‘আধুনিক বাংলা হোটেল’, ‘রঙিলা কিতাব’ ও ‘ফ্রেঞ্জি’র দৃশ্য। গত এক মাসে ওটিটিতে মুক্তি পাওয়া এসব সিরিজ তৈরি হয়েছে গল্প, উপন্যাস অবলম্বনে। কোলাজ
‘আধুনিক বাংলা হোটেল’, ‘রঙিলা কিতাব’  ও ‘ফ্রেঞ্জি’র দৃশ্য। গত এক মাসে ওটিটিতে মুক্তি পাওয়া এসব সিরিজ তৈরি হয়েছে গল্প, উপন্যাস অবলম্বনে। কোলাজ

জনপ্রিয় গল্প, উপন্যাস থেকে সিরিজ, কী বলছেন লেখক নির্মাতারা

‘আধুনিক বাংলা হোটেল, ‘বিভাবরী’, ‘রঙিলা কিতাব’, ‘মেসমেট’ ও ‘ফ্রেঞ্জি’। গত এক মাসে পাঁচ ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে এই সিরিজ ও ওয়েব ফিল্মগুলো। সব কটি কনটেন্টই তৈরি হয়েছে সাহিত্য থেকে। বিদেশি প্ল্যাটফর্মগুলোতে ফি সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ও সিরিজের বড় অংশই তৈরি হয় জনপ্রিয় গল্প–উপন্যাস অবলম্বনে। দেশি প্ল্যাটফর্মে আগে খুব বেশি সাহিত্য থেকে কাজ হয়নি। সেখান থেকে এক মাসেই সাহিত্য থেকে নির্মিত পাঁচ কনটেন্ট মুক্তি পাওয়া ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

‘সব দেশেই বেশির ভাগ কনটেন্ট সাহিত্য থেকে নির্মিত হয়, আমাদের দেশেই চর্চটা ছিল না। আপনি যদি আমাদের টিভির কাজগুলোও দেখেন, খুব বেশি সাহিত্যনির্ভর নাটক হয়নি।’ বলছিলেন শরীফুল হাসান। তাঁর ছোট তিনটি গল্প থেকে চরকির জন্য অ্যান্থোলজি সিরিজ ‘আধুনিক বাংলা হোটেল’ বানিয়েছেন কাজী আসাদ। গতকাল দুপুরে লেখক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর লেখার পর্দায় উপস্থাপন দেখে তিনি সন্তুষ্ট। চিত্রনাট্য না লিখলেও এর খুঁটিনাটি তাঁর জানা ছিল, ফলে পর্দায় উপস্থাপনের সময় গল্পের মূল সুর যেন কেটে না যায়, সেটা খেয়াল রেখেছেন তিনি।

‘আধুনিক বাংলা হোটেল’–এর পোস্টার। চরকির সৌজন্যে
 ‘আধুনিক বাংলা হোটেল’–এর পোস্টার। চরকির সৌজন্যে

আলাপে আলাপে সম্প্রতি সাহিত্য থেকে নির্মিত সিরিজ–সিনেমা নিয়ে নিজের একটা পর্যবেক্ষণও জানালেন লেখক। শরীফুল হাসানের ভাষ্যে, ‘এখন যে সিরিজগুলো হয়েছে, সব কটিই কিন্তু সমসাময়িক লেখকদের লেখা থেকে হয়েছে। অনেক নির্মাতাই হয়তো এখনকার লেখা পড়েন না কিন্তু গত ১০–১৫ বছরে দেশে মৌলিক থ্রিলারের একটা উত্থান হয়েছে। নির্মাতারা যদি পড়েন, তাহলে বুঝতে পারবেন, নানা ধরনের গল্প আছে। আমাদের গল্প, আমাদের সংস্কৃতি নিয়ে বিচিত্র ধরনের স্বাদ পাওয়া যাবে। এখন এসব সাহিত্য থেকে না করলে বড় সুযোগ নষ্ট হবে। কারণ, এসব গল্প এখন খুবই প্রাসঙ্গিক; ১০ বা ১৫ বছর পরে হয়তো এই প্রাসঙ্গিকতা থাকবে না।’

