‘খুফিয়া’য় গুপ্তচরের চেয়ে মানুষের গল্প বলতে চেয়েছেন পরিচালক। কোলাজ
‘খুফিয়া’য় গুপ্তচরের চেয়ে মানুষের গল্প বলতে চেয়েছেন পরিচালক। কোলাজ

সাহসী বাঁধন আর তিন মায়ের গল্প

‘যত দিন দেশ আর ধর্ম নিয়ে বিভেদ থাকবে, তত দিন এই খুনখারাবি চলতে থাকবে। আর এর জন্য দায়ী থাকব আমরা সবাই,’ সংলাপটিতে যেন সিনেমার মেজাজ ধরা আছে। ৫ অক্টোবর নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে বিশাল ভরদ্বাজের নতুন সিনেমা ‘খুফিয়া’। পুরো সিনেমায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আর আজমেরী হক বাঁধনের উপস্থিতি দেশি দর্শকের জন্য আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে সিনেমাটিকে। কেমন হলো ‘খুফিয়া’?শেক্‌সপিয়ারকে পর্দায় দারুণভাবে তুলে আনার জন্য খ্যাত নির্মাতা বিশাল সত্য ঘটনা অবলম্বনে সিনেমা বানাতে গিয়ে কতটা উতরে গেলেন? সিনেমাটি নির্মাণের পেছনের গল্পটাই–বা কী? উত্তর জানতে ঢুকে পড়া যাক ‘খুফিয়া’র রাজ্যে।
‘খুফিয়া’র পোস্টার

গোপন সে দুনিয়া
উর্দু শব্দ ‘খুফিয়া’ অর্থ গোপন। আক্ষরিক অর্থেই সিনেমাটি মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ‘গোপন সত্য’কে অনুসন্ধান করে। যেখানে সবারই কিছু না কিছু গোপন ব্যাপার আছে। আপাতদৃষ্টে দিল্লির সাধারণ এক গৃহবধূ কীভাবে অচেনা হয়ে ওঠেন, সেটাও আপনাকে চমকে দেবে। তাঁর শাশুড়িই–বা কম কিসে!

স্পাই থ্রিলার, গুপ্তচরবৃত্তি নিয়ে সারা দুনিয়ায় অনেক সিনেমা হয়েছে। ওটিটি–দুনিয়ার দর্শকের কাছে এই জগৎ বড্ড চেনা। হালে ‘ওয়ার’, ‘পাঠান’, ‘টাইগার’ বা ‘এমআর নাইন’-এর মতো সিনেমার কারণে এ ধরনের সিনেমায় অভ্যস্ত দর্শকের সংখ্যা কম নয়। তবে এসব সিনেমা যতটা না ভারতীয়, তার চেয়ে বেশি হলিউডের প্রভাব স্পষ্ট। তবে স্পাই থ্রিলার হয়েও ‘খুফিয়া’ এসব সিনেমার চেয়ে আলাদা। এখানে নেই মারকাটারি কোনো অ্যাকশন, চেজ, দুর্ধর্ষ স্টান্ট। স্পাই-থ্রিলারের চেয়ে ‘খুফিয়া’ বরং ফ্যামিলি-ড্রামাই হয়ে উঠতে চেয়েছে। বলতে চেয়েছে সম্পর্কের গল্প।

জটিল রাজনীতির হিসাব–নিকাশ
১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধের পর উপমহাদেশের রাজনীতির অনেক হিসাব–নিকাশই পাল্টে যায়। বাংলাদেশ নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই। এর পর থেকেই সিনেমার প্রেক্ষাপট। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, ২০০৪ সাল থেকে।
ভারতের সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের (র) গুরুত্বপূর্ণ কিছু নথি বাইরে পাচার হচ্ছে। সন্দেহ করা হয় সংস্থার কর্মকর্তা রবি দেবভিললাইকে (আলী ফজল)।

