে নাচের কোনো দৃশ্য থাকলেই ইরার শরণ নেন নির্মাতারা। নাচের জন্যই মডেলিংয়ে সুযোগ মিলেছে ব্যালেকন্যা ইরার। একটি প্রতিষ্ঠানের শুভেচ্ছাদূতও হয়েছেন তিনি।
নওগাঁর মেয়ে সবে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। শুটিংয়ের জন্য নওগাঁ থেকে ঢাকায় এসে আবার ফিরতেন তিনি, কাজের চাপ বেড়ে যাওয়ায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এ বছর পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় থিতু হয়েছেন ইরা।
ইরা বলেন, ‘নাচেই বেশি গুরুত্ব দিতে চাই। সিনেমারও প্রস্তাব পেয়েছি। আমি এখনো প্রস্তুত নই, তবে ওটিটিতে ভালো চিত্রনাট্য পেলে কাজ করব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন ইরা। পড়াশোনার সঙ্গে নাচটাও চালিয়ে যেতে চান ইরা। নাচে আদর্শ মানেন নৃত্যশিল্পী লুবনা মরিয়ম ও নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নিপাকে। সাধনায় নিয়মিত নাচেন ইরা। নাচের পাশাপাশি মাস তিনেক ধরে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে মঞ্চনাটকে যুক্ত হয়েছেন।
নুহাশ হুমায়ূন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, মেহজাবীন চৌধুরীর কাজ ভালো লাগে তাঁর, মাঝেমধ্যে শিল্পকলা একাডেমিতে নাটকও দেখেন।