নির্মাতা অনম বিশ্বাসও মনে করেন, গত ১০-১৫ বছরে লেখা থিলার থেকে প্রচুর ওয়েব কনটেন্ট হতে পারে। এই নির্মাতার সিরিজ ‘রঙিলা কিতাব’ হইচইয়ে মুক্তির পর আলোচিত হয়েছে। সিরিজটি তৈরি হয়েছে কিঙ্কর আহসানের একই নামের উপন্যাস থেকে। এর আগে হুমায়ূন আহমেদের ‘দেবী’ থেকেও সিনেমা বানিয়েছিলেন অনম।

‘রঙিলা কিতাব’–এ মোস্তাফিজুর নুর ইমরান ও পরীমনি। হইচইয়ের সৌজন্যে

তিনি মনে করেন, নির্মাতারা বেশির ভাগ সময় নিজের মতো করে মৌলিক গল্প বলতে চান, সে কারণেই হয়তো দেশে খুব বেশি সাহিত্যনির্ভর কাজ হয় না। এ ছাড়া এখন মোটা দাগে বইয়ের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ কমে গেছে। এ জন্যও অনেক নির্মাতার মাথায় প্রথমেই সাহিত্য থেকে কাজ করার কথা মাথায় আসে না।

তবে ঠিকঠাকভাবে কনটেন্ট তৈরি হলে তো জনপ্রিয় হয়। তাঁর ‘রঙিলা কিতাব’, ‘দেবী’ তাঁর প্রমাণ। অনম বিশ্বাস মনে করেন, সাহিত্যকর্মকে পর্দায় নিয়ে আসতে হলে পরিচালকের নিয়ন্ত্রণ জরুরি। সত্যজিৎ রায় নিজের লেখা ‘সোনার কেল্লা’ থেকে তিনি যখন সিনেমা করেছেন, সেটাকে পর্দার উপযোগী করতে প্রচুর বদল এনেছেন।

একসঙ্গে ‘ফ্রেঞ্জি’ সিরিজের পাঁচ অভিনেত্রী সাবরিন আজাদ, আইশা খান, বুশরা, টুইংক ক্যারল, রেহনুমা ঐশী

অনমের ভাষ্যে, ‘পর্দায় যেহেতু আমিই গল্পটা বলব, আমার মতে করে বলব। এই পরিবর্তন ছাড়া উপায় আছে কি না, আমার জানা নেই। সব গল্প তো সব সময় চিত্রনাট্যে ব্যবহারের উপযোগীও থাকে না।’ উদাহরণ দিয়ে এই নির্মাতা বললেন, ‘দেবী’র ক্ষেত্রে মূল উপন্যাসের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ সংলাপসহ অনেক কিছুই বদলেছেন। স্ত্রীকে নিয়ে প্রদীপ শহর ছেড়ে পালাচ্ছে, ‘রঙিলা কিতাব’ উপন্যাসে এটা ছিল সাব–প্লট কিন্তু সিরিজে এটাই প্রধান গল্প। এ ছাড়া উপন্যাস থেকে সিরিজ নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রচুর বদল এনেছেন তিনি।

হইচই বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর সাকিব আর খান বললেন, সাহিত্যনির্ভর কাজ তাঁরা করতে চান। তবে নির্মাতারা এ ধরনের প্রস্তাব খুব বেশি নিয়ে আসেন না। গত এক মাসে মুক্তি পাওয়া অন্য তিন ওয়েব কনটেন্ট ‘বিভাবরী’, ‘মেসমেট’ ও ‘ফ্রেঞ্জি’ তৈরি হয়েছে অনীশ দাস অপু, পলাশ পুরকায়স্থ, হাসিব হাসান চৌধুরীর গল্প ও উপন্যাস থেকে।