‘খুফিয়া’য় বাঁধন। আইএমডিবি

তাঁর বাড়িতে বসানো হয় গোপন ক্যামেরা। তাঁকে ধরতে মিশনের দায়িত্ব দেওয়া হয় র-এর কৃষ্ণা মেহরাকে (টাবু)। রবি কি সত্যিই দেশদ্রোহী, নাকি তাঁর তথ্য পাচারের পেছনে আছে অন্য কিছু? মোটাদাগে এ–ই হলো ওয়েব ফিল্মটির গল্প, যা ট্রেলারেই দেখানো হয়েছে।

কতটা তার সত্য
সিনেমায় দেখানো হয়েছে বাংলাদেশি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা এনএসআইয়ের সঙ্গে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের যোগাযোগের বিষয়টি। উঠে এসেছে তাদের সঙ্গে জঙ্গিগোষ্ঠীর যোগসাজশে ভারতের বিভিন্ন স্থানে হামলার বিষয়টি। আছে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনে কাজ করা র-এর এজেন্ট, এনএসআই প্রধানকে হত্যা করতে র–এর বাংলাদেশি এজেন্টের তৎপরতাও।

‘খুফিয়া’র ট্রেলারে বাঁধন। ছবি : ভিডিও থেকে নেওয়া

‘খুফিয়া’ বিশাল ভরদ্বাজ বানিয়েছেন সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা অমর ভূষণের উপন্যাস ‘এসকেপ টু নোহয়ার’ অবলম্বনে। এই অমর ভূষণ র–এর সাবেক কর্মকর্তা। নিজের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে বইটি লিখেছেন তিনি, সেটা অবলম্বনেই সিনেমা বানিয়েছেন বিশাল। এটা তাঁর জন্য একরকম নতুন অভিজ্ঞতা। বরাবরই সাহিত্য থেকে সিনেমা বানিয়ে অভ্যস্ত বিশাল। আগে ‘তলোয়ার’ বানিয়েছিলেন সত্য ঘটনা থেকে। তাই ‘খুফিয়া’ নির্মাতা হিসেবেও তাঁর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এটি।

সিনেমাটি মুক্তির আগে বলিউড হাঙ্গামাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পরিচালক জানিয়েছিলেন, এটি নির্মাণের আগে বিস্তর গবেষণা করেছেন তিনি। র-এর দুই সাবেক প্রধানসহ সংস্থাটির বেশ কয়েকজন সাবেক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। বিশাল বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে সিআইএর বিভিন্ন মিশন নিয়ে অনেক তথ্যই প্রকাশ্যে আছে। তবে ভারতে র-এর কার্যক্রম বরবারই খুব গোপন রাখা হয়। কোথাও কিছু নেই। “এসকেপ টু নোহয়ার” প্রথম কোনো বই, যা সংস্থার কার্যক্রম নিয়ে সরাসরি লিখেছে। ফলে কাজটা খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল।’

‘খুফিয়া’য় বাঁধন। আইএমডিবি

আবার বিশাল-টাবু জুটির বাজিমাত
নিম্মি ও গজলা মির—‘মকবুল’ ও ‘হায়দার’-এ কালজয়ী দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন টাবু। বিশাল এবার তাঁর জন্য রেখেছিলেন কৃষ্ণা মেহরা চরিত্রটি। সিনেমাটি যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা জানেন চরিত্রটি অভিনেত্রীর দীর্ঘ ক্যারিয়ারের আরেকটি অর্জন যোগ করেছে। কৃষ্ণা মেহরা চরিত্রে তাঁর দাপট, চাহনি, ব্যক্তিগত জীবনে অসহায়ত্ব—দর্শককে চুম্বকের মতো নিজের দিকে টেনেছেন অভিনেত্রী। অথচ এই চরিত্রে তাঁর থাকারই কথা ছিল না। কারণ, বইয়ে চরিত্রটি ছিল পুরুষ। বিশাল সিনেমায় সেটা করে দেন নারী চরিত্র, আর সেই চরিত্রে নেন টাবুকে।

‘খুফিয়া’য় বাঁধন ও টাবু। আইএমডিবি

অভিনেত্রী মনে করেন, বিশাল ভরদ্বাজ তাঁকে যেভাবে বোঝেন, অন্য কোনো পরিচালক সেটা বোঝেন না। ফলে চরিত্রটির আবেগ, অনুভূতি পর্দায় তুলে ধরতে টাবুকে কী করতে হবে, সেটা পরিচালক ভালোই জানেন। তাই যতবার তাঁরা একসঙ্গে হয়েছেন, ততবারই জাদু সৃষ্টি হয়েছে।

