গত বছরের ৩ আগস্ট এক জমকালো অনুষ্ঠানে চরকি ঘোষণা দেয় ‘মিনিস্ট্রি অব লাভ’ নামের একটি প্রকল্পের। জানানো হয়, ১২ জন জনপ্রিয় নির্মাতা ১২টি ভালোবাসার গল্প নিয়ে চরকিতে ১২টি অরিজিনাল ফিল্ম বানাচ্ছেন। পুরো প্রকল্পের সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ‘মনোগামী’ ১২টি চরকি অরিজিনাল ফিল্মের একটি। একের পর এক চমক নিয়ে ‘মনোগামী’ বানিয়েছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। নন্দিত এই নির্মাতার নতুন কাজ নিয়ে ভক্ত-দর্শকের প্রবল আগ্রহ থাকে; অবশেষ সিনেমা আসছে। চাঁদরাতে চরকিতে মুক্তি পাবে ‘মনোগামী’।
ফারুকী পরিচালিত ‘মনোগামী’র প্রথম চমক ছিলেন চঞ্চল চৌধুরী। দীর্ঘদিন পর এই সিনেমা দিয়ে একসঙ্গে কাজ করার ঘোষণা আসে ফারুকী ও চঞ্চলের। বললে বাড়াবাড়ি হবে না, এটি অবশ্যই এ দেশের দর্শকের জন্য দারুণ একটি খবর। এরপর জানা যায়, সিনেমাটিতে চঞ্চলের বিপরীতে অভিনয় করছেন সংগীতশিল্পী জেফার রহমান। তরুণ প্রজন্মের কাছে আলোচিত এই সংগীতশিল্পীর অভিনয়ে হাতেখড়ি বলা চলে এ সিনেমা দিয়েই। শুটিং শেষ, পরবর্তী কাজও গুছিয়ে এনেছেন পরিচালক। অপেক্ষা ছিল এটি কবে মুক্তি পাবে? অবশেষে খবর এল গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে, ফারুকী নিজে নিশ্চিত করলেন, চাঁদরাতে আসছে ‘মনোগামী’।
অসুস্থতার পর এদিন গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় প্রথমবার তিনি কোনো সংবাদ বিনিময় অনুষ্ঠানে হাজির হলেন।
অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন অভিনেত্রী ও প্রযোজক নুসরাত ইমরোজ তিশা, অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী, চরকির প্রধান নির্বাহী নির্মাতা রেদওয়ান রনি, সংগীতশিল্পী জেফার। তাঁরা ছাড়াও ‘মনোগামী’র অভিনেতা হিসেবে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন চঞ্চল-পুত্র শুদ্ধ।
কোন ভাবনা থেকে সিনেমাটি নির্মাণ করছেন—প্রশ্নে পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘আমার প্রিয় একটা কাজ হচ্ছে মানুষের মনের ভেতর ছিপ ফেলে দেখা, কী কী ধরা পড়ে সেখানে। ছোট-বড়, তুচ্ছ-গুরুত্বপূর্ণ—সবই আমাকে নাড়া দেয়। “মনোগামী”তে অনেক দিন পর নারী-পুরুষ সম্পর্কের কিছু দিক নিয়ে এই রকম ছিপ ফেলার সুযোগ পেয়েছি।’ পরিচালকের ভাষ্যে, ‘ব্যাচেলর ছবিতে ব্যাচেলর জীবনের কিছু দিক কোনো রকম রাখঢাক ছাড়া দেখাতে পেরেছিলাম। এখানে বিবাহিত ও প্রবাহিত জীবনের কিছু দিক কোনো সুইট কোটিং ছাড়া দেখানোর সুযোগ পেয়েছি।’
সিনেমার প্রধান চরিত্রের অভিনেতাদের নিয়ে ফারুকী বলেন, ‘চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে আমার কাজের অভিজ্ঞতা তো বহু পুরোনো। এখানেও একই রকম অপ্রতিরোধ্য তিনি। এই ধরনের চরিত্র কম করার ফলে একটা দারুণ ফ্রেশনেস তিনি নিয়ে এসেছেন তাঁর অভিনয়ে। জেফারকে আমরা সংগীতশিল্পী হিসেবে চিনি। এখানে তাঁকে অচেনাই লাগবে। কিন্তু এই চরিত্রে তাঁকে পাওয়ার ফলে আমার গল্পটা প্রাণবন্ত হয়েছে।’
চরকিতে চঞ্চল চৌধুরীকে দর্শক নানা চরিত্রে নানান লুকে দেখেছে।
তবে ‘মনোগামী’তে দেখা মিলবে অন্য এক চঞ্চল চৌধুরীর। নিজের চরিত্র ও কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে বলতে গিয়ে চঞ্চল চৌধুরী ‘তালপাতার সেপাই’ নাটকের স্মৃতিচারণা করেন। ফারুকী পরিচালিত সেই নাটকে চঞ্চল চৌধুরী, নুসরাত ইমরোজ তিশা ছাড়াও এখনকার সফল নির্মাতা রেদওয়ান রনি, আশুতোষ সুজন, ইফতেখার আহমেদ ফাহমি, আদনান আল রাজীব, শরাফ আহমেদ জীবনও অভিনয় করেছিলেন। সব মিলিয়ে ‘মনোগামী’ যেন একটা পুনর্মিলনী। চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘ফারুকী ভাইয়ের সঙ্গে আমার ২০০৫ থেকে কাজের শুরু, এখন ২০২৪। আমার ক্যরিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ছিল সেই কাজটি। আর এবার “মনোগামী” সিনেমার গল্পটাই একদম আলাদা। সিনেমায় কিছু মনস্তাত্ত্বিক দিক আছে, যা দর্শককে ভাবাবে। আর এখানে আমার চরিত্রের লুক, গেট-আপ একদম ভিন্ন থাকবে।’
কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে জেফার বলেন, ‘একজন সংগীতশিল্পী হিসেবে আগেও পর্দায় হাজির হয়েছি। কিন্তু “মনোগামী” সিনেমা কাজের অভিজ্ঞতা একদম ভিন্ন। বিষয়টি আমার জন্য অনেক আনন্দের, একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জিং। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সিনেমায় অভিনয় করতে পারা ও সহ-অভিনেতা হিসেবে চঞ্চল চৌধুরীকে পাওয়া আমার জন্য কিছুটা চাপের ছিল। কিন্তু তাঁরা এত উদার ছিলেন এবং সহযোগিতা করেছেন, কাজটা আমার জন্য ব্যাপক রোমাঞ্চকর হয়েছে।’
চরকির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি বলেন, ‘দেখতে দেখতে মিনিস্ট্রি অব লাভের তৃতীয় সিনেমা রিলিজের পথে। প্রথম দুটি সিনেমা দর্শক বেশ পছন্দ করেছে। আশা করছি দর্শক এবার “মনোগামী”-এর মধ্যে দিয়ে আগের ফারুকী ভাইয়ের নির্মাণ খুঁজে পাবে।’
মনোগামীর যেমন একটা গল্প আছে, তেমনি মনোগামী নিয়েও গল্প আছে। গতকাল সংবাদকর্মীদের কাছে সেই সব গল্পই শোনালেন শিল্পী, নির্মাতারা। প্রযোজক তিশা জানালেন, ছবিতে সংগীতশিল্পী জেফারকে কাস্ট করেছে তিশা-ফারুকীর মেয়ে ইলহাম। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী দীর্ঘদিন ধরে ‘মনোগামী’র জন্য কাস্টিং খুঁজছিলেন। নতুন মুখের কাউকে প্রয়োজন। ইলহাম তখন জেফারের ‘ঝুমকা’ গানটি নিয়মিত শোনে। এই গান না শুনলে সে নাকি খাবার খায় না। ফারুকী একদিন খেয়াল করে দেখলেন ‘লামিয়া’ চরিত্রের যেমন কাস্টিং তিনি খুঁজছিলেন, জেফার তার সঙ্গে একদম মানিয়ে যায়। সেই গল্পের কথা জেফারও বললেন, যোগ করলেন তাঁর ১৪ বছরের হেয়ার স্টাইল পরিবর্তনের কথা। জেফার যখন ‘মনোগামী’তে অভিনয়ের প্রস্তাব পান, তখন বেশ অবাকই হয়েছিলেন বলে জানান তিনি।
জেফার বলেন, ‘ফারুকী ভাইয়ের সিনেমা ও চঞ্চল ভাইয়ের বিপরীতে অভিনয় করতে হবে, সব মিলিয়ে আমি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি।’ গল্পে গল্পে তিনি আরও বলেন, ‘ফারুকী ভাই যখন আমাকে বলেন যে আমার চুলের স্টাইল পরিবর্তন করতে হবে, তখন আমি আরও টেনশনে পড়ে যাই। ১৪ বছর ধরে আমার চুলের এই স্টাইল একই রকম। ফারুকী ভাই বলেন যে তাঁকে বিশ্বাস করতে। আমি শুধু তাঁর কথামতো সব করেছি।’
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে কথা বলেন অভিনয়শিল্পী শুদ্ধ। এদিনই সংবাদকর্মীরা জানলেন ‘মনোগামী’র মধ্য দিয়ে সিনেমায় ডেবিউ হতে যাচ্ছে চঞ্চল-পুত্র শুদ্ধর। বাস্তব জীবনের বাবার সঙ্গে পর্দার সামনে বাবা হিসেবে পেয়ে শুদ্ধ বেশ খুশি। শুদ্ধ বলে, ‘আমি বাবার শুটে অনেকবার গিয়েছি। এবার নিজে শুটে গিয়ে খুব নার্ভাস লেগেছিল। শুটের আগের দিন সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। ফারুকী আঙ্কেলের এই সিনেমায় কাজ করাটা আমার জন্য অন্য রকম অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে। আর বাবার সঙ্গে কাজ করেও খুব আনন্দ লাগছিল।’
বাবা-ছেলের মতো মা-মেয়েরও অংশগ্রহণ আছে ছবিতে। ছবিতে অন্যতম মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন সামিনা হোসেন প্রেমা। তাঁর মেয়ে রাই রিলেও তাঁর মেয়ে হিসেবেই উপস্থিত হবে।