চরকিতে মুক্তি পেয়েছে ওয়েব ফিল্ম ‘আন্তঃনগর’। এতে অভিনয় করেছেন রুনা খান। এ ছাড়া দুরন্ত টেলিভিশনে প্রচারিত হচ্ছে তাঁর উপস্থাপনায় নতুন অনুষ্ঠান ‘দুরন্ত ফ্যামিলি’। এসব নিয়ে গত শনিবার বিকেলে তাঁর সঙ্গে কথা বলল ‘বিনোদন’
‘আন্তঃনগর’ মুক্তির পর কোন ধরনের প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন?
সত্যি বলতে, ইন্টারভিউ শুরুর আগে আপনার কাছ থেকে যে প্রতিক্রিয়া পেলাম, সে রকমই পাচ্ছি।
আমারটা বাদ দিন, অন্যরা কী বলছেন?
(হাসি), যাঁরা ছবিটি দেখেছেন, প্রত্যেকে অভিনয় নিয়ে ইতিবাচক কথা বলছেন। শুধু আমার নয়, জয়রাজ দাদা, শ্যামল মাওলা, সোহেল মণ্ডলের অভিনয়ের প্রশংসাও করেছেন। ছবিটিও দেখে ভালো লেগেছে। আমার চরিত্র নিয়ে বলেছেন, সংসারজীবনে অশান্তি, মাদকাসক্তি, জেলে যাওয়া, স্ট্রাগলসহ ব্যক্তিজীবনের সংকটের চিত্র দেখেছেন।
চরিত্রটি হয়ে উঠতে আপনাকে কী করতে হয়েছে?
সত্যি বলতে, চরিত্রগুলো আমার চারপাশে দেখা। আমি বড় হয়েছি একটা মফস্সল শহরে। টাঙ্গাইল সখীপুরে যেখানে বেড়ে উঠেছি, সেখানে তো ঢাকা শহরের মতো এক বিল্ডিংয়ে ৩০ বা ৫০টি পরিবার থাকে এমন না। এমন প্রতিবেশীও ছিল, দেখা গেছে সেখানকার কোনো ভদ্রমহিলা গ্রামীণ ব্যাংকের ম্যানেজার। আবার কোনো নারীর স্বামী নাপিত। এমন প্রতিবেশীও ছিলেন, যাঁর স্বামী ভ্যানগাড়ি চালান—সপ্তাহে নিয়ম করে বউ পেটাতেন। মধ্যবিত্ত জীবনে এমনও প্রতিবেশীও ছিলেন, যাঁদের ৩০০-৪০০ মণ ধান হয়। আবার কেউ ঢাকা মেডিকেল থেকে এমবিবিএস শেষ করে মফস্সলে গেছেন, ডাক্তারি করছেন। আমার বাবা যেমন চাকরি করতেন। বলতে পারেন, সাধারণ মানুষের জীবনযাপন দেখে দেখে বড় হয়েছি। আমার জন্ম টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে হলেও বেড়ে ওঠা সখীপুরে। তিন বছর বয়স থেকে এসএসসি পর্যন্ত আমি সখীপুরে। এরপর ১৯৯৮ সালে ঢাকায় চলে আসি। বদরুন্নেসা কলেজে ইন্টারমিডিয়েট শেষে ইডেন থেকে অনার্স ও মাস্টার্স।
তা নাহয় দেখলেন, কিন্তু শুটিংয়ের আগে প্রস্তুতি নেওয়ার কি দরকার হয়নি?
পরিচালকের সঙ্গে স্ক্রিপ্ট নিয়ে ও চরিত্র নিয়ে বসা হয়েছে। এখন যেটা হয়, নাটকের কাজের ক্ষেত্রে সে ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পাই না, ওয়েব ফিল্ম বা চলচ্চিত্রে প্রস্তুতির সুযোগ পাই। পরিচালকের পাশাপাশি সহশিল্পীদের সঙ্গে আলোচনা করি। স্ক্রিপ্ট রিডিং, লুক ঠিক করা, কস্টিউমের জন্য আলাদাভাবেও কাজ হয়।
শুটিং কোথায় করেছেন?