সব ছাপিয়ে তিন মায়ের গল্প
বিশাল ভরদ্বাজ নির্মাণের আগে তাঁর গবেষণায় দেখেছেন, অনেকে সিনেমায় ভারতীয় গোয়েন্দাদের যেভাবে হিরো হিসেবে দেখানো হয়, মারদাঙ্গা অ্যাকশন করতে দেখা যায়, আদতে তাঁরা তেমন নন। বাস্তবে তাঁরা আগ্নেয়াস্ত্র রাখারই অনুমতি পান না। তাই পর্দায় নায়ক নয়, মানুষের গল্পই তুলে ধরতে চেয়েছেন তিনি। গুপ্তচরেরা যে সাধারণ মানুষের মতোই; তাঁদেরও জীবনে নানা ওঠানামা আছে, অসহায়ত্ব আছে, সেটা দেখানোর চেষ্টা করেছেন। সে ক্ষেত্রে তিনি পুরোপুরি সফল। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। র-এর এক কর্মচারী অনেক আগে থেকেই ছুটির আবেদন করে রাখেন। তাঁর মেয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে আসবেন, তাঁকে নিয়ে পূজা দিতে যাবেন। কিন্তু ছুটির মাঝপথেই তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়, রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে তিনি কাজে যোগ দেন—ঠিক আর দশটা সাধারণ চাকরিজীবীর মতোই।

‘খুফিয়া’র পোস্টার। আইএমডিবি

‘খুফিয়া’ আপাতদৃষ্টে ধীরগতির মনে হতে পারে। এই স্পাই-থ্রিলার ঘরানার হালের জনপ্রিয় সিনেমাগুলোর যদি ভক্ত হন, তাহলে আরও ধীরগতির মনে হতে পারে। বিশেষ করে অর্ধেক সময়ের পর। স্পাই-থ্রিলার হলেও ‘খুফিয়া’তে সেই অর্থে চমক নেই। মাঝে বা শেষে এমন কোনো টুইস্ট নেই, যা আপনাকে চমকে দেবে। তাহলে কেন এতটা উপভোগ্য হয়ে উঠল সিনেমাটি? কারণ, গুপ্তচরের চেয়ে মানুষের গল্প বলতে চেয়েছেন পরিচালক। আরও নির্দিষ্ট করে বললে তিন মায়ের গল্প।

‘খুফিয়া’য় আলি ফজল ও ওয়ামিকা। আইএমডিবি

কৃষ্ণা মেহরা, চারু ও ললিতা—তিন মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন টাবু, ওয়ামিকা গাব্বি ও নবনীন্দ্র বেহেল। তিন মায়েরই গোপন কিছু ব্যাপার, তিনজনই বিশেষ কিছু কারণে অসহায়। তিনজনই আবার প্রচণ্ড স্বাধীনচেতা, শক্তিশালী; প্রয়োজনে কোনো ঝুঁকি নিতেও দ্বিধা করেন না। এই তিন মায়ের যে জার্নি, ওঠানামা, তা সংবেদনশীলতার সঙ্গে তুলে এনেছেন পরিচালক। আর থ্রিল না থাকলেও বিশাল পর্দায় যে ড্রামা সৃষ্টি করেছেন, সেটার ভক্ত বনে যেতে হয়।

টাবুর কথা তো আগেই বলা হয়েছে, বাকি দুই মায়ের চরিত্রে ওয়ামিকা ও নবনীন্দ্র ফাটিয়ে দিয়েছেন। বিশেষ করে নবনীন্দ্র এই সিনেমায় তাজা হাওয়ার মতো, যেন এলেন, দেখলেন আর জয় করলেন। নবনীন্দ্র অনেকের অচেনা মনে হলেও ভারতের বিনোদন–দুনিয়ায় তিনি পরিচিত নাম। দীর্ঘদিন ধরে মঞ্চে কাজ করেছেন। অভিনয় তো বটেই, একই সঙ্গে তিনি লেখক ও পরিচালকও। আগে কয়েকটি সিনেমা করলেও ‘খুফিয়া’র মতো এত পরিচিতি পাননি।

