বাঙালি শার্লক হোমস! তিনি দেখতে কেমন হতেন? কে হতো তাঁর সঙ্গী ওয়াটসন? কীভাবেই–বা তিনি খুলতেন একের পর এক রহস্যের জট? চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মরিয়ার্টির কি কখনো মুখোমুখি হতে হবে শার্লকের? হলে কী হবে সেদিন?
সৃজিত মুখার্জি ও রোহান সিপ্পি পরিচালিত ‘শেখর হোম’ দেখলে পেতে পারেন উত্তরগুলো। ১৪ আগস্ট জিও সিনেমায় মুক্তি পেয়েছে নতুন ওয়েব সিরিজটি। আর্থার কোনাল ডয়েলের বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র শার্লক হোমস থেকে অনুপ্রাণিত হলেও ‘শেখর হোম’-এর কাহিনি আর আবহ নতুন। হিন্দি ভাষার এই সিরিজ ছয় পর্বের; চারটি পরিচালনা করেছেন সৃজিত, দু্ইটি রোহান।
একনজরেসিরিজ: শেখর হোমস্ট্রিমিং: জিও সিনেমানির্মাণ: সৃজিত মুখার্জি ও রোহান সিপ্পিপর্ব সংখ্যা: ৬অভিনয়: কে কে মেনন, রণবীর শোরে, রসিকা দুগ্গল, কীর্তি কুলহারি, রুদ্রনীল ঘোষপ্রযোজনা সংস্থা: বিবিসি স্টুডিওজ প্রোডাকশন
নব্বইয়ের দশক থেকে গল্প শুরু হয় সিরিজটির। পশ্চিমবঙ্গের লোনপুরের গেস্টহাউসে ওঠেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা জয়ব্রত। সেখানে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় শেখর হোমের। শেখর নিজের ব্যাপারে উদাসীন হলেও লোনপুরে সে খুব জনপ্রিয়। সে অন্যের বিপদে সাহায্য করে, পুলিশের কেস সলভ করে দেয়, বিনা পয়সায় বাচ্চাদের পড়ায়।
শেখরের সঙ্গে ধীরে ধীরে রহস্যের সমাধানে জড়িয়ে যান জয়ব্রতও। দুজন খুব তাড়াতাড়ি ভালো বন্ধু হয়ে ওঠেন। তারপর দুজন মিলে খুলে ফেলেন একটি ডিটেকটিভ এজেন্সিও। ভালোই চলতে শুরু করে তাঁদের এই গোয়েন্দাগিরি। কিন্তু একদিন তাঁদের সামনে এসে হাজির হয় এক পুরোনো শত্রু। কী উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছে সে? কীভাবে সে যুক্ত শেখর হোমের অতীতের সঙ্গে? জানতে হলে দেখতে হবে ‘শেখর হোম’।
খুব সাধারণ গল্প দিয়ে শুরু হয় সিরিজটি। তবে টানটান উত্তেজনাপূর্ণ চিত্রনাট্য দর্শকদের আগ্রহ ধরে রাখে শেষ পর্যন্ত। কোনো পর্বে কোনো বাহুল্য নেই। প্রথম চার পর্বে দেখা যায় চারটি ভিন্ন গল্প; আর শেষ দুটি পর্বের গল্প একটি অন্যের সঙ্গে যুক্ত।
হিন্দি ভাষায় এ সিরিজ বানানো হয়েও গল্পে বাঙালি আবহ খুঁজে পাওয়া যায় চরিত্রগুলোর হঠাৎ করে বলা দু-একটা বাংলা সংলাপে। আর বাংলার লৌকিক গল্প তো তুলে ধরা হয়েছে পুরো একটা পর্বজুড়ে। এ ছাড়া গল্পের মাঝে কফি হাউস, হাওড়া ব্রিজ, ট্রাম লাইন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এসে বাঙালি শেখর হোম আমাদের আরেকটু আপন হয়ে উঠেছেন অজান্তেই।
কে কে মেননের অভিনয় দেখে মনে হয়েছে, চরিত্রটি তাঁর জন্যই বানানো। পাগলাটে, খেয়ালি, শান্ত আর কৌতুকের মিশ্রণে চরিত্রটি তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন সুন্দরভাবে। তাঁর হাঁটাচলা, কথা বলার ভঙ্গি, আচরণ এসব তিনি এসব তিনি এত সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, দর্শকের মনেই হয় না তিনি অভিনয় করছেন।
‘শেখর হোম’-এর কাহিনি যেভাবে এগিয়ে যায়, তাতে দর্শকদের বিরক্ত হওয়ার বিন্দুমাত্র অবকাশ থাকে না। কে কে মেননের অভিনয় দেখে মনে হয়েছে, চরিত্রটি তাঁর জন্যই বানানো। পাগলাটে, খেয়ালি, শান্ত আর কৌতুকের মিশ্রণে চরিত্রটি তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন সুন্দরভাবে। তাঁর হাঁটাচলা, কথা বলার ভঙ্গি, আচরণ এসব তিনি এসব তিনি এত সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, দর্শকের মনেই হয় না তিনি অভিনয় করছেন।
কে কে মেনন আর রণবীর শোরে জুটি মানিয়েছে খুব সুন্দরভাবে। খুনসুটি হোক কিংবা রহস্য সমাধান—তাঁদের রসায়ন মাতিয়ে রাখে দর্শককে।
রসিকা দুগ্গল ও কীর্তি কুলহারীর উপস্থিতি স্বল্প সময়ের জন্য হলেও তাঁদের দারুণ অভিনয়ের প্রশংসা করতেই হয়। রুদ্রনীল ঘোষ যদিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে ছিলেন, কিন্তু অন্যান্য চরিত্রের ভিড়ে তাঁকে ঠিক ফুটিয়ে তোলা হয়নি ঠিকঠাকভাবে।
সিরিজটির আবহসংগীত বেশ ভালো। কেবল যন্ত্রসংগীতকে যেভাবে খুন হওয়া এবং রহস্য উন্মোচনের একটা মাধ্যম হিসেবে দেখানো হয়েছে, তা প্রশংসনীয়।
তবে সিরিজের কিছু কিছু চরিত্র ভালোভাবে ফুটে ওঠার আগেই কাহিনি শেষ হয়ে গেছে। রহস্য সমাধান করার প্রক্রিয়াও কখনো দেখানো হয়েছে হালকা মেজাজে। প্রথম দিকে সাবলীল গতিতে গল্প এগিয়ে গেলেও শেষ দিকে মনে হচ্ছিল বেশ তাড়াহুড়া করা হয়েছে। চিত্রনাট্য, আবহসংগীত আর কলাকুশলীদের অভিনয়ে যদিও এগুলো চোখে পড়বে না খুব একটা। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরেকটু ভালো কাজ করাই যেত, যেহেতু সিরিজটি শার্লক হোমসের মতো বিখ্যাত চরিত্র থেকে অনুপ্রাণিত।
তবে গল্পের শেষে যে চমক অপেক্ষা করছিল, তা হার মানায় বাকি সবকিছুকে। শেষটা যেন বলে যায়, এ গল্প শেষ হয়েও শেষ হয়নি! শেষ দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও নতুন মৌসুমের।