আমার বেশির ভাগ অংশের শুটিং হয়েছে মোহাম্মদপুর বিহারি ক্যাম্পের কাছে চারতলা একটা বাড়িতে। পারলারের শুটিং ধানমন্ডিতে। আমি এখন একটা বিষয় খুবই বিশ্বাস করি, যেকোনো কাজ করার ক্ষেত্রে পরিচালকের মতামতকেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত। বলতে পারেন, এখন আমি অনেক বেশি ডিরেক্টর–নির্ভর শিল্পী হওয়ার চেষ্টা করছি। আমি বিশ্বাস করি, একটা চরিত্র অভিনয়শিল্পীর কাছে আসার আগে পরিচালকের মাথায় সেট থাকে। তাঁর কল্পনায় চরিত্রটা প্রথমে আঁকেন। তিনিই চরিত্রটা সবচেয়ে ভালোভাবে দেখতে পান।
এই চিন্তা আপনার মধ্যে কবে থেকে এসেছে?
আমরা তো কাজ করতে করতে শিখি। গত ১০-১৫ বছর আমি তো আসলে কম কাজ করেছি বা খুব কম কাজের সুযোগ পাই—যেটাই বলি না কেন। আমি সব সময় চেষ্টা করি ভালো পরিচালক যাঁরা, তাঁদের কাজগুলো বেছে নিতে। পরিচালকের ওপর নির্ভর করতে ভরসা করি। আমার গত কয়েক বছরের কাজের রেকর্ডের দিকে তাকালে দেখা যাবে—আমার পরিচালক তৌকীর আহমেদ, অমিতাভ রেজা, আশফাক নিপুনরা—আমি সেই পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি, যাঁদের ওপর আমি ভরসা করতে পারি।
আপনাকে দুরন্ত টিভির একটা অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় দেখা যাচ্ছে।
একটানা ৫২ পর্বের শুটিং করেছি। আমার পেশাদার অভিনয়শিল্পী হিসেবে কাজ শুরু শিশুতোষ অনুষ্ঠান ‘সিসিমপুর’ দিয়েই। তাই আমি শিশুতোষ কাজ ভীষণ উপভোগ করি। এত বছর পর আরেকটা শিশুতোষ কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে দারুণ অভিজ্ঞতা হচ্ছে। ৫২ পর্বে আমরা ১০৪টি পরিবার পেয়েছি। তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছে। ঢাকার সানবীমস স্কুলে পড়ে, এমন পরিবার যেমন আছে, তেমনি সিলেটের প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলপড়ুয়া পরিবারও আছে। এত রকমের পরিবারের সঙ্গে কাজ করা, তাদের ভাবনার সঙ্গে পরিচিত হওয়াটা অন্য রকম অভিজ্ঞতা। ‘দুরন্ত ফ্যামিলি’ অনুষ্ঠানে ৫ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের সঙ্গে পরিবারের আরও দুজন সদস্য থাকেন। তাঁরা সবাই একটা কথা বলেছেন, তাঁদের সন্তানেরা শুধু প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনায় বড় না হয়ে খেলাধুলা, গান, নাচ, অভিনয়সহ শিল্প, সাহিত্য–সংস্কৃতির নানা ক্ষেত্রে বেড়ে উঠুক। এর মানে, তাদের বেড়ে ওঠা আনন্দময় হোক—এই ভাবনাটা আমাকে দারুণভাবে আকর্ষণ করেছে। আমি নিজেও এই ভাবনার মানুষ। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের শিশুদের বা পরবর্তী প্রজন্মের মানসিক বিকাশের জন্য এই বিষয়গুলো খুবই দরকার।