‘খুফিয়া’য় ওয়ামিকা গাব্বি। আইএমডিবি

ওয়ামিকার কথা যত বলা যায়, কম বলা হয়। আগেও বেশ কয়েকবারই বিশাল ভরদ্বাজের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। ‘খুফিয়া’ মুক্তির আগের সপ্তাহেই সনি লিভে মুক্তি পাওয়া একই পরিচালকের ‘চার্লি চোপড়া অ্যান্ড দ্য মিস্ট্রি অব সোলাং ভ্যালি’ সিরিজে দেখা গেছে তাঁকে। তবে সিরিজটি ঠিক জুতসই হয়নি। বছর কয়েক ‘গ্রহণ’ সিরিজ দিয়ে সমালোচকদের প্রশংসায় ভেসেছিলেন ওয়ামিকা। চলতি বছর ‘জুবলি’তে নীলুফার চরিত্র করেও প্রশংসিত হয়েছেন। ‘খুফিয়া’তেও তিনি দর্শক-সমালোচকের মন জয় করেছেন। দিল্লির এক সাধারণ গৃহবধূ, মমতাময়ী মা, নিজের গোপন জীবন আর দ্বিতীয়ার্ধে ভিন্ন চেহারায় যখন হাজির হন, সেটা তরুণ এই অভিনেত্রীর অভিনয়দক্ষতা সম্পর্কে আপনাকে ধারণা দেবে।

এ ছাড়া রবি চরিত্রে দুর্দান্ত করেছেন আলী ফজল। সিনেমা যত এগিয়ে যায়, ততই অভিনেতা হিসেবে তাঁর শক্তির জায়গা সামনে আসে। ‘খুফিয়া’র কিছুদিন আগেই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে অভিনেতার সিনেমা ‘ফুকরে ৩’। যেখানে একেবারেই অন্য রকমের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। যেটা দেখলে অভিনেতা হিসেবে তিনি কতটা দক্ষ, তার একটা প্রমাণ পাওয়া যাবে। একেবারেই বিপরীতধর্মী।

সাহসী বাঁধন
‘খুফিয়া’য় হিনা রহমান ওরফে অক্টোপাস চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশি অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। দৈর্ঘ্য বেশি না হলেও তাঁর চরিত্রটি ছিল এককথায় ‘ইমপ্যাক্টফুল’। বাঁধনের প্রায় সব দৃশ্যই ছিল টাবুর সঙ্গে, প্রখ্যাত এই তারকার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অভিনয় করেছেন তিনি। কেবল তা-ই নয়, টাবুর সঙ্গে বাঁধনের রসায়ন সিনেমার অন্যতম আকর্ষণও বটে। বাঁধনের এক্সপ্রেশন, হাঁটা, কথা বলা ছিল প্রায় নিখুঁত। ছবিতে তাঁর আবেদনময়ী অবতার যেমন দেখা গেছে, তেমনি দেখা গেছে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে তাঁর সংগ্রামও। এখন তো প্রচুর স্পিন-অফ সিনেমা, সিরিজ হচ্ছে। কেউ চাইলে বাঁধন অভিনীত চরিত্রটির অতীত নিয়ে স্পিন-অফ বানাতেই পারেন।

‘খুফিয়া’য় বাঁধন। আইএমডিবি

আছেন শেক্‌সপিয়ারও
বিশাল ভরদ্বাজ পরিচিত মূলত তাঁর শেক্‌সপিয়ারের সাহিত্যকর্ম অবলম্বনে সৃষ্টি সিনেমার জন্য। ‘মকবুল’, ‘ওমকারা’ থেকে ‘হায়দার’কে তিনি অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তবে ‘খুফিয়া’য় আপাতদৃষ্টে শেক্‌সপিয়ারের যোগ নেই, তবে বিশাল যেহেতু পরিচালক, শেক্‌সপিয়ার কি না থেকে পারেন! তাই সিনেমায় টাবু যখন মঞ্চে ছেলের নাটক দেখতে যান, দেখা যায়, সেখানে শেক্‌সপিয়ারের নাটকেরই মঞ্চায়ন হচ্ছে। পরে তো টাবু যে অপারেশনের নেতৃত্ব দেন, সেটার নামই দেন ‘ব্রুটাস’।

বিশাল-ছাপ
বিশাল ভরদ্বাজ সিনেমার হিসেবটা এমন, তিনি কিছু বলবেন, কিছু রাখবেন দর্শকের বোঝাপড়ার জন্য। সেটা আছে এ সিনেমাতেও। যেমন একটি দৃশ্যে একটি চরিত্র নিজের জায়গা ছেড়ে আরেকটি চরিত্রের দিকে এগিয়ে যায়। এটা দিয়ে পরিচালক বুঝিয়ে দেন, চরিত্রটি নিজের জায়গা ছেড়ে দিচ্ছে। আরেকটি দৃশ্য আছে ফটোকপি করার। সেখানে আলো–ছায়ার অপূর্ব ব্যবহার করেছেন বিশাল।
আর অতি অবশ্যই আছে আবহ সংগীত আর গানের দারুণ ব্যবহার। বিশাল ভারতের সেই বিরল পরিচালক, যিনি নির্মাণের সঙ্গে সংগীত পরিচালনাও করেন। ‘খুফিয়া’য় পরিচালনা, সংগীত পরিচালনা ছাড়াও যৌথভাবে চিত্রনাট্যও লিখেছেন তিনি। পুরোনো হিন্দি গান, নতুন গান মিলিয়ে সিনেমাটি দারুণ এক সংগীতসফর বটে। বিশেষ করে রেখা ভরদ্বাজ ও নীলাদ্রি কুমারের গাওয়া ‘মাত আনা’ ছবি শেষ হওয়ার পরও মনে থাকে।

শেষের আক্ষেপ আর ধর্মগুরু
‘খুফিয়া’র বেশির ভাগ ইতিবাচক দিক থাকলেও কিছু নেতিবাচক ব্যাপারও আছে। বিশেষ করে যেভাবে শেষটা হয়েছে, সেটা মেনে নেওয়া কঠিন। পুরো সিনেমাটি যেখানে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে এগিয়েছে, সেখানে অনুমিত পরিসমাপ্তি হতাশ করে।

‘খুফিয়া’য় টাবু ও বাঁধন। আইএমডিবি

টাবু অভিনীত কৃষ্ণা মেহরার জীবনের যে গল্প দেখানো হয়েছে, সেটাও এ ধরনের চরিত্রের ক্ষেত্রে পুরোনো। প্রধান চরিত্রের গোয়েন্দা বা গুপ্তচরদের ব্যক্তিগত জীবন অগোছালো হবে, সংসার টিকবে না, এই ক্লিশে ব্যাপার আছে এখানেও।

বেশির ভাগ ভারতীয় সিনেমায় যখনই বাংলাদেশকে দেখানো হয়েছে, সংগত কারণেই তা সমালোচিত হয়েছে। ব্যতিক্রম নয় ‘খুফিয়া’ও। দেশের একটি সংস্থার এজেন্ট নিজের দেশকে জঙ্গিমুক্ত করতে অন্য একটি দেশের এজেন্ট হয়ে কাজ করবে, এটা ঠিক বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না।

সিনেমাটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। প্রায় পুরোটা উপভোগ্য হলেও কিছুটা কাটছাঁট করাই যেত। বিশেষ করে ছবিতে ধর্মগুরুর চরিত্রটি কতটা জরুরি ছিল, সেটাও মনে হয়।

ভারতের সেরা?
সমালোচকদের মতে, এত দিন ভারতের সেরা স্পাই-থ্রিলার ছিল ‘রাজি’। তবে ‘খুফিয়া’ মুক্তির পর নিশ্চিতভাবেই সেরার লড়াই জমে উঠেছে। মেঘনা গুলজার, নাকি বিশাল ভরদ্বাজ—কারটি ভারতের সেরা স্পাই-থ্রিলার, সে আলোচনা চলতে থাকুক। এর মধ্যে অন্য কেউ এসে এই ঘরানার আরও ভালো কিছু বানালেই তো ল্যাঠা চুকে